নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রামে গত ৩ দিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। এতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে নগরবাসী জনদুর্ভোগ বেড়েছে। একই সঙ্গে দেখা দিয়েছে পাহাড় ধসের আশঙ্কা।
আজ মঙ্গলবার (২ জুলাই) সকাল থেকে বৃষ্টিতে ভোগান্তিতে পড়েন অফিসগামী যাত্রী ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। টানা বৃষ্টি হওয়ায় এখনো নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জমে রয়েছে পানি।
বৃষ্টির পানিতে নগরীর চকবাজার, বাকলিয়া, চান্দগাঁও কাপাসগোলা, হালিশহর সহ বেশকিছু নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। নগরীর অলিগলির রাস্তায় জমে রয়েছে পানি। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও কম। রাস্তায় গণপরিবহন চলাচল করলেও রিকশা-সিএনজি অটোরিকশায় বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে অফিসগামী যাত্রীদের। অনেকে আবার কাকভেজা হয়ে অফিসে পৌঁছান।
পতেঙ্গা আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস কর্মকর্তা মাহমুদুল আলম বলেন, গত ২৪ ঘন্টায় চট্টগ্রামে ৯৭ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। তবে ২ জুলাই সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৭ মিলিমিটার এবং দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত ১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এদিন চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৩০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। তবে বৃষ্টি ঝরলেও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে এবং আরও ৪ থেকে ৫ দিন এ ধরনের বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারেবলে জানায় আবহাওয়া অফিস।
এদিকে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে- টানা বৃষ্টির কারণে নগরীর কোথাও যানবাহনের সংখ্যা কম আবার কোথাও লেগেছে যানজট। নিচু এলাকার কোথাও কোথাও সৃষ্টি হয়েছে জলজটেরও। যদিও বৃষ্টি থামার পর জমে থাকা পানি সরে যাচ্ছে। তবে টানা বৃষ্টির সময় সিএনজিসহ গণপরিবহনের ঘাটতি এবং যানজটে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে কর্মজীবি মানুষদের। আর তাতেই বেশ বিড়ম্বনায় পড়েছেন নগরবাসী।
পাহাড় ধসের আশঙ্কা:
কয়েক দিনের টানা ভারি বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। সেই সঙ্গে তৈরি হয়েছে পাহাড় ধসের শঙ্কা। কিন্তু পাহাড়ের সতর্কতা কর্ণপাত করছেন না কেউই। এর আগে নগরে একটু বৃষ্টি হলেই পাহাড় থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যায় সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কর্মকর্তারা। কিন্তু চট্টগ্রামে টানা তিনদিনের বৃষ্টিতে জনমনে তৈরি হয়েছে পাহাড় ধসের শঙ্কা। এ অবস্থায় এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে আসেনি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীর কেউ। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নেওয়া হয়নি দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ।
আজ মঙ্গলবার (২ জুলাই) সকাল থেকে একটানা কয়েক ঘণ্টা বৃষ্টি হয়েছে। পাহাড় ধসের আশঙ্কায় নগরের ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলোয় মাইকিং করছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন। পাহাড়ে ঝুকিপূর্ণ বসবাসকারীদের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছেন তারা। কিন্তু গত তিন দিনে একজন লোকও আশ্রয়কেন্দ্রে যাননি। ফলে পাহাড়ধস হলে প্রাণহানির আশঙ্কা থেকেই যায়।
এছাড়া পাহাড়ের আশেপাশের স্কুল, কলেজ মসজিদ, মাদ্রাসাগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) তানভীর-আল-নাসিফ বলেন, ভারি বৃষ্টিতে পাহাড় ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ কারণে সকাল থেকে মাইকিং করে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাসকারীদের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।
পতেঙ্গা সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) জিমরান মোহাম্মদ সায়েক বলেন, বৃষ্টির শুরু থেকেই ধরে মাইকিং চলছে। আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসার জন্য আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা অনুরোধ করেছেন। কিন্তু তারা এখনো আসেনি। আমরা চেষ্টা করছি তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসার জন্য। না হয় আমাদের কঠোর হতে হবে।
চাটগাঁ নিউজ/এসআইএস/এসএ