নিজস্ব প্রতিবেদক : সেন্টমার্টিন রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ বা স্পিটবোট চলাচল শুরু হয়নি। যাত্রীবাহী ট্রলার, সার্ভিস বোট চলাচল করলেও ভ্রমণ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমতি লাগছে। বাসিন্দা কিংবা পর্যটক সেন্টমার্টিন যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রদর্শন করতে হচ্ছে জাতীয় পরিচয়পত্র। আবার সরকার নভেম্বর মাসে সেন্টমার্টিন ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা শিথিলের কথা বললেও বাস্তবের সাথে তার কোন মিল নেই। বিধিনিষেধে আটকে যাওয়া সেন্টমার্টিনের পর্যটন খাত নিয়ে বাসিন্দা, পর্যটকদের মাঝে ক্ষোভ দানা বাঁধছে। দিন যতই যাচ্ছে সেন্টমার্টিনে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়ে শুরু হয়েছে পক্ষে-বিপক্ষে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
একপক্ষের অভিযোগ, সরকার শুধু টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চলাচল নিষিদ্ধ করেছে। অন্য রুটে জাহাজ চলাচল করা সত্ত্বেও আয়োজকরা ভিন্ন উদ্দেশ্যে সেন্টমার্টিনের স্থানীয় বাসিন্দার পরিচয়ে ভাড়া করা লোক জড়ো করে এসব কর্মসূচি পালন করছে।
আবার আয়োজক পক্ষের অভিযোগ, সেন্টমার্টিনের পর্যটন ব্যবসা ও স্থানীয়দের রুটিরুজি ধ্বংস করার পরিকল্পনায় সরকার রুট বন্ধ, পরিবেশ রক্ষার নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে মৎস্যজীবী ও পর্যটন ব্যবসা নির্ভর সেন্টমার্টিনবাসীদের জন্য অন্ধকার ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে।
এমন অবস্থায় সেন্টমার্টিন ভ্রমণে সরকারি বিধিনিষেধ প্রত্যাহার ও রাত্রিযাপনে অনুমতির দাবি নিয়ে সর্বশেষ ১৯ নভেম্বর মঙ্গলবার কক্সবাজার কলাতলী ডলফিন মোড়ে মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমারে চলমান সংঘর্ষের জেরে চলতি বছর ৭ ফেব্রুয়ারি তারিখে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি ঘোষণা দেয়া হয়। ঘোষণা অনুযায়ী গত ১০ ফেব্রুয়ারি শনিবার থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে বিকল্প রুট হিসেবে কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন ও চট্টগ্রাম-সেন্টমার্টিন নৌরুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল অব্যাহত রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা বাতিল ও রাত্রিযাপনের অনুুমতির দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচি চলছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে সেন্টমার্টিন ভ্রমণে বাধা নেই। কিন্তু বাস্তবের সাথে এর কোন মিল নেই। প্রকৃতপক্ষে সেন্টমার্টিনে বেড়াতে যাওয়া যাচ্ছে না। স্থানীয় বাসিন্দাদেরকেও জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে নিজ এলাকায় প্রবেশ করতে হচ্ছে। নভেম্বর মাসে পর্যটকরা যেতে পারবেন তবে থাকতে পারবেন না এমন ঘোষণা থাকলেও দ্বীপ ভ্রমণের সব ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে। এমনকি দ্বীপবাসীদের আত্মীয় স্বজনরাও সেন্টমার্টিনে বেড়াতে যেতে পারছেন না।
কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর ওনার্স এসোসিয়েশন (টুয়াক) সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, কক্সবাজার থেকে দিনে সেন্টমার্টিন গিয়ে দিনে ফেরা সম্ভব নয়। আবার পরিবেশ অধিদপ্তর শর্ত দিয়েছে সেন্টমার্টিনে রাত্রিযাপন করা যাবে না। মৌসুম বাদ দিয়ে সারাবছর উন্নত নৌপরিবহনের ব্যবস্থা করে পর্যটক চলাচলের ব্যবস্থা করা হলে ভাল হয়। বছর ব্যাপী সার্ভিস থাকলে পর্যটকদের চাপও কম থাকবে। আমরাও পরিবেশ রক্ষার পক্ষে। পরিবেশ ঠিক রেখে পর্যটনকে বাঁচিয়ে রাখা হোক।
জানা যায়, গত বছর ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘাতের কারণে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুট বন্ধ হবার পর ইনানী নৌ-জেটি ব্যবহার করে সেন্টমার্টিনে পর্যটক পরিবহন শুরু হয়। কিন্তু কিছুদিন আগে ঘুর্ণিঝড় ‘দানা’র তান্ডবে ইনানী জেটিটিও ভেঙে গেছে। ফলে ইনানী-সেন্টমার্টিন রুটেও জাহাজ চলাচলের সুযোগ আপাতত বন্ধ। জেটিটি সংস্কারের কাজ চলছে। আগামী ২২ নভেম্বরের মধ্যে জেটি ঘাট সংস্কার সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। ইনানী জেটিঘাট দিয়ে সেন্টমার্টিন যেতে চার ঘন্টা সময় লাগে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজারের সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ বলেন, কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ভাড়াটে লোক এনে সেন্টমার্টিনের বাসিন্দা পরিচয় দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। মূলত কিছু হোটেল মালিক এ আন্দোলনের উসকানি দিচ্ছেন। সরকারের বিরুদ্ধে তাদের উসকানিমূলক পরিকল্পিত আন্দোলন কক্সবাজারের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
সেন্টমার্টিন সম্পর্কে তথ্য
সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। কক্সবাজার জেলা শহর থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে সাগর বক্ষের একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ সেন্টমার্টিন। এ দ্বীপ ৭.৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং আয়তন প্রায় ৮ বর্গ কিলোমিটার। এ দ্বীপকে ‘নারিকেল জিঞ্জিরা’ও বলা হয়। মূল দ্বীপ ছাড়াও আরও একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ রয়েছে যা ‘ছেড়াদ্বীপ’ নামে পরিচিত। সেন্টমার্টিনে আকাশ আর সমুদ্র মিলেমিশে একাকার। এখানে অগভীর দীর্ঘ সমুদ্রতট, সামুদ্রিক প্রবাল, সাগরের ঢেউয়ের ছন্দ সবাইকে মুগ্ধ করে। দ্বীপের বুক জুড়ে রয়েছে নারিকেল গাছের সারি। সাগরতীরে বাঁধা মাছ ধরার নৌকা-ট্রলার, সৈকত জুড়ে কাঁকড়ার ছুটোছুটি, ঝিনুকের শম্বুক আঁকিবুকি আর গাঙচিলের উড়ে চলা মনকে কোন এক অজানায় নিয়ে যায়। স্বচ্ছ লোনা পানিতে জেলি ফিশ, সামুদ্রিক মাছ, কচ্ছপ এবং প্রবাল এ দ্বীপের অন্যতম আকর্ষণ।
চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/এসএ