‘লুটপাট, চাঁদাবাজির বিরুদ্ধেও ছাত্র সমাজ মাঠে নামবে’

‘শহীদী মার্চ’ চট্টগ্রামে ছাত্র-জনতার ঢল

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : একের পর এক স্লোগান উঠেছে, ‘শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’; ‘আমাদের শহীদেরা, আমাদের শক্তি’; ‘আবু সাইদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’; ‘এই যুদ্ধে জিতবে কারা, আমাদের শহীদের’; ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘আইয়ুব-মুজিব-হাসিনা স্বৈরাচার মানি না’, ‘শহীদের স্মরণে, ভয় করি না মরণে।’ শেষে মিছিল নিয়ে মুরাদপুর ও বহদ্দারহাট মোড়ে গিয়ে সবাই দৃপ্ত কণ্ঠে শপথ নেন-‘এই লড়াই শেষ লড়াই নয়। আমাদের লড়াই চলবে।’

বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নগরের ষোলশহর রেলস্টেশনে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের এক মাস পূর্ণ হওয়ায় শহীদদের স্মরণে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ‘শহীদি মার্চ’উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে চট্টগ্রামের রাজপথ আবারও কেঁপে উঠেছিল ছাত্র-জনতার স্লোগান-মিছিলে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ ও খান তালাত মাহমুদ রাফির নেতৃত্বে পালিত এই কর্মসূচিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ও এর আওতাধীন ৭ কলেজের শিক্ষার্থীসহ ছাত্রজনতা। এসময় তাদের বেশির ভাগের হাতে ও মাথায় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা দেখা যায়।

পূর্ব ঘোষণা শুরুতে ষোলশহর স্টেশনে সমাবেশ করেন ছাত্র-জনতা। সেখানে ছাত্রনেতারা বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের শুরু হয়েছিলো কোটা বৈষম্যের বিরুদ্ধে। সেই আন্দোলন থেকে স্বৈরাচার হটিয়ে এখন রাষ্ট্র সংস্কারের দায়িত্ব পৌঁছেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এমন দেশ তৈরি করতে চায়, যেখান থেকে নতুন কোনো স্বৈরাচার তৈরি হবে না। ধর্ম বর্ণ রাজনৈতিক পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে নতুন বাংলাদেশ তৈরি করতে চায় শিক্ষার্থীরা। তাই বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই শেষ হয়ে যায়নি।’ এরপর পুলিশ-ছাত্রলীগ-যুবলীগের গুলিতে ছাত্র-জনতা নিহত হওয়ার স্পট মুরাদপুর ও বহদ্দারহাট যান শিক্ষার্থীরা।

এছাড়াও শিক্ষার্থীদের তিস্তার পানি ও সীমান্ত হত্যা নিয়ে স্লোগান দিতে দেখা যায়। কেউ কেউ তাদের বহন করা প্ল্যাকার্ডে লিখে এনেছিলো, ‘সীমান্ত হত্যা বন্ধ কর, করতে হবে’। একই দাবিতে ‘পানি পানি পানি চাই, তিস্তার পানি চাই’; ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’ স্লোগান তুলেন শিক্ষার্থীরা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বলেন, ‘যারা ছাত্র জনতার এই বিজয়কে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র লিপ্ত রয়েছে তাদের হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি। এই রাষ্ট্র সংস্কারে ছাত্র জনতা এভাবেই মাঠে থাকবে। ছদ্মবেশে থাকা আওয়ামী লীগকে প্রতিহত করা হবে।’

রাসেল আরও বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন স্থানে লুটপাট, চাঁদাবাজি, সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়ানোর কারসাজিতে যারা মেতে উঠেছে তারা সাবধান না হলে প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধেও ছাত্র সমাজ মাঠে নামবে।’

শেখ হাসিনাসহ ছাত্র আন্দোলনে হত্যা-নির্যাতনের সঙ্গে সম্পৃক্তদের বিচার নিশ্চিতের দাবি জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি।

তিনি বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন, আমরা আজ তাদের শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। তাদের রক্তের বিনিময়ে আমরা যে স্বাধীনতা নতুন ভাবে অর্জন করেছি, তা সমুন্নত রাখতে লড়াই অব্যাহত রাখার শপথ নিচ্ছি। রাষ্ট্রের কাঠামোয় এখনো ফ্যাসিবাদ রয়ে গেছে। রাষ্ট্রের কাঠামো এখনো ঠিকমতো কাজ করছে না। সংস্কার করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করবে ছাত্র সমাজ।’

চাটগাঁ নিউজ/এআইকে

Scroll to Top