২৪ আর্থিক কেলেঙ্কারিতে লোপাট ৯২ হাজার কোটি টাকা: সিপিডি

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : ২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বড় বড় অন্তত ২৪টি আর্থিক কেলেঙ্কারি ঘটেছে। এতে ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। এই অর্থ গত অর্থবছরের বাজেটের ১২ শতাংশ। অন্যদিকে, খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা।

সোমবার (১২ আগস্ট) রাজধানীর ধানমন্ডিতে সেন্টার ফল পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অফিসে ‘ব্যাংকিং খাতের সুশাসন ফিরিয়ে আনতে করণীয়’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন এসব তথ্য জানিয়েছেন। এ সময় সিপিডি’র সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান ও গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম উপস্থিত ছিলেন।

ব্যাংকিং খাতে এখনই ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ জানিয়ে তিনি বলেন, তাহলে অর্থনীতির বিরাট জায়গা আমরা উন্নত করতে পারব। ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা খর্ব করা, নিয়ম-নীতি না মেনে বেসরকারি ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া ও ব্যাংক খাতে অলিগার্ককে ব্যাংকিং খাতের মূল সমস্যা।

তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোতে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা রয়েছে। বোর্ডের সদস্য নির্বাচন করা, লোন স্যাংশন করার প্রক্রিয়া, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পরিপালনে দুর্বলতা রয়েছে। স্বাধীনতা খর্ব হতে হতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পুরোপুরি স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলেছ। এখানে প্রশাসনের দ্বৈততা রয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করা হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য, এর কোনো প্রয়োজন নেই। বেসরকারি ব্যাংকের লাইসেন্স প্রদানে কোনো বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়নি। এর মাধ্যমে স্বার্থান্বেষী শ্রেণি তৈরি করার জন্য ব্যাংক লাইসেন্স দেওয়া হয়। এসব ব্যাংকের কোনো সক্ষমতা নেই। সেগুলোকে আবার সরকারি অর্থে রিক্যাপিটালাইজেশন করা হয়। এতে সরকারি অর্থের অপচয় হয়।

সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক বলেন, ব্যক্তি খাতের ব্যাংকের মধ্যে তারা একটি অলিগার্ক তৈরি করে রেখেছে। তারা কয়েকজন মিলে ব্যাংক খাত নিয়ন্ত্রণ করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তারা নিয়ন্ত্রণ করছে, নীতিমালা তৈরি করছে। অনেক খেলাপি ঋণের মামলা জমে গেছে। ব্যাংক খাত দুর্বল হচ্ছে, কারণ ব্যাংকিং কোম্পানি অ্যাক্ট পরিবর্তন করা হয়। আইনের ফাঁক-ফোকরে অনেক ঋণ খেলাপি বের হয়ে যায়।

গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্তরা বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়া জন্য অনেক নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন, জানিয়ে ফাহমিদা খাতুন বলেন, এর ফলে একটি বিশেষ গোষ্ঠীর কাছে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দিতে হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রশাসনিক দায়িত্ব যারা পালন করেছেন অর্থাৎ গত ১৫ বছরে গভর্নর যারা ছিলেন, তারা যে সমস্ত নীতিমালা নিয়েছেন, ওইগুলো ব্যাংকিং নর্মসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তারা বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়া জন্য অনেক নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়েছে। যার ফলে বিশেষ গোষ্ঠীর কাছে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। এর প্রতিটি কেইস তদন্ত হওয়া উচিত। এর সঙ্গে যারা জড়িত ছিল, তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা প্রয়োজন।

খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলছে, জানিয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ২০০৯ সালে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকায়। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির বিষয়ে এখনও তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ করার জন্য সিআইডি ৭৯ বার সময় নিয়েছে। নতুন সময় ৪ সেপ্টেম্বর। ভবিষ্যতে দেখা যাবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ে আর্থিক বিভাগ বাতিলের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ে আর্থিক বিভাগ অর্থাৎ এফআইডি রয়েছে। যার ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক স্বাধীনভাবে তার কাজ করতে পারে না। এটা সৃষ্টি করার প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো ব্যাংকিং সেক্টরকে প্রভাবিত করা। আমরা মনে করি, অন্যায়ভাবে ঋণ কিংবা ভুল সিদ্ধান্ত যেগুলো নেওয়া হয়েছে, তার তদন্ত উচিত। আমাদের সুপারিশ, এফআইডি বন্ধ করে দেওয়া উচিত, এই বিভাগের কোনো প্রয়োজন নেই।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ছাত্রদের আন্দোলনে আমাদের নৈতিক সমর্থন ছিল। ছাত্রদের মুক্তির মিছিলে আমরা ছিলাম। যারা আত্মত্যাগ করেছেন, তাদের কাছে আমাদের এইগুলো কিছুই না।

তিনি বলেন, আর্থিক খাতে দুর্নীতির শ্বেতপত্র তৈরি করতে হবে। ব্যাংকিং খাতে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ব্যাংকিং খাতের চ্যালেঞ্জগুলো আর্থিক খাতেও প্রযোজ্য। বাংলাদেশের পুঁজিবাজার অসুস্থ, বিকলাঙ্গ। একইভাবে বীমা খাতও অগ্রহণযোগ্য অবস্থায় আছে। আর্থিক খাতে সুশাসনের জন্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানিকভিত্তিক খাতগুলো বন্ধ করতে হবে।

চাটগাঁ নিউজ/এআইকে

Scroll to Top