আনোয়ারা প্রতিনিধি : লিবিয়ায় মুক্তিপণের জন্য আটকে রাখা চট্টগ্রামের আনোয়ারার চার যুবকের মধ্যে মো. ওয়াসিম নামে একজন পাচারকারী চক্রের কবল থেকে পালিয়ে মুক্ত হয়েছেন। বাকিরা এখনো ঝুঁকিতে। তবে মুক্ত হবে আশায় বুক বেঁধেছেন স্বজনরা।
গত বুধবার লিবিয়ার সময় দুপুর ২টার দিকে বন্দী হওয়া বাসার দুতলা থেকে লাফ দিয়ে পালিয়ে যান ওয়াসিম।
শুক্রবার (২৯ মার্চ) ভুক্তভোগীদের পরিবার সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
পালিয়ে মুক্ত হওয়া মো. ওয়াসিম (২০) আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের নুরুল আলমের ছেলে। এখনো পাচারকারী চক্রের কাছে জিম্মি থাকা অপর তিনজন হলেন রায়পুর ইউনিয়নের মৃত মোজাহের মিয়ার ছেলে বোরহান উদ্দিন (২১), আবদুর রহিমের ছেলে জাবেদুর রহিম (২০) ও জেবল হোসেনের ছেলে নঈম উদ্দিন (২২)।
জানা যায়, আনোয়ারা ৪ যুবক সহ বাংলাদেশের ১২ যুবককে দালাল চক্রের মাধ্যমে অপহরণ করে লিবিয়ার একটি বিল্ডিংয়ে বিভিন্ন বাসায় ভাগ করে বন্দি করে রাখা হয়। সেখানে তাদেরকে নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজ পরিবাবের কাছে পাঠিয়ে মুক্তিপণ দাবি করা হয়।
এদিকে, প্রতিদিনের মতো বুধবার তাদেরকে ভবনের দ্বিতীয় তলায় গোসল করাতে বাথরুমে নিয়ে যায় পাচার চক্রের সদস্যরা। এসময় তাদেরকে রেখে অপহরণকারীরা ছাদে অবস্থান করলে কৌশলে ওয়াসিম লাফ দিয়ে পালিয়ে চলে আসে। পরে লিবিয়ায় এক ব্যক্তি তাকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যান৷ বর্তমান তিনি নিরাপদ স্থানে সুস্থ আছেন। বাকীদের উদ্ধারের তৎপরতা চলছে বলে জানান তিনি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সিপ্লাসটিভির সাথে ভিডিও কলে বন্দী থাকাকালীন শ্বাসরুদ্ধকর দিনের কথা জানান পালিয়ে উদ্ধার হওয়া মোঃ ওয়াসিম। তিনি বলেন, মো, জহির নামে পরিচিত এক ব্যক্তি চাকরির জন্য আমাদের লিবিয়ায় নিয়ে যান। পরে মেডিকেলে চাকরি দেয়ার কথা বলে আমাদের পাসপোর্ট নিয়ে যায় ওই ব্যক্তি। গত ২৩ মার্চ রাতে আমাদেরকে কৌশলে দালাল চক্রের কাছে তুলে দেন। সেখানে আমাদেরকে আটকে রেখে মারধর করেন। পরে আমাদেরকে দিয়ে পরিবারের ইমোতে কল দিয়ে মুক্তিপণ দাবি করেন। মুক্তিপণ না দিলে আমাদের মেরে ফেলার হুমকিও দেন।
তিনি আরও বলেন, প্রতিদিনের মতো অপহরণকারীরা আমাদের গোসল ও বাথরুমের জন্য ভবনের দ্বিতীয় তলায় নিয়ে যান। বুধবারও তারা আমাকে নিয়ে দ্বিতীয় তলায় গেলে পালানোর পরিকল্পনা করি। এসময় অপহরণকারীরা ভবনের ছাদে অবস্থান করলে আমি কৌশলে দ্বিতীয় তলা থেকে সড়কে লাফ দিয়ে পালিয়ে আসি। পরে লিবিয়ার এক ব্যক্তির সহযোগিতায় নিরাপদ স্থানে পৌঁছি। এখন সুস্থ আছি। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। মা বাবার দোয়ায় বেঁচে ফিরেছি। বাকিদের উদ্ধার করতে লিবিয়ার পুলিশের সহযোগিতায় কাজ করছি।
ভুক্তভোগীদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, রায়পুর এলাকার জহিরুল ইসলাম নামের এক দালালের মাধ্যমে ৪ লাখ ১০ হাজার টাকা করে দিয়ে লিবিয়া গেছেন চার তরুণ। লিবিয়া নিয়ে যাওয়ার পর একটি হাসপাতালে সবার ভালো চাকরি হয়েছে জানিয়ে তাদের পাসপোর্ট ও কাগজপত্র নিয়ে নেয় পাচারকারী চক্রের সদস্যরা। এরপর চারজনকে আরেকটি চক্রের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। ওই চক্রের সদস্যরা চার তরুণকে আটকে রেখে তাদের পরিবারের কাছে ১০ লাখ টাকা করে মুক্তিপণ দাবি করেছে। মুক্তিপণের জন্য তরুণদের নির্যাতন করে এর ভিডিও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের পাঠানো হচ্ছে। মুক্তিপণ পরিশোধ না করলে তরুণদের হত্যা করা হবে জানানো হয়েছে।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ