নিজস্ব প্রতিবেদক : ফেসবুকে পোস্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের হাজারী লেইনে সৃষ্ট উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে অভিযানে যাওয়া যৌথবাহিনীর ওপর এসিড নিক্ষেপ ও হামলার ঘটনার প্রতিবাদে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, চট্টগ্রাম’।
বুধবার (৬ নভেম্বর) বিকেলে নগরীর জামালখানে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে সংগঠনটি। পরে সেখান থেকে মিছিল শুরু করে কাজির দেউড়ি মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
সমাবেশে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শহীদুল হক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয় রাসেল আহমেদ, চট্টগ্রামের সমন্বয়ক জোবায়ের আলম মানিক, চট্টগ্রাম কলেজ শাখার সমন্বয়ক ইবনে হোসাইন জিয়াদ প্রমুখ।
সমাবেশে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শহীদুল হক বলেন, ‘হাজার বছর ধরে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও মুসলমান একতাবদ্ধ থেকে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়েছি। কিন্তু কয়েকবছর ধরে দেখা যাচ্ছে, একটা উগ্রবাদী সংগঠন আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করছে। আমরা চাই না, বাংলাদেশ ফিলিস্তিন হোক। আমরা চাই না বাংলাদেশ কাশ্মীর হোক। আমরা চাই না বাংলাদেশ মিয়ানমার হোক। এদেশের ৯০ ভাগ মুসলমান, কিন্তু আমরা শান্তিপ্রিয়। আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাস করি। এ কারণে আমরা ছোটবেলায় হিন্দু শিক্ষকের কাছে যেমন পড়েছি, একইসাথে হিন্দু ভাইয়েরা মুসলমান শিক্ষকের কাছে পড়েছে। কখনোই সাম্প্রদায়িক উসকানি দিইনি।’
কোটি কোটি ছাত্র-জনতা থাকতে এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব কেউ কেড়ে নিতে পারবে না উল্লেখ করে শহীদুল হক আরও বলেন, ‘একটি ছেলে ফেসবুকে ইসকনের বিষয়ে একটি পোস্ট দিয়েছে, তার দোকানে হামলা করেছে, আক্রমণ করেছে, ভাংচুর করেছে। তাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে এসব করা হয়েছে। এটা তো তারা মব জাস্টিস করতে চেয়েছে। এটা কিসের নমুনা?
সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বলেন, ‘কিছু উগ্রবাদী সংগঠন আওয়ামী লীগের দালাল হয়ে, আওয়ামী লীগের দোসর হয়ে আমাদের এদেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে। আমাদের সেনাবাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীর ওপর আক্রমণ করা হয়েছে। আমরা যখন আওয়ামী ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছিলাম, তখন এই সেনাবাহিনী আমাদের সহযোগিতা করেছিল। তাদের ওপর উগ্র সন্ত্রাসী সংগঠন হামলা করেছে। আমাদের এই দেশকে যদি অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র হয়, সেই ষড়যন্ত্র আমরা রুখে দেব।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে রাসেল আহমেদ বলেন, ‘জুলাইয়ের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান- সবাই মিলেমিশে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়েছি। আওয়ামী লীগ হিন্দু, মুসলিম- প্রত্যেকটা ধর্মকেই রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। কারও রাজনীতির হাতিয়ার আপনারা হবেন না।
হামলায় জড়িতদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সভা-সমাবেশ করা সবার গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু আমরা দেখেছি, ইসকন কিংবা এ ধরনের সংগঠন যখন সমাবেশ করে, তাদের পেছনে অনেক আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ কিংবা তাদের দোসরেরা থাকে। তাদের নিয়ে সতর্ক হবার আহ্বান জানাচ্ছি। আপনাদের সকল যৌক্তিক দাবিতে আমাদের সমর্থন থাকবে।’
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে পাঁচটায় ওসমান আলী নামের একজন ব্যক্তির ইসকনবিরোধী একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম নগরীর টেরীবাজার এলাকার হাজারী লেনে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে যৌথবাহিনী ঘটনাস্থল থেকে ৮০ জন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করে। তবে নগর পুলিশের পক্ষ থেকে ৮২ জনকে আটকের তথ্য দেওয়া হয়েছে।
চাটগাঁ নিউজ/উজ্জ্বল/এসএ