হাটহাজারী প্রতিনিধি: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম ৫ (হাটহাজারী-বায়েজিদ আংশিক) আসনের আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এম এ সালামের উত্তর হাটহাজারীর ফরহাদাবাদ, ধলই, মির্জাপুর, গুমানমর্দ্দন, নাঙ্গলমোড়া এই ৫টি ইউনিয়ন একাদশ জাতীয় সংসদের আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়া ইউনুস গণি গ্রুপের দখলে থাকায় ভয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম ৫ (হাটহাজারী-বায়েজিদ আংশিক) আসনের উত্তর হাটহাজারীর ফরহাদাবাদ, ধলই, মির্জাপুর, গুমানমর্দ্দন, নাঙ্গলমোড়া এই ৫টি ইউনিয়ন একাদশ জাতীয় সংসদের আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়া ইউনুস গণি গ্রুপের দখলে থাকায় ভয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এম এ সালাম।
কেননা দলীয় কোন্দলের কারণে সালাম-ইউনুস গণি-মঞ্জু গ্রুপের অভিযোগের পাল্টা অভিযোগ জেলা গড়িয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যন্ত গড়িয়েছে তা স্পষ্ট প্রতীয়মান। দলীয় কোন্দলের কারণে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফটিকছড়ির নুরুল আলমের ইন্তেকালের পরে গত ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারী ওবায়দুল কাদের জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে এম এ সালামকে সভাপতি এবং শেখ আতাউর রহমান কে সাধারণ সম্পাদক করে ৭৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করেন।
এই কমিটিতে বিগত কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ইউনুস গণি চৌধুরী, সদস্য মঞ্জুল আলম চৌধুরীসহ অনেক নেতাকর্মীর নাম বাদ দেওয়া হয়। এতে আরও প্রকট আকার ধারণ করে দলীয় কোন্দল। এরপরও এম এ সালাম সভাপতি হয়ে আবারও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং জেলা পরিষদের প্রশাসক পর্যন্ত দায়িত্ব নেন। এখন জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি মনোনয়ন পেয়েছেন এবং সবই তিনি একা পায় কেন এমন ক্ষোভ বিরাজমান দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে।
তাই এ উপজেলায় ক্ষমতাসিন আওয়ামী লীগের ৬টি গ্রুপে বিভক্ত হলেও প্রকাশ্যে সালাম, ইউনুস গণি ও মঞ্জুরুল আলম এই ৩ গ্রুপ। তবে প্রকাশ্য না হলেও জসিম উদ্দিন শাহ, রাশেদুল ইসলাম রাসেল এবং রাশেদুল আলমও গ্রুপে বিভক্ত বলে দলীয় গোপন সূত্রে জানা যায়।
এজন্যই উত্তর হাটহাজারীর ফরহাদাবাদ, ধলই, মির্জাপুর, গুমানমদ্দন, নাঙ্গলমোরা এই ৫ ইউনিয়নের মধ্যে আওয়ামী লীগের দূর্গ খ্যাত ফরহাদাবাদ ও ধলই ইউনিয়ন হলো চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ইউনুস গণি চৌধুরীর ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।
অপর দিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য মঞ্জুরুল আলম চৌধুরীর ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত পৌরসদর, ফতেহপুর ও চিকনদন্ডী ইউনিয়ন এলাকা। যা এম এ সালাম বিরোধী হিসেবে সমধিক পরিচিত। তার জন্য এম এ সালামের একদিকে দলীয় গ্রুপিং, অন্য দিকে মহাজোটের কারণে ছাড়তে হবে এই আসন এমন ভয় কাজ করছে।
অন্য দিকে ১৯৯৬ সাল থেকে হাটহাজারীর জনপদে চষে বেড়ানো এম এ সালামকে ভয় পাচ্ছেন মহাজোটের নৌকায় চড়ে টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি। এদিকে এই আসনটি নিয়ে আওয়ামী লীগের নজর থাকলেও বরাবরই আওয়ামী লীগ তাদের (জোট) শরীক দল জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিয়ে আসছে। কিন্তু এবার ছাড় দিতে নারাজ আওয়ামী লীগ।
অন্যদিকে জাতীয় পার্টির বর্তমান সাংসদ ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপিও এবারো ধরে রাখতে চায় আসনটি। তাই তিনি তাকিয়ে আছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এম এ সালামের দিকে।
কখন জোটগত কারণে কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত আসে সেদিকে।
চট্টগ্রাম ৫ সংসদীয় (২৮২) আসনটি বরাবরের মত গুরুত্ববহন করে। ১টি পৌরসভা, ৯টি ইউনিয়ন ও ২টি সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত হয়। এতে রয়েছে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ ভোটার ।
এদিকে দেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৭৩ সালের ৭ই মার্চ অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের হারিয়ে বিজয়ী হন চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সহ-সভাপতি মরহুম এম আবদুল ওয়াহাব। পরবর্তী ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে বিজয়ী হন ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। এরপর তিনি একটানা ১৯৮৬ সালের ৭ই মে অনুষ্ঠিত তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ১৯৮৮ সালের ৩রা মার্চ অনুষ্ঠিত চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন।তারপর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের হারিয়ে বিজয়ী হন বিএনপির চেয়ারপার্সনের তৎকালীন উপদেষ্টা মরহুম সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম।
তিনি এরপর ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালের অনুষ্ঠিত সপ্তম ও অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে দুইবার বিজয়ী হন।তারপর ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন মহাজোট প্রার্থী জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ১ লাখ ৩২ হাজার ১৬৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম ১ লাখ ৬ হাজার ৯৭৫ ভোট পেয়ে পরাজিত হন।
এরপর ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বর্তমান কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব:) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিমকে হারিয়ে বিজয়ী হন।