রাউজান প্রতিনিধি: সর্বজনীন পেনশন স্কিমে সারাদেশে ১ম উপজেলা হিসেবে দশ হাজার স্কিম রেজিষ্ট্রেশন করার মাইলফলক স্পর্শ করেলো রাউজান। রাউজানে এ পর্যন্ত ১০ হাজার ১১৮ জনের পেনশন স্কিম রেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন করেছে।
উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় বেসরকারি চাকরিজীবী, ইমাম, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত শ্রেণী, মৎস্যজীবী, বিভিন্ন পেশাজীবি, পরিবহন শ্রমিক থেকে শুরু করে দিনমজুর পর্যন্ত পেনশন স্কিমের আওতায় আসতে রেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন করছেন।
জনসাধারণ ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজনকে নিয়ে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের নানাবিধ উপকারিতা জানাতে ১৪টি ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যায়ে অবহিতকরণ সভার কার্যক্রম চলমান রেখেছে উপজেলা প্রশাসন। মাইকিং, লিফলেট বিতরণ, ইমাম সমাবেশ, বিভিন্ন মসজিদে মসুল্লীদের উৎসাহিতকরণ, রাবার বাগানে শ্রমিক সমাবেশ, বিভিন্ন মার্কেটে ও বাজারে স্পট রেজিস্ট্রেশন বুথ স্থাপন, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারসমূহে সর্বজনীন পেনশন স্কিম হেল্প ডেক্স স্থাপন, সকল ইউনিয়ন ভূমি অফিসে হেল্প ডেক্স স্থাপন এবং বিভিন্ন গ্রোথ সেন্টারে স্পট রেজিষ্ট্রেশন কার্যক্রম হাতে নিয়ে উপজেলা প্রশাসন রেজিষ্ট্রেশন কার্যক্রম ত্বরান্বিত করছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে যারা রেজিষ্ট্রেশন কার্যক্রমে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন তাদেরকে উপজেলা সমন্বয় সভায় পুরস্কার প্রদান করার মাধ্যমে উৎসাহিত করার কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে।
রাউজানের সংসদ সদস্য ও রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী সর্বজনীন পেনশন স্কিম রেজিষ্ট্রেশন কার্যক্রম বেগবান করতে পৌরসভার মেয়র, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন এবং বিভিন্ন অবহিতকরণ সভায় বক্তব্য দিয়ে জনসাধারণকে অনুপ্রাণিত করেছেন।
স্থানীয় পৌরসভার মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানরা স্থানীয়ভাবে মাইকিং, অবহিতকরণ সভা ও লিফলেট বিতরণ করে জনসাধারণকে এই বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও রাউজান অংগ্যজাই মারমা বলেন, রাউজানে সর্বজনীন পেনশন স্কিম রেজিষ্ট্রেশনে উৎসাহ ব্যঞ্জক সাড়া পাওয়া গেছে। এই পর্যন্ত আমরা ১০ হাজার ১১৮ জনের রেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন করেছি। সামনের দিনগুলোয় সর্বজনীন পেনশনে আগ্রহী মানুষের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশা রাখি। আমরা এই কার্যক্রমকে সফল করতে ইউনিয়নভিত্তিক ট্যাগ অফিসার নিয়োগ করেছি। মাসিক ও বাৎসরিক কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা উপজেলা পর্যায়ে এই বিষয়ক সকল কার্যক্রম আমার সঙ্গে সমন্বয় করছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এই কাজে সর্বোতভাবে সহযোগিতা করছেন।
উপজেলা প্রশাসন হতে প্রাপ্ত পরিসংখ্যানে জানা যায় চট্টগ্রামে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ১১ জুন পর্যন্ত রাউজান উপজেলা ছাড়া সীতাকুন্ড উপজেলায় ৬৩৯৫ জন, বাঁশখালীতে ৫৮৭৭ জন, কর্ণফুলীতে ৪০৮৫ জন, সাতকানিয়ায় ৩৭৫৯জন, হাটহাজারী উপজেলায় ৩৪৮০ জন, আনোয়ারায় ৩৪৭০ জন, চন্দনাইশে ৩৪৬৮ জন, পটিয়ায় ৩৩৯০ জন, মিরসরাইয়ে ৩৩১৬ জন, ফটিকছড়িতে ৩০৯৯ জন, বোয়ালখালীতে ২৯৬২ জন, সন্দ্বীপে ২৬৫২ জন, লোহাগাড়া উপজেলায় ২৫২৮ জন, রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় ১৮৩২ জন, কোতোয়ালি থানায় ২২৮ জন, চান্দঁগাও থানায় ১৩৩ জন, ডবলমুরিং থানায় ৯৯ জন, হালিশহর থানায় ৯৮ জন, খুলশী থানায় ৯০ জন, পাঁচলাইশে ৭৭ জন, আকবরশাহ থানায় ৬৯ জন, বায়েজিদ বোস্তামী থানায় ৬৭, বন্দরে ৬০ জন, বাকলিয়া ৫৭ জন, পাহাড়তলীতে ৫২জন, ইপিজেড থানায় ৪১জন, চকবাজার থানায় ৩৬ জন, পতেঙ্গা থানায় ৩৩ জন, সদরঘাট থানায় ৩২ জনসহ মোট ৬১ হাজার ৬০৮ জন রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছেন।
সবমিলিয়ে চট্টগ্রামের ৩০ টি থানা ও ১৫টি উপজেলা মিলে সবচেয়ে বেশি রেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন করেছে রাউজান উপজেলা। রাউজান পৌরসভার মেয়র জমির উদ্দিন পারভেজ বলেন, আমাদের রাউজান অভিভাবক এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর পরিকল্পনায় ও নির্দেশনায় জনকল্যাণমুখী এই সর্বজনীন পেনশন স্কিমের সুফল সম্পর্কে পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে, পাড়া-মহল্লায় অবহিতকরণ সভা, সেমিনারের আয়োজন করেছি। হেল্পডেস্কসহকারে রেজিষ্ট্রেশন বুথ চালু করেছি। এভাবে আমরা জনগণে পেনশন স্কিমের সুফল বুঝতে সক্ষম হয়েছি। তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিভিন্ন এসে রেজিষ্ট্রেশন করছেন।
পাহাড়তলী ইউনিয়নের মোহাম্মদ রফিক নামের এক পেশাজীবি বলেন, সরকারি চাকরিজীবীদের পাশাপাশি আমরা পেনশনের আওতায় এসেছি। সুনিশ্চিত ভবিষ্যৎ সহ এই পেনশন স্কিমের সুফল বুঝতে পেরে শুরুতে আমি রেজিষ্ট্রেশন করে নিয়েছি। যারা এই পেনশন স্কিমের সুবিধা সম্পর্কে জানবে তারা আমার মত স্বপ্রণোদিত হয়ে দ্রুত রেজিষ্ট্রেশন করে নিবে।
চাটগাঁ নিউজ/জয়নাল/এসআইএস