হাসপাতালে গৃহবধূর লাশ রেখে পলায়ন: স্বামীসহ ৩ জন ধরা

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূর লাশ মর্গে রেখে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় স্বামীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার রাতের দিকে চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

এর আগে সকালে নগরের পাঁচলাইশ থানায় বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন গৃহবধূর বড় ভাই শাহনেওয়াজ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাঁচলাইশ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন— নিহত শাহনাজের শাশুড়ি চেমন আরা রফিক (৬৪), শাহনাজের স্বামীর বড় বোন তাসলিমা আফরোজ (৪৪) ও তার স্বামী মো. লোকমান (৪২), শাহনাজের স্বামীর মেজো বোন খাদিজা আফরোজ (৩৭), স্বামীর সেজো বোন তাহমিনা আফরোজ (৩২) এবং স্বামীর ছোট বোন নাজিফা সালসাবেন (৩০)।

নিহত গৃহবধূর স্বামী মো. আল ফায়াদ চৌধুরীর (২৭) বাড়ি পটিয়া উপজেলার শান্তিরহাট এলাকায়। নগরের কসমোপলিটন আবাসিক এলাকার ৫ নম্বর সড়কে কাইয়ুম রেসিডেন্সের চতুর্থ তলায় তারা থাকেন।

নিহত গৃহবধূর বড় ভাই শাহনেওয়াজ এজাহারে উল্লেখ করেন, ২০২৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর তার বোনের সঙ্গে আল ফায়াদ চৌধুরীর পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। এরপর থেকেই বিভিন্ন সময় তার স্বামী যৌতুক দাবি করতেন। ভুক্তভোগী শাহনাজ ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা থাকায় অনাগত সন্তান ও নিজ ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তিনি সব নির্যাতন সহ্য করে সংসার করছিলেন। ধীরে ধীরে তার ওপর নির্যাতনের চাপ আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয়। গত ১৬ অক্টোবর রাত দেড়টার দিকে শাহনাজের শাশুড়ি ফোন করে বাদীর স্ত্রীকে জানান, তার বোন অজ্ঞান হয়ে পড়েছে। বাদীর বিষয়টি জানতে পেরে ঢাকা থেকে বিবাদীদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কেউ রিসিভ করেননি।

বাদী তার স্ত্রীর মাধ্যমে জানতে পারেন তার বোনকে চট্টগ্রামের বেসরকারি ন্যাশনাল হসপিটালে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই হাসপাতালে তাকে ভর্তি না করায় পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক বাদীর বোনকে মৃত ঘোষণা করেন এবং মৃত্যুর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন ‘লিগ্যাচার মার্ক অ্যারাউন্ড নেক’। এরপর তার বোনের মরদেহ সেখানে ফেলে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান বিবাদীরা। বাদীর ধারণা বিবাদীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং প্ররোচনার কারণে তার বোন সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

জানতে চাইলে মামলার বাদী শাহনেওয়াজ বলেন, বিয়ের পর থেকে ফ্রিজ, টিভি, আসবাবপত্রসহ নানা কিছু যৌতুক হিসেবে দিয়েছি। কিন্তু আমরা যেটাই দিই না কেন, তাদের তা পছন্দ হয় না। এগুলো নিয়ে সবসময় আমার বোনকে খোঁটা দেওয়া হতো। বিভিন্নরকম মানসিক নির্যাতন করা হতো। পান থেকে চুন খসলেই তার গায়ে হাত তুলতো। ঘরের ছোটখাটো কাজেও ভুল ধরে অত্যাচার করতো। আমার বোনের সঙ্গে ওইদিন রাত ১টা পর্যন্ত আমি নিজেই কথা বলেছি। এর আগে তার স্বামী আমাকে কল দিয়ে বিচার দিয়েছে। আমি বোনের সঙ্গে কথা বলার পর দেড়টার দিকে তার শাশুড়ি আমার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে জানিয়েছেন, সে অজ্ঞান হয়ে গেছে। এটা নিশ্চিত হত্যা!

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পাঁচলাইশ জোনের সহকারী কমিশনার মো. আরিফ হোসেন বলেন, মেয়েটা ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। তাকে তার স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজন নানাভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতো বলে শুনেছি। যার দরুণ সে আত্মহত্যা করে থাকতে পারে। মূলত আত্মহত্যা প্ররোচনার অভিযোগেই মামলাটি করেছেন তার ভাই। আমরা ইতোমধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছি। তদন্ত চলমান রয়েছে।

চাটগাঁ নিউজ/এসএ

Scroll to Top