নিজস্ব প্রতিবেদক : আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার (সিজেকেএস) সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। নানা মহলে সমালোচনা ছিল তিনি দায়িত্বে থাকাকালীন এই সংস্থাটির কার্যালয়কে ব্যক্তিগত এবং রাজনৈতিক কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। সবসময় তার অনুসারী নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখর ছিল এই এলাকাটি।
স্টেডিয়ামের দক্ষিণ কোণায় ছিল চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলা পরিচালনা পরিষদের অফিস। সেখানেও আওয়ামী লীগ ঘরোনার লোকজনের পথচারণায় মুখর ছিল। তবে সরকারের পট পরিবর্তনের সাথে সাথে পাল্টে গেছে সিজেকেএস কার্যালয় ও এমএ আজিজ স্টেডিয়াম এলাকার পরিবেশ। সেখানে এখন আর আওয়ামী লীগ, আ জ ম নাছির কিংবা মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলা পরিষদ কেন্দ্রিক নেতাকর্মীদের দেখা মিলছে না।
তবে আওয়ামী লীগ এবং আ জ ম নাছিরের অনুপস্থিতিতে সিজেকেএস বা স্টেডিয়াম পাড়া কী আবার বিএনপি নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখর হবে? নাকি ক্রীড়া সংশ্লিষ্টদের পদচারণায় প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠবে- এমন আলোচনা মানুষের মুখে মুখে।
জানা যায়, সরকারের পট পরিবর্তনের সাথে সাথে সিজেকেএসের কার্য নির্বাহি কমিটি বিলুপ্তির কারণে সেখানে একটি এডহক কমিটি গঠনের ঘোষণা আসে। এই কমিটি নিয়ে পরিচিতি সভা ও মতবিনিময়ের জন্য চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা পরিদর্শনে আসেন নতুন জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। চট্টগ্রামে যোগদানের মাত্র ৬ দিনের মাথায় তিনি সিজেকেএস কার্যালয়ে আসেন।
তার আগমনে সিজেকেএসের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত হন নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক ফিজিও ডক্টর ক্লাব ও এলিট ক্লাবের সংগঠক ডা. শাহাদাত হোসেনও। তার উপস্থিতিতে সেদিন সিজেকেএস কার্যালয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদেরও সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
তবে সিজেকেএস স্টেডিয়াম পাড়ায় ডা. শাহাদাত হোসেনের ফিরে আসা নিয়ে ও নেতাকর্মীদের বিচরণে সাধারণ ক্রীড়ামোদীদের মধ্যে গুঞ্জন উঠেছে। ক্ষমতার পালে হাওয়া বদলের পর এবার কী তবে বিএনপির রাজনৈতিক আড্ডাস্থলে রূপ নিতে যাচ্ছে এই কার্যালয়টি?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ক্রীড়া সংগঠকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিগত সরকারের আমলে সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই সিজেকেএস কার্যালয় ও স্টেডিয়াম পাড়ায় ভিড় জমাতেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে আ জ ম নাছির উদ্দীন, মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী কিংবা ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী ও নগর যুবলীগের সাবেক সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চুর অনুসারীরা দলবেঁধে এই এলাকায় আড্ডা জমাতেন।
তারা জানান, সিজেকেএস কার্যালয়ের আ জ ম নাছির উদ্দীন তাঁর সাধারণ সম্পাদকের অফিসটিতে সংগঠনের কার্যক্রম যতটুকু না চালাতেন তার চেয়ে বেশি চালাতেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নানা তদবির, সৌজন্য সাক্ষাত, মতবিনিময়সহ ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ড। এই নিয়ে সাধারণ ক্রীড়া সংশ্লিষ্টদের মাঝে নানা ক্ষোভ সৃষ্টি হলেও আ জ ম নাছির উদ্দীনের প্রভাব বা ভয়ে কিছু বলতে সাহস করতেন না কেউ।
তবে এবার পট পরিবর্তনের পর ক্রীড়ামোদী জনসাধারণ ও ক্রীড়া সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন স্টেডিয়াম পাড়ায় যেন আর রাজনৈতিক আড্ডা বা ব্যক্তিগত কার্যক্রমের জায়গা না হয়। সেখানে যেন ক্রীড়া চর্চাই চলে।
এ ব্যাপারে নবনিযুক্ত জেলা প্রশাসক পদাধিকার বলে সিজেকেএস’র সভাপতি ফরিদা আকতার বলেন, আগে এই ক্রীড়া সংস্থা রাজনীতিকরণ হয়েছে। সামনে সেটা হতে দেওয়া যাবে না। ক্রীড়া সংশ্লিষ্টরাই এই ক্রীড়াঙ্গন পরিচালনা করবে। যাতে চট্টগ্রামের সুনাম অব্যাহত থাকে। চট্টগ্রাম সবসময় খেলাধুলায় নেতৃত্ব দিয়েছে। কাজেই চট্টগ্রামকে সে নেতৃত্বের আসনেই রাখতে হবে। আর এ জন্য সুষ্ঠু এবং সুন্দরভাবে খেলাধুলার আয়োজন করতে হবে।
বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনে আমি দীর্ঘদিন যুক্ত ছিলাম। তখন রাজনীতি ছিলনা। যখন রাজনীতি ঢুকে গেল তখন আমাদের বেরিয়ে যেতে হলো। জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ক্রিকেটারদের থেরাপি সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি আমারই কেনা। কিন্তু গত ১৫ বছরে এখানে রাজনীতি হয়েছে। আমরা খেলার সাথে রাজনীতিকে মিশাতে চাই না। আমরা চাই খেলাধুলা নিজের মত করে চলুক। আমি রাজনীতি করলেও অনেক আগে থেকেই খেলাধুলার সাথে যুক্ত ছিলাম। তাই আমরা আবারও সুন্দর একটি ক্রীড়াঙ্গনের প্রত্যাশা করছি।
চাটগাঁ নিউজ/ উজ্জ্বল/এসএ