চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: দুর্গাপূজার জন্য খাগড়াছড়িতে স্থগিতের কয়েক ঘণ্টা পর আবারও লাগাতার অবরোধের ডাক দিয়েছে ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উৎসবের কথা বিবেচনায় রেখে অবরোধ স্থগিতের ঘোষণা দিলেও আজ (রোববার, ২৮ সেপ্টেম্বর) আবারও খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি স্কুলছাত্রী ধর্ষণের প্রতিবাদে এবং ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ‘জুম্ম ছাত্র-জনতার’ ব্যানারে অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ডাক দিয়েছে তারা। এ অবস্থায় বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
আজ রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে অবরোধের সমর্থনে পিকেটিং হয়েছে বেশ কিছু দুর্গম উপজেলায়। খাগড়াছড়ি সদরসহ পুরো জেলার পরিস্থিতি এখনও থমথমে।
এর আগে শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর থেকে সদর উপজেলা পরিষদ এলাকা, মহাজন পাড়া, নারিকেল বাগান, চেঙ্গী স্কোয়ার ও শহীদ কাদের সড়কে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এ সময় স্বনির্ভর ও নারিকেল বাগান এলাকায় বেশ কয়েকটি দোকানে হামলার ঘটনা ঘটে।
পরিস্থিতি অবনতির পর খাগড়াছড়ি পৌরসভা, সদর উপজেলা ও গুইমারা উপজেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত তা বলবৎ আছে। ৭ প্লাটুন বিজিবির পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বিভিন্নস্থানে অতিরিক্ত পুলিশের পাশাপাশি এপিবিএন মোতায়েন রয়েছে।
যদিও গতকাল (শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর) রাত ১২টার দিকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উৎসবের কথা বিবেচনায় রেখে আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত অবরোধ স্থগিতের ঘোষণা দেয় পাহাড়ি সংগঠনগুলো। কিন্তু এর পরপরই পাহাড়িদের মাঝে অসন্তোষ তৈরি হয়, টানা কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানায় বিভিন্ন দল মত ও পাহাড়ি সংগঠনের নেতারা। এরই প্রেক্ষিতে রাত ৩টার দিকে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে আবারও লাগাতার কর্মসূচি ও অবরোধ ডাক দেন তারা।
জানা গেছে, গত ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় জেলা সদরের সিঙ্গিনালা এলাকায় অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন। এ ঘটনায় শয়ন শীল (১৯) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে জুম্ম ছাত্র-জনতার ব্যানারে শনিবার সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধের ডাক দেওয়া হয়। অবরোধ চলাকালে বিভিন্নস্থানে গাছের গুঁড়ি ফেলে ও টায়ারে আগুন দিয়ে সড়কে ব্যারিকেড সৃষ্টি করা হয়। আলুটিলায় একটি অ্যাম্বুলেন্স ও নারানখাইয়া এলাকায় একটি অটোরিকশা ভাঙচুর করা হয়।
এছাড়া সহিংসতায় অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত একজনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। রাতে বৌদ্ধবিহারে নাশকতার প্রস্তুতিকালে তিন পাহাড়ি যুবককে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ।
সহিংসতার কারণে সাজেক ভ্রমণে যাওয়া প্রায় দুই হাজার পর্যটক আটকা পড়েন। পরে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় তারা খাগড়াছড়ি হয়ে নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরে গেছেন।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেছেন, বর্তমানে সার্বিক পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে এবং সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান করা হলো।
জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার জানিয়েছেন, পরিস্থিতি উন্নত না হওয়া পর্যন্ত এই ১৪৪ ধারা বহাল থাকবে। আমরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি।
চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ