নিজস্ব প্রতিবেদক : নগরের পতেঙ্গা থেকে চার বছরের এক কন্যা শিশুকে অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবির অভিযোগে মো. সাখাওয়াত হোসেন (২৯) নামে এক ব্যক্তিকে পৃথক ধারায় দুবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। অর্থাৎ আদালত ৩০ বছর করে মোট ৬০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন।
একই রায়ে সাখাওয়াত হোসেনের স্ত্রী মোসাম্মৎ কমলা বেগমকে ১৪ বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া সাখাওয়াতের মা-ভাইসহ মোট ৩ আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (১৭ মার্চ) চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক ফেরদৌস আরা এ রায় দেন। রায়ে আদালত উভয় সাজা একসাথে কার্যকর হবে বলে উল্লেখ করেছেন। এসময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বেঞ্চ সহকারী কফিল উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দণ্ডিত মো. সাখাওয়াত হোসেন কুমিল্লা জেলার বরুড়া উপজেলার হরিপুর গ্রামের বজলুর রহমানের ছেলে। তিনি চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের একটি কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
খালাসপ্রাপ্তরা হলেন—দণ্ডপ্রাপ্ত মো. সাখাওয়াত হোসেনের মা আনোয়ারা বেগম, তার ভাই জাকির হোসেন এবং কুমিল্লা জেলার নাঙ্গলকোট থানার বিরলী গ্রামের মো. বশির আহম্মেদ।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, আসামি সাখাওয়াত হোসেন নগরের পতেঙ্গা থানার খেজুরতলা এলাকায় মো. সোহেলের ঘরে সাবলেট হিসেবে ভাড়া থাকতো। ঠিকমতো ভাড়া পরিশোধ করতে না পারায় সোহেল তাকে ঘর ছেড়ে দিতে বলে। ২০১৮ সালের ১৩ জুন সন্ধ্যায় সাখাওয়াত সোহেলের বাসায় গিয়ে চিপস কিনে দেওয়ার কথা বলে তার চার বছর বয়সী কন্যা সায়মা আক্তারকে নিয়ে যায়। এরপর মুঠোফোনে কল করে ১০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরদিন দুপুরে সোহেল বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলা দায়েরের পর পুলিশ শিশুকন্যা সায়মা আক্তারকে উদ্ধার করে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পতেঙ্গা থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মামুনুর রশিদ এ ঘটনায় ২০১৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। পরে ২০২০ সালের ২২ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হলে আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। মামলায় মোট পাঁচজন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট শফিউল মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, আসামি মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেনকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৭ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসাথে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন; ২০০০ এর ৮ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায় আরও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। উভয় সাজা একত্রে চলবে বলে আদালত জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, সাখাওয়াতের স্ত্রী মোসাম্মৎ কমলা বেগমকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর৭/৩০ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে ১৪ বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া দোষী সাব্যস্ত না হওয়ায় মোহাম্মদ বশির আহমেদ, আনোয়ারা বেগম, মো. জাকির হোসেনকে খালাস দেয়া হয়েছে। উপস্থিত আসামিদের সাজা পরোয়ানামূলে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/এসএ