সিপ্লাস ডেস্ক: চাঁদে অভিযানের পর এবার সূর্যের দিকে যাত্রা শুরু ভারতীয় মহাকাশযানের। স্থানীয় সময় শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে আরও একটি ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হলো ভারত। এদিন সূর্যের দিকে পাড়ি দিয়েছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর মহাকাশযান আদিত্য-এল১।
ভারতীয় রকেট ‘পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল’ (পিএসএলভি)-এর কাঁধে ভর করে ১১টা ৫০ মিনিটে অন্ধ্রপ্রদেশের আদিত্য-এল১-এর উৎক্ষেপণ নিয়ে সারাদেশে খুশির আবহাওয়া বিরাজ করছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে লাইভ স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে আদিত্য-এল১-এর উৎক্ষেপণের মুহূর্ত দেখতে পাওয়া গেছে। গত ২৩ আগস্ট চাঁদের বুকে পা রাছে ইসরোর তৃতীয় চন্দ্রযান। রোভার প্রজ্ঞানকে নিয়ে সন্ধ্যা ৬টা ৪ মিনিটে চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করে তৃতীয় চন্দ্রযানের ল্যান্ডার বিক্রম। আর তার ১০ দিনের মধ্যেই এবার সূর্যের দিকে সফল ভাবে উড়ে গেল ইসরোর সৌরযান আদিত্য-এল১।
আদিত্য-এল১ ভারত থেকে সূর্যের দিকে পাঠানো প্রথম মহাকাশযান। সূর্যের অপর নাম আদিত্য। এর সঙ্গে মিল রেখেই নামকরণ করা হয়েছে মহাকাশযানের। ইসরো জানিয়েছে, এই মহাকাশযানটি সূর্য-পৃথিবীর মধ্যে একটি ‘হ্যালো’ কক্ষপথের ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্ট বা এল১ পয়েন্টে স্থাপন করা হবে। প্রায় ১৫ লাখ কিলোমিটার ভ্রমণ করে গন্তব্যে পৌঁছবে মহাকাশযানটি। সময় লাগবে প্রায় ১২০ দিন। সূর্যের বায়ুমণ্ডল সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করতে আদিত্য-এল১-কে মহাকাশে পাঠানো হয়েছে।
ইসরো জানিয়েছে, উৎক্ষেপণের পর প্রায় ১৬ দিন পৃথিবীর চারিদিকে পাক খাবে আদিত্য-এল১। এই ১৬ দিনে সূর্যের দিকে পাড়ি দেওয়ার জন্য পাঁচটি ধাপে গতিবেগ বাড়াবে আদিত্য। এরপর ১১০ দিন সূর্যের অভিমুখে যাত্রা করে একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়িয়ে সূর্যকে পর্যবেক্ষণ করবে সেটি। এই ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্টে সূর্য এবং পৃথিবীর আকর্ষণ এবং বিকর্ষণ বল একসঙ্গে ক্রিয়াশীল। ফলে এই অঞ্চলে পৌঁছে কৃত্রিম উপগ্রহ স্থির থাকতে পারে। মহাকাশের পরিবেশ, আবহাওয়া, তার ওপর সূর্যের কী প্রভাব পড়ে, সেসব জানার চেষ্টা করবে আদিত্য-এল১।
এই মহাকাশযানে মোট সাতটি পেলোড রয়েছে। এগুলো সূর্যের বিভিন্ন স্তর খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণের জন্য তৈরি করা হয়েছে। ফোটোস্ফিয়ার থেকে ক্রোমোস্ফিয়ার কিংবা সূর্যের একেবারে বাইরের দিকের স্তর কোরোনা, পর্যবেক্ষণ করবে এই পেলোডগুলো।
এছাড়া সূর্যের উত্তাপ, সৌরপদার্থের নিঃসরণ, সৌরঝড়ের মতো সূর্যকেন্দ্রিক বিষয়গুলো বুঝতেও বিজ্ঞানীদের সাহায্য করবে। ভিসিবল এমিশন লাইন করোনাগ্রাফি (ভিইএলসি) এবং সোলার আল্ট্রাভায়োলেট ইমেজিং টেলিস্কোপ (এসএউআইটি) নামে দু’টি মূল পেলোড রয়েছে। ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্ট পৌঁছানোর পর এই ভিইএলসি পেলোড প্রতিদিন ১ হাজার ৪৪০টি ছবি তুলে পাঠাবে। তাই এই পেলোডটিকেই আদিত্য-এল১-এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পেলোড বলে মনে করা হচ্ছে।
অন্য পেলোডগুলি হলো- সোলার লো এনার্জি এক্স-রে স্পেক্ট্রোমিটার (এসওএলইএক্সএস), হাই এনার্জি এল১ অরবিটিং এক্স-রে স্পেক্ট্রোমিটার (এইচইএল১ওএস), আদিত্য সোলার উইন্ড পার্টিকল এক্সপেরিমেন্ট (এসপিইএক্স) এবং প্লাজমা অ্যানালাইজার প্যাকেজ ফর আদিত্য (পিএপিএ)।
পরীক্ষানিরীক্ষার স্তরে এই পরিকল্পনার রূপায়ণে ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। যদিও সে সময় থেকে আজ পর্যন্ত সেই পরিকল্পনা অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। আদিত্য থেকে মহাকাশযানের নামকরণ হয় আদিত্য-এল১। ২০১৯ সালের জুলাইয়ে শুধুমাত্র এর উৎক্ষেপণের ব্যয়ভার দাঁড়ায় ৩৭৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।
এই অভিযান সফল হলে সৌরঝড়ের পূর্বাভাস দিতে সক্ষম হবে ইসরো। পাশাপাশি সূর্যের আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাবও বুঝতে সাহায্য করবে এই মহাকাশযান। এই অভিযানের মাধ্যমে সূর্য সম্পর্কে অজানা অনেক তথ্য ভারতের হাতে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।