নিজস্ব প্রতিবেদক : একের পর এক অযাচিত ঘটানায় প্রায় হুমকির মুখে দেশের নারী ফুটবল। একদিকে কোচের হাতেই হেনস্তা জাতীয় দলের নারী খেলোয়াড়রা। অন্যদিকে নারী ফুটবল ম্যাচ বন্ধে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ও মুসল্লীদের হামলা। যা উদ্বেগ ও হতাশার জন্ম দিয়েছে নরী ফুটবলারদের মনে।
বাফুফে ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে চোখে কান্না ও বুক ভরা হতাশা নিয়ে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড়েরা বলেন, ‘ভেবে নিবো দেশের নারী ফুটবলে আমাদের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে!’ এ সময় তারা কোচের হাতে দীর্ঘদিনের মানসিক চাপ, হয়রানি ও হেনস্তার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘বাফুফে যদি কোচ বাটলারকে বহাল রাখে, তাহলে আমরা একযোগে অবসর নিতে বাধ্য হবো।’
এদিকে গণ-অবসরের হুমকিতে পরিস্থিতি সমাধানে সাত সদস্যের একটি বিশেষ কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। এই বিশেষ কমিটির চেয়ারম্যান করা হয় ইমরুল হাসানকে।
তবে কোচের বিরুদ্ধে খেলোয়াড়দের এই বিদ্রোহ নতুন কিছু নয়। গত বছর সাফ চ্যাম্পিয়নশিপেও একই অভিযোগ উঠেছিল কোচ বাটলারের বিরুদ্ধে।
এদিকে, জয়পুরহাট ও দিনাজপুর নারী ফুটবল ম্যাচ আয়োজনকে ঘিরে ঘটেছে হুমকি ও হামলার ঘটনা। গেল মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলার তিলকপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি ঘটে।
বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, তিলকপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বুধবার নারীদের একটি প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এটি বন্ধে মঙ্গলবার দুপুরের পরে আশপাশের মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের নিয়ে কিছু লোক ‘বিক্ষুব্ধ মুসল্লী’ পরিচয়ে খেলার মাঠে জড়ো হয়ে হামলা ও ভাঙচুর করে।
এছাড়াও দিনাজপুর জেলার হাকিমপুরে নারীদের ফুটবল আয়োজনকে কেন্দ্র করে একই কায়দায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। নারী ফুটবল ম্যাচ বন্ধে ‘তৌহিদী জনতা’র নামে করা হয় মাইকিংও। যা নারী খেলোয়াড় ও দেশের নারী ফুটবল অঙ্গনে তৈরি করেছে এক অস্থির পরিস্থিতি।
এদিকে, এই সকল অপ্রীতিকর ঘটনায় ফেসবুকসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে সমালোচনার ঝড়। অনলাইল সংবাদ মাধ্যম বিডি নিউজ-২৪ এর অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে নারী ফুটবলারদের সংবাদ সম্মেলনের ভিডিও পোস্টে পক্ষে-বিপক্ষে কমেন্ট করছেন নেটিজেনরা। তাদের মধ্যে মো. সরোায়ার হোসাইন নামে একজন কমেন্টে লিখেছেন, ‘মেয়েদের মতামতকে প্রায়োরিটি দিয়ে কোচকে বিদায় করা হোক। যেখানে এই কোচকে মেয়েরা চায় না তাকে রাখার দরকার নাই।’
তবে সব কমেন্ট যে খেলোয়াড়দের পক্ষে গেছে এমনটিও নয়। নারী খেলোয়াড়দের ভুল আখ্যা দিয়ে ফাহিম রহমান সাহস নামের একজন লিখেছেন, ‘শিক্ষার্থীদের অভিযোগ হেডমাস্টার পড়াশোনা এবং নিয়মনীতির ওপর ব্যাপক গুরুত্ব দিচ্ছে। তার ফল ও পেয়েছেন সবাই। পড়াশোনা খারাপ হবে বলে পড়াশোনার সময় টিকটক তো দূরের কথা মোবাইল ফোন ব্যাবহার নিষিদ্ধ করেছেন শিক্ষক। আর এই কারণে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে বলে শিক্ষার্থীরা বলছেন এবং দাবি তুলেছেন এই হেডস্যারের পদত্যাগ চাই।’
উদ্ভুদ এসব পরিস্থিতিতে প্রশ্ন ওঠেছে- বাংলাদেশের ফুটবলে পুরুষরা ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দি থাকলেও নারীদের জয়-জয়কার। তবুও নারী ফুটবল ঘিরে হচ্ছেটা কী? কেউ কি ষড়যন্ত্রের জাল ফেলেছেন?
চাটগাঁ নিউজ/সৈকত/এসএ