৬ দিন ধরে মাংস বিক্রি বন্ধ রেখে কসাইদের প্রতিবাদ

রাঙামাটি প্রতিনিধিঃ প্রশাসন কর্তৃক দাম বেঁধে দেওয়ার প্রতিবাদে গত ৬দিন ধরে পর্যটন শহর রাঙামাটিতে গরুর মাংস বিক্রি বন্ধ রেখেছেন স্থানীয় মাংস বিক্রেতারা। একদিকে পর্যটন শহর সেইসাথে রমজান মাসে এরকম পরিস্থিতিতে চরম বিপাকে পড়েছে স্থানীয় হোটেল-রেস্তোরাসহ সংশ্লিষ্ট ভোক্তা জনসাধারণ।

শনিবার (১৬ মার্চ) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলা শহরের রেস্তোরাগুলোতে নেই কোনো ভিড়। জেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে কোথাও গরুর মাংস বিক্রি চোখে পড়েনি।

জানা যায়, চলমান পরিস্থিতিতে সারাদেশের ন্যায় পার্বত্য রাঙামাটি শহরেও ভোক্তাদের কল্যাণে জেলা প্রশাসন কর্তৃক গত ১১ই মার্চ থেকে প্রতি কেজি গরুর মাংস হাড়সহ ৭শ টাকা মূল্যে বিক্রির নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এই নির্দেশনার পর থেকেই মাংস বিক্রেতারা রাঙামাটি শহরের অন্তত ৬টি দোকানে মাংস বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে।

স্থানীয় মাংস বিক্রেতাদের থেকে জানা যায়, রাঙামাটিতে দেশীয় তথা পাহাড়ি গরুর মাংসের চাহিদা বেশি। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গরু সংগ্রহ করতে হয় কসাইদের। এতে করে স্থানীয় উপজাতীয়দের আঞ্চলিক দলগুলোকে প্রতিটি গরুতে এক হাজার টাকা করে দেওয়াসহ স্থানীয় বিভিন্ন মহলকে চাঁদা দিতে হয়। তার ওপর স্থানীয় মাইনী বাজারে গরু প্রতি হাসিল রাখা হয় ১৫শ টাকার উপরে। দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল থেকে শ্রমিকের মাধ্যমে গরু সংগ্রহ করে সেগুলোকে কাপ্তাই হ্রদ হয়ে বোটে করে রাঙামাটি শহরে নিয়ে আসতে সব মিলিয়ে প্রতিটি গরুর পেছনে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা খরচ হয়। এছাড়াও রাঙামাটিতে গবাধি পশুর পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক খাবারের প্রচন্ড অভাব থাকায় গরুগুলো মোটাতাজা তেমন একটা হয়না। তারপরও স্থানীয় গরু মালিকদের কাছ থেকে চড়া দামে গরুগুলো সংগ্রহ করতে হয় কসাইদের।

শহরের হোটেল-মোটেল জোন খ্যাত রিজার্ভ বাজারের মাংস বিক্রেতা হারুন সওদাগর চাটগাঁ নিউজকে জানান, বেশি দামে দেশীয় পাহাড়ি গরু সংগ্রহ করে রাঙামাটিতে এনে শ্রমিকদের বেতন ভাতা দিয়ে ৭শ টাকা কেজিতে গরুর মাংস বিক্রি করলে প্রতি গরুতে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা লস দিতে হয়। তিনি বলেন, রাঙামাটি জেলা প্রশাসন যদি রাঙামাটি থেকে গরু জেলার বাইরে যেতে না দেয়, তাহলে গরুর দাম কমে যাবে। এতে করে আমরাও কমদামে গরু সংগ্রহ করে ৭শ টাকা কেজি মূল্যে মাংস বিক্রি করতে পারবো।

তবলছড়ি বাজারের মাংস বিক্রেতা মো. জাহাঙ্গীর বলেন, রাঙামাটিতে স্থানীয় বড় কোনো খামারি নেই। আমরা পাহাড়িদের কাছ থেকে পাহাড়ি গরু সংগ্রহ করে বিক্রি করছি তাই আমাদের মাংসের মূল্য সর্বনিন্ম ৭৫০ টাকা না রাখলে আমাদের লস হচ্ছে। আমরা জেলা প্রশাসনের নির্দেশিত ৭শ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি করতে পারছিনা বলে আপাতত মাংস বিক্রি বন্ধ রেখেছি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাঙামাটি শহরে ৬টি স্থানে গরুর মাংস বিক্রি করা হয়। এতে করে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার ভোক্তা সাধারণ গরুর মাংসের ক্রেতা। রবিবার ছাড়া সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে গড়ে ১০ থেকে ১২টি গরু জবাই করে রাঙামাটি শহরে বিক্রি করা হয় বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

চাটগাঁ নিউজ/এসবিএন

Scroll to Top