সাবেক শিল্পমন্ত্রী দীলিপ বড়ুয়ার বিরুদ্ধে সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক : নিঃসন্তান এক দম্পত্তির ওয়াকফ করা সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে পতিত সরকারের সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও সাম্যবাদি দলের সভাপতি দীলিপ বড়ুয়ার বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে ফৌজদারি আদালতে আজ বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী মাহবুব আলম নামের এক ব্যক্তি। যেখানে দিলীপ বড়ুয়া ছাড়াও ৫৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১২০ জনকে (ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিকলীগ) আসামি করা হয়েছে।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়— নগরীর হালিশহর  এলাকার আগ্রাবাদ মৌজায় অবস্থিত ‘ইউনুচ মিয়া-আবেদা খাতুন ওয়াকফ এস্টেট’ নামের একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান (মধ্যম রামপুর নূরানী জামে মসজিদ) প্রতিষ্ঠাপূর্বক তা ওয়াকফ অধিদপ্তরের ১২৪৮৮ নং ইসি মূলে ওয়াকফ সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে উক্ত নিঃসন্তান ইউনুচ মিয়া ও আবেদা খাতুন মৃত্যুবরণ করায় উক্ত সম্পত্তিগুলো শাসন, সংরক্ষণের অভাবে ডোবা, জলাশয়, পরিত্যক্ত ভূমিতে পরিণত হয়। উপরোক্ত ওয়াকফ ইউনুচ মিয়া ও তৎ স্ত্রী আবেদা খাতুনের মৃত্যুর পর তাহার দুঃসম্পর্কীয় কতিপয় কিছু আত্মীয়স্বজন বিশেষ করে এলাকায় চিহ্নিত ভূমিদস্যু হিসেবে পরিচিত জাল জালিয়াতকারী খ্যাত ১৩ নং আসামি মোহাম্মদ শফীর কু-পরামর্শে  ১৮ নং আসামি মোহাম্মদ ইউসুফ, ১৯ নং আসামি মোহাম্মদ রেজাউল করিম ও ২০ নং আসামি নেছার আহম্মদ মসজিদের দানকৃত সম্পত্তি গ্রাস ও আত্মসাৎ করার কু-মানসে প্রথম ঘটনার তারিখে অর্থাৎ ২০০৬ সালের ২৩ আগস্ট  তারিখে ও সময়ে ২০ নং আসামীকে গ্রহীতা ও ১৯ নং আসামী মোহাম্মদ রেজাউল করিমকে ওয়াকফ ইউনুচ মিয়ার এক ভ্রাতুষ্পুত্র  আবুল কাশেম (দাতা) সাজিয়ে ১৩, ১৮ নং আসামীসহ কয়েকজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে সাক্ষী ও দলিলের সনাক্তকারী বানিয়ে ১৩, ১৮, ১৯ নং আসামীগণ একে অপরের যোগসূত্রে চট্টগ্রাম সদর সাব রেজিস্ট্রী অফিসে রেজিস্ট্রীকৃত ৯১৩৮ নং একখানা জাল আমমোক্তার দলিল সৃজন করেন।

আসামিগণ পারস্পরিক যোগসাজসে ইউনুচ মিয়া ও আবেদা খাতুনের ভুয়া ওয়ারিশ সনদ ব্যবহার করে মসজিদের সম্পত্তিকে ব্যক্তি মালিকানা ওয়ারিশী সম্পত্তি বলে প্রচার প্রচারণা করে ১৩নং আসামির মাধ্যমে ও সাক্ষাতে তা অন্যত্র বেচা বিক্রির নামে হরিলুট করার কু-মানসে  আসামীগণ দীর্ঘদিন নানান ফন্দি ফিকির করে আসছিলেন।

এরমধ্যে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সহ ১৪ দলীয় জোট সরকার গঠনের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় এবং ১নং আসামি শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া ও ২নং আসামি আওয়ামী মহিলা লীগ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার প্রভাবশালী নেত্রী সঞ্চিতা বড়ুয়া এবং তার স্বামী ৫নং আসামি ত্রিদিব বড়ুয়া ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার একান্ত সচিব ও আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়ার নিকটতম আত্মীয় হওয়ার সুবাদে এবং ৯ নং আসামি দিদারুল হক ও ১১ নং আসামী জিয়াউল হক তৎকালীন ২৬ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও মামা সিরাজুল ইসলাম তৎকালীন ২৪ নং উত্তর আগ্রাবাদ ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা হওয়ার সুবাধে এবং ১৩নং আসামি,  ৩নং আসামি জয়াশীষ বড়ুয়া, ৪ নং আসামি জাহাঙ্গীর আলম, ৬ নং আসামি সফিউল আলম পূর্ব পরিচিত হওয়ার সুযোগে সরকার দলীয় ক্ষমতা ও অবৈধ কালো টাকার প্রভাব বিস্তারে জালিয়াতকারী চিহ্নিত ভূমিদস্যু ১৩নং আসামীর কু-প্ররোচনায় ও প্রস্তাবে লোভে বশীভূত ১-৯নং আসামীগণ স্বয়ং ও তাহাদের নিকটতম আত্মীয় (মামলার ২৪-৪৪ নং আসামি) পরিবার পরিজনের নামে বেনামে বিভিন্ন দলিল সৃজনের মাধ্যমে মসজিদের মালিকানাধীন উল্লেখিত দাগাদীর পরিমান প্রায় ৩০ গন্ডা সম্পত্তি আত্মসাতের মহা পরিকল্পনা করেন।

তারই ধারাবাহিকতায় ২য় ঘটনার তারিখ ১৪/১১/২০১৫ ইং উল্লেখিত সময়ে ১নং, ২নং এবং ৫নং আসামীর আত্মীয় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব বিপ্লব বড়ুয়ার সাথে শলাপরামর্শক্রমে সরকার দলীয় ক্ষমতা ব্যবহার করিয়া ২-১২ নং আসামীগণ স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা ও সন্ত্রাসী ১৪-১৭ নং আসামীগণদের জবর দখলের জন্য ভাড়া করেন এবং স্থানীয় যুবলীগ, আওয়ামীলীগ ১৪-১৭ নং আসামীগণের নির্দেশে ২১-২৩ নং ও ৪৫-৫২ নং আসামীগণ সহ ৪০/৫০ জন অজ্ঞাতনামা ছাত্রলীগ, যুবলীগ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনী মামলায় বর্ণিত ২য় ঘটনার দিন তারিখে ও সময়ে ৩-১৩ নং আসামীগণের নেতৃত্বে মসজিদের মালিকানাধীন

জমিতে বে-আইনিভাবে অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে প্রকাশ্যে দিবালোকে ১৪নং আসামীর হাতে থাকা পিস্তল উচিয়ে ফাকা গুলি বর্ষন ও ১৫-১৯ নং আসামীগণ এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের উদ্দেশ্যে ককটেল, বোমা ফাটিয়ে এলাকায় জনমনে ভীতি প্রদর্শনপূর্বক মসজিদের মালিকানাধীন উল্লেখিত দাগাদির প্রায় ১২ কোটি টাকা মূল্য সমপরিমান সম্পত্তি সহ আশপাশ অনেক নীরিহ মানুষের সহায় সম্পত্তি জোর জবরদস্তিমূলক লোহা ও টিনের বেড়া দিয়ে ঘেরাও দিয়ে দখল করে ফেলে।

বিষয়টি জানতে অভিযোগকারী ভুক্তভোগী মাহবুব আলমকে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি ফোন ধরেননি। এদিকে সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়ার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ

Scroll to Top