সিপ্লাস ডেস্ক: কয়েক দিন ভুগিয়ে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলায় বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে; তবে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের অভাবে কষ্টে পড়েছেন বানবাসী মানুষ।
পাশাপাশি কয়েক লাখ বাসিন্দাদের দিন-রাত কাটছে বিদ্যুৎহীন, যা ভোগান্তির মাত্রা বাড়িয়েছে। এতে মোবাইল নেটওয়ার্ক কাজ না করায় যোগাযোগবিহীন হয়ে পড়েছেন বেশির ভাগই।
টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের হঠাৎ এ বন্যায় সবমিলে দুর্দশার মধ্যে রয়েছেন মানুষজন। সাতকানিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এমএ মোতালেব এ পরিস্থিতিকে বর্ণনা করেছেন এভাবে, “বিদ্যুৎ নাই, খাবার পানি নাই- ভয়াবহ দুর্ভোগে আছে সাতকানিয়ার মানুষ।“
তিনি বলেন, “সব জায়গায় পানি… বাজার সদায় করতে পারছে না। খাবারের অভাব। শুকনো খাবার বিতরণ করা হলেও সরকারিভাবে এখনও বরাদ্দ আসেনি। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে কথাও বলেছি।“
দুর্যোগের মধ্যে বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকার কথা জানিয়ে চট্টগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ছাইফুল্লাহ মজুমদার জানান, সাতাকানিয়া- লোহাগাড়ার ২৫টি ইউনিয়ন ও তিনটি পৌরসভার তিন লাখ ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় তথ্য জানতে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।
পৌরসভার মেয়র মো. জোবায়ের জানান, উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নের মধ্যে প্রতিটিই ক্ষতির মুখে পড়েছে। এমন কোনো গ্রাম নেই যেখানে ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি।
বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের অভাবই বেশি জানিয়ে তিনি বলেন, যতটুকু পারা যাচ্ছে শহর থেকে নিয়ে পানি ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই সেগুলোতে চাহিদা মিটছে না। তবুও আমরা চেষ্টা করছি।
“কেউচিয়া, ধর্মপুর, নলুয়াসহ কিছু কিছু ইউনিয়নের অবস্থা এতই খারাপ, যেগুলোতে যাওয়া যাচ্ছে না। তাদের দুর্ভোগ বেশি হচ্ছে।“
পৌর মেয়র বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যক্তি ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যোগাযোগের অভাবে সব ইউনিয়ন ও গ্রামে পৌঁছাতে পারছে না।
চার দিন ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল নেটওয়ার্কও পাওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, কারও সঙ্গে সহজেই যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। চারটি ইউনিয়ন থেকে জরুরিভাবে লোকজনকে উদ্ধার করার জন্য বুধবার সেনাবাহিনীর সঙ্গে কথা বলেছি।
লোহাগাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউল হক বাবুল জানান, তার উপজেলার চুনতি, পুটিবিলা, লোহাগাড়া ও আমিরাবাদ ইউনিয়ন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানান, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলা ছাড়া অন্যসব উপজেলা বন্যার কবলে পড়েছে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া।
সাতকানিয়ার বাসিন্দা সাংবাদিক এসএম রানা তার এলাকাবাসীর উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগ হচ্ছে। সব গ্রামেই বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের অভাব। অনেকের কাছেই ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না। যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। রাস্তাঘাট পুরোপুরি তলিয়ে যাওয়ায় গ্রামেও কোনো মাধ্যমেই একস্থান থেকে অন্য স্থানে চলাচল করা যাচ্ছে না।
চট্টগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ছাইফুল্লাহ মজুমদার জানান, সাতকানিয়া, লোহাগাড়াসহ আটটি উপজেলায় সাড়ে ছয় হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ৫৬৫ টন শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে।
এছাড়া বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ও স্বাস্থ্য বিভাগ কাজ করছে বলে জানান তিনি।
থানা, উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যাচ্ছে না গত সোমবার সন্ধ্যা থেকে। মাঝে মাঝে মোবাইলে রিংটোন বাজলেও পরক্ষণেই নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে।