কক্সবাজার প্রতিনিধি : কক্সবাজারের চিকিৎসা সেবা নিয়ে সৃষ্ট উদ্বেগ-উৎকন্ঠা আপাতত কেটেছে। রোহিঙ্গা সংকটে স্থানীয়দের জন্য বিশ্বব্যাংকের বরাদ্দে স্বাস্থ্য বিভাগে এনজিও’র নিয়োগপ্রাপ্ত প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকছে আরও ৬ মাস।
তবে চিকিৎসা সেবায় এনজিওর উপর নির্ভরশীলতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।
এদিকে, অর্থ বরাদ্দ না থাকায় ৩০ জুন শেষ হয়ে যায় এনজিওর অধীনে বাস্তবায়ন করা এসব প্রকল্প। এনিয়ে জেলাব্যাপী চিকিৎসা সেবায় বিপর্যয়ের শঙ্কা তৈরি হয়। কিন্তু ১ জুলাই সোমবার সকালে বিশ্বব্যাংকের পাঠানো এক চিঠিতে এসব প্রকল্প আগামি ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চালু রাখার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. নোবেল কুমার বড়ুয়া এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, বিশ্বব্যাংকের ‘স্বাস্থ্য ও জেন্ডার সাপোর্ট প্রকল্প (এইচজিএফপি), স্বাস্থ্য ও লিঙ্গ সহায়তা প্রকল্পের (এইচজিএস) অধীনে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বিভিন্ন এনজিও সংস্থা জেলাব্যাপী হাসপাতাল, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে জনবল নিয়োগসহ নানা সহায়তা করে আসছে। ২০১৯ সালে শুরু হওয়া এসব প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ না থাকায় জনবল প্রত্যাহারের চিঠি প্রদান করা হয়। বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সরকারের নানা পর্যায়ে চিঠি দিয়ে জানানো হয়। এর প্রেক্ষিতে সোমবার (১ জুলাই) বিশ্বব্যাংকের পক্ষে প্রেরিত এক চিঠিতে এসব প্রকল্প আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর কথা জানানো হয়েছে।
তিনি জানান, আগামী ৬ মাসও স্ব-স্ব আন্তর্জাতিক ও দেশীয় এনজিও সমুহ এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। এরপর বিশ্বব্যাংকের অধীনে এসব প্রকল্প আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএসও বাস্তবায়নের জন্য চুক্তি হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে জানুয়ারি ২০২৫ সাল থেকে আইএসও জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের এসব প্রকল্পের দায়িত্ব পাবে। এটি ধারাবাহিকভাবে থাকবে।ফলে কক্সবাজার জেলাবাসীর চিকিৎসা সেবা নিয়ে তৈরি হওয়া শঙ্কা কেটে গেছে বলে জানান তিনি।
কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জন অফিসের তথ্যমতে, কক্সবাজার স্বাস্থ্য বিভাগে সরকারিভাবে নিয়োগ করা জনবল ছাড়াও বিশ্বব্যাংকের অধীনে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কর্মকর্তা কর্মচারী রয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল, রামু, উখিয়া, টেকনাফ, চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সেন্টমার্টিন হাসপাতাল, জেলার ৭২টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এই সাড়ে ৩ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ১৯৯ জন, উখিয়া হাসপাতালে ৯২ জন, টেকনাফ হাসপাতালে ৮০ জন, সেন্টমার্টিন হাসপাতালে ১৬ জন, পেকুয়া হাসপাতালে ৫২ জন, চকরিয়া হাসপাতালে ৪৬ জন কর্মকর্তা কর্মচারী দায়িত্ব পালনের তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। এছাড়া ৭২টি ইউনিয়ন হাসপাতালে ৩ শতাধিক কর্মী দায়িত্ব পালন করছেন।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পদায়ন করা চিকিৎসকসহ ১৯৯ কর্মকর্তা ও কর্মচারী না থাকলে হাসপাতালটি ভর্তি রোগী, বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগের চিকিৎসা সেবায় বিপর্যয় নেমে আসার আশঙ্কা করছিলেন স্বয়ং হাসপাতালের চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টরা। শুধু তাই নয়, এই বিশাল জনবল শূণ্যতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে পরিচালিত আইসিইউ, সিসিইউসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিভাগই বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল।
প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধিতে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. আশিকুর রহমান। তিনি জানান, প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৩ হাজার রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিয়ে আসছেন। সীমিত সংখ্যক চিকিৎসক বা জনবল দ্বারা চিকিৎসা প্রদান করা কঠিন ছিল। প্রকল্পটি বহাল থাকায় স্বস্তি পাচ্ছি।
হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সভাপতি আবু তাহের জানান, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে নিয়োগকৃত জনবল দিয়েই হাসপাতালে আন্তর্জাতিক মানের জরুরি বিভাগের চিকিৎসা সেবা, ওষুধ প্রদান, রোগীর জন্য পরীক্ষা- নিরীক্ষা, নিবিড় শিশুস্বাস্থ্য পরিচর্যা কেন্দ্র, আইসিইউ, সিসিইউ ও ২৪ ঘন্টা প্যাথোলজি ব্যবস্থা ছিল। আর এসব কারণে এটি মডেল হাসপাতাল। এ প্রকল্প ৬ মাস বৃদ্ধি পেয়েছে, এটা স্বস্তির বিষয়।
কক্সবাজার জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মং টিং ঞো জানান, সব সময় এনজিওর উপর নির্ভরশীলতা থাকছে না, এটা কেটে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের অধীনে আইএসও চুক্তি হচ্ছে। জানুয়ারি থেকে এই চুক্তি। এটা হবে সংশ্লিষ্ট সংস্থা আইএসও’র মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তর সরাসরি জনবল নিয়োগসহ স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টি দেখবেন।
চাটগাঁ নিউজ/আছহাব/এসএ