চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: চট্টগ্রামকে নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে অভিযোগ করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, নানা পরাশক্তি চট্টগ্রামের দিকে চোখ তুলে তাকাচ্ছে। আমরা হুঁশিয়ার করতে চাই, চট্টগ্রাম বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার অংশ। চট্টগ্রাম বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের ভিত্তি। যদি চট্টগ্রামের দিকে কেউ চোখ তুলে তাকায় সারা বাংলাদেশ একসাথে বিদ্রোহ ঘোষণা করবে। আমরা জাতীয় নিরাপত্তা আর সার্বভৌমত্বের জন্য চট্টগ্রামকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল মনে করি।’
আজ রোববার (২০ জুলাই) রাতে চট্টগ্রাম নগরীর বিপ্লব উদ্যানে এনসিপি চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে নিয়ে এনসিপি নেতা নাসীরুদ্দিন পাটোয়ারীর বক্তব্যের প্রতি সমর্থন জানিয়ে সমাবেশে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমাদের জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দিন পাটোয়ারী কক্সবাজারে সত্য উন্মোচন করেছেন। সেই সত্য উন্মোচন করার জন্য বিভিন্ন জায়গায় আমাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে। বাঁশখালীতে আমাদের সহযোদ্ধার মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের সময় আমরা বলেছিলাম- বাধা দিলে বাঁধবে লড়াই, এ লড়াইয়ে জিততে হবে। আজও বলতে চাই- বাধা দিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির তারুণ্যের শক্তি, চট্টগ্রামের শক্তিকে থামানো যাবে না।’
‘গণঅভ্যুত্থানের সময় এই চট্টগ্রাম ছিল ঢাকার পর আমাদের দ্বিতীয় দূর্গ। শহিদ ওয়াসিম-শান্ত-ফারুকের রক্তের বিনিময়ে এই চট্টগ্রাম ফ্যাসিস্টদের তাড়িয়েছে, নতুন করে কেউ ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠতে চাইলে তাদেরও চট্টগ্রাম প্রতিরোধ করবে।’
তিনি বলেন— ‘এই চট্টগ্রামকে আমরা এনসিপির পক্ষ থেকে নাগরিকের চট্টগ্রাম হিসেবে ঘোষণা করলাম। গুটিকয়েক পরিবারের হাতে চট্টগ্রামকে আমরা ছেড়ে দেব না। এখানে পাহাড়ি-বিহারি, হিন্দু-মুসলমান, সকল জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষা করতে হবে। সকল সম্প্রদায়ের মর্যাদা রক্ষা করতে হবে। চট্টগ্রামকে বহু ভাষা, বহু সংস্কৃতির নগর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
নাহিদ আরও বলেন, ‘চট্টগ্রাম যুগ যুগ ধরে ইতিহাসের পাতায় পাতায় বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করে আসছে। চট্টগ্রামের সিপাহী বিপ্লবের কথা আমরা জানি। সূর্যসেন আর প্রীতিলতার কথা জানি। ১৯৭১ সালে এই চট্টগ্রামের কালুরঘাট থেকেই মেজর জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। চট্টগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার দুয়ার, আমাদের সার্বভৌমত্বের দুয়ার। ইসলাম সাম্য আর মানবতার বার্তা নিয়ে এই চট্টগ্রাম দিয়ে নদীমাতৃক বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল। এজন্য চট্টগ্রামকে বলা হয় ইসলামের প্রবেশদ্বার, ইসলামের দরজা। চট্টগ্রাম বহু সংস্কৃতি আর বহু ভাষার নগরী। এই চট্টগ্রামে অনেক জাতি-গোষ্ঠী, বহু সম্প্রদায় যুগ যুগ ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে বসবাস করছে।’
‘জাতীয় নাগরিক পার্টি চট্টগ্রামের নাগরিক সমস্যার সমাধান করতে চায়। এই চট্টগ্রাম নগরী নানা লুটেরা, নানা মাফিয়ার কারণে বেহাল দশায় রয়েছে। এই চট্টগ্রাম নগরীকে নতুন করে গড়ে তুলতে হবে, নতুন করে সাজাতে হবে। নতুন বাংলাদেশে আমরা নতুন চট্টগ্রাম দেখতে চাই।’
বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা দেশ গড়ার জন্য পদযাত্রা শুরু করেছি। এমন বাংলাদেশ গড়তে চাই যেখানে বৈষম্য থাকবে না, চাঁদাবাজি থাকবে না, দুর্নীতি থাকবে না, স্বৈরতন্ত্র থাকবে না।’
এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ইমন সৈয়দ ও জোবায়রুল হাসান আরিফ, যুগ্ম সদস্য সচিব সাগুপ্তা বুশরা ও মীর আরশাদুল হক, যুগ্ম আহ্বায়ক হাসান আলী, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব নাহিদা সালমা নিভা এবং জাতীয় যুবশক্তির আহ্বায়ক তারেক আলী।
এ সময় এনসিপি নেতাদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন- নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী, সামান্তা শারমিন, ডা. তাসনীম জারা, তাসনুভা আলম।
এর আগে, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে নগরীর বহদ্দারহাট মোড়ে জমায়েতের পর পদযাত্রা নিয়ে ষোলশহর দুই নম্বর গেইটে বিপ্লব উদ্যানে যান এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা। ঢোলবাদ্যের তালে তালে মিছিল নিয়ে এগিয়ে যান নেতাকর্মীরা। হাজারো নেতাকর্মী এসময় ‘মুজিববাদ-মুর্দাবাদ, ইনকিলাব-জিন্দাবাদ, আমার সোনার বাংলায়-বৈষম্যের ঠাঁই নাই, কথায় কথায় বাংলা ছাড়-বাংলা কি তোর বাপদাদার’- এ ধরনের নানা স্লোগানে মুখর করে তোলেন পুরো এলাকা।
পদযাত্রা এগিয়ে যাবার সময় সড়কের দু’পাশে উৎসুক জনতার ভিড় দেখা গেছে। নাহিদ ইসলাম বারবার হাত নেড়ে জনতাকে শুভেচ্ছা জানান। এনসিপির পদযাত্রা ও সমাবেশকে ঘিরে পুরো এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে নগর পুলিশ। পুলিশের নিয়মিত সদস্য, গোয়েন্দা টিমসহ প্রস্তুত রাখা হয় ডগ স্কোয়াডও।
চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ