রোহিঙ্গা নারীকে ভোটার করলেন আনোয়ারার ইউপি চেয়ারম্যান!

আনোয়ারা প্রতিনিধি : এক রোহিঙ্গা নারীকে জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদান ও ভোটার করার অভিযোগ উঠেছে আনোয়ারা উপজেলার হাইলধর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কলিম উদ্দীনের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। যদিও বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের অবৈধ নাগরিক সুবিধা ও জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন রোধে কঠোর সরকার।

জানা গেছে, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা প্রবেশের পরে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপির নিজ এলাকা উপজেলার হাইলধর ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডে বৈবাহিক সূত্রে বসবাস করে আসছেন স্থানীয় মো. ফোরকানের স্ত্রী তাসলিমা আক্তার। পরে ভূয়া তথ্যের মাধ্যমে ওই নারীর বাবা আবুল কাশেমকে ২০২২ সালের মে মাসে ৮ নং ওয়ার্ড ও মাতা জাহেদা বেগমকে একই বছর জুনে ৭ নং ওয়ার্ডে বাসিন্দা দাবি করে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জন্ম সনদ দেওয়া হয়। এরপর ওই নারীকে একই ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জন্ম সনদ দেওয়া হয়। এসব জন্ম সনদ প্রদান করেন ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কলিম উদ্দীন। শুধু তাই নয় ওই ইউনিয়ন থেকে তাদের তিনজনকে বিভিন্ন সনদও দেওয়া হয়। এরপর চলতি বছরে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধনের জন্য উপজেলা নির্বাচন অফিসে আবেদন করেন ওই রোহিঙ্গা নারী তাসলিমা আক্তার। আবেদনের বিশেষ তথ্য ফরম সহ সকল ডকুমেন্ট সত্যায়িত করেন চেয়ারম্যান কলিম।

দেখা যায়, ওই ডকুমেন্টে সব তথ্যেও রয়েছে নানা গরমিল। ওই নারীর পিতার আইডি কার্ডে সেখানে দেখাচ্ছে তিনি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া ইউনিয়নের নাপিত পুকুরিয়া গ্রামের ভোটার। অন্যদিকে মায়ের আইডি কার্ডের বদলে দেওয়া হয়েছে আরেক নারীর আইডি কার্ড। এছাড়া ওই নারীর নামে জাতীয়তা সনদ, প্রত্যয়নপত্র ও পারিবারিক সনদও দেন চেয়ারম্যান কলিম। ওই সনদগুলোতে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর ছাড়াও ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য এমরানা করিম রিনার স্বাক্ষরও রয়েছে।

হাইলধরের ওই গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, স্থানীয় মো. ফোরকান ৭ বছর আগে বিয়ে করেছে রোহিঙ্গা এক নারীকে। এরপর এলাকায় মাদক বিক্রিসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু করেন তারা দুজন। কিন্তু ওই নারীর নামে নাগরিক সনদ ও ভোটারের বিষয়ে জানেন না স্থানীয়রা। এছাড়া ওই নারীর পিতা ও মাতা স্থানীয় বাসিন্দা নয় বলেও জানান তারা।

ওই নারীর পিতার জন্ম নিবন্ধন সনদের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. রিয়াজ উদ্দীন রাসেদ চাটগাঁ নিউজকে বলেন, আমার ওয়ার্ডের আবুল কাশেম নামের এমন কোনো ব্যক্তি নেই। আর ওই জন্ম নিবন্ধন সনদে আমার স্বাক্ষরও নেই। এটি ভুয়া। যে বা যারা এই সনদটি করে দিয়েছে তাদের শাস্তি দাবি করি৷

বিষয়টি জানতে সংশ্লিষ্ট মহিলা ইউপি সদস্য এমরানা করিম রিনার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে মোবাইলটি তার স্বামীর হাতে দিয়ে কথা বলতে বলেন।

বিষয়টি অস্বীকার করে হাইলধর ইউপি চেয়ারম্যান মো. কলিম উদ্দীন চাটগাঁ নিউজকে বলেন, রোহিঙ্গাকে নাগরিক সনদ ও ভোটার করার প্রশ্ন আসেনা। কিন্তু ওই নারী রোহিঙ্গা কিনা জানিনা। ওয়ার্ডের মেম্বাররা এসব করেছে হয়ত। যদি প্রমাণ পাই ওই নারীকে দেওয়া সকল সনদ ও ভোটার আবেদন বাতিল করা হবে। যে আমার বিরুদ্ধে এ বিষয়ে অভিযোগ করছে সে জারজ সন্তান।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবু জাফর ছালেহ জানান, চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৩২টি উপজেলাকে রোহিঙ্গা ঘোষিত গণ্য করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে অন্য উপজেলার চেয়ে এ উপজেলাগুলোতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য একটি বিশেষ ফরম পূরণ করতে হয়। এতে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বিভিন্ন সনদসহ গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টসের প্রয়োজন হয়। এছাড়া স্ব স্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে যাচাই বাছাই করে জাতীয় সনদ নিবন্ধন করা হয়।

তিনি আরও বলেন, জনপ্রতিনিধিদের অসৎ উদ্দেশ্য থাকলে রোহিঙ্গাদের অবৈধ ভোটার ঠেকানো সম্ভব হবে না। চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা ব্যক্তিকে ভোটার করানোর অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, মো. কলিম উদ্দীন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি সমর্থিত চেয়ারম্যান বলে পরিচিত।

চাটগাঁ নিউজ/সাজ্জাদ/এসএ

Scroll to Top