নিজস্ব প্রতিবেদক : শারদীয় দুর্গোৎসবের নানা স্বাড়ম্বরতার মধ্যে জাগরণ পুঁথি পাঠ অনন্য এক সংস্কৃতি। মহাষষ্ঠী থেকে শুভ বিজয়া দশমী পর্যন্ত পূজার এই পাঁচদিনের মধ্যেই পুরো পুঁথি পাঠ করে শেষ করতে হয়। আগেকার দিনে যখন সাউন্ড সিস্টেম ডিজে মিউজিকের তালে তালে উন্মাতাল নৃত্য ছিল না। হ্যাজাক লাইটের আলোয় চলত সাত্ত্বিক পূজা আরতি। তখন দুর্গোৎসবের প্রহর জুড়ে মণ্ডপে মণ্ডপে চলত জাগরণ পুঁথি পাঠ। নানা বাদ্যযন্ত্রের সমাহারে পাঠ হত জাগরণ পুঁথি। আপামর শ্রোতা সমাজ ভাব গাম্ভীর্যতায় শুনত সেই পুঁথি। আজ আধুনিক যুগে শারদীয় দুর্গা পূজার অনন্য ঐতিহ্য জাগরণ পুঁথি পাঠ বলতে গেলে বিলুপ্ত প্রায় এক সংস্কৃতি। পুরো চট্টগ্রামের দুয়েকটি পূজা মণ্ডপ ছাড়া জাগরণ পুঁথি পাঠের আসর কোথাও আর বসে না। তবে ডিজিটাল প্রযুক্তির এই সময়ে ইউটিউবারদের কেউ কেউ জাগরণ পুঁথি পাঠের ভিডিও আপলোড করায় ভক্ত শ্রোতারা দুধের স্বাদ অন্তত ঘোলে হলেও মিটাতে পারছেন।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি লায়ন আশীষ কুমার ভট্টাচার্য্য চাটগাঁ নিউজকে বলেন, জেএম সেন হলে অনুষ্ঠিত মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ আয়োজিত দুর্গোৎসবে প্রতিবছর জাগরণ পুঁথি পাঠের আয়োজন করা হয়। এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কর্মসূচিতে বাদ্য বাজনা সহকারে জাগরণ পুঁথি পাঠের আয়োজনও রয়েছে। নতুন প্রজন্মের মাঝে জাগরণ পুঁথি পাঠের ঐতিহ্য সমুন্নত রাখতে আমরা বদ্ধ পরিকর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে চট্টগ্রামের বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে এখনো জাগরণ পুঁথি পাঠের আসর বসে। জাগরণ পুঁথির রয়েছে নিজস্ব পাঠ রীতি। তা স্বকীয় সুর, তাল, ছন্দে পড়তে হয়। এই পুঁথির ছত্রগুলো পয়ার ও লাচারী নামে অধ্যায়ভুক্ত। প্রজন্ম পরম্পরায় এই পুঁথি পাঠের রীতি আয়ত্ত্ব করতে হয়। চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর কানুনগোপাড়া, উত্তরভূর্ষি, ধরলা, হাটহাজারী, রাউজানের নোয়াপাড়া, রাঙ্গুনিয়ার শিলক, পদুয়া, আনোয়ারার সদর ইউনিয়ন, চন্দনাইশের জোয়ারা, সুচিয়া,বরমা, পটিয়ার ধলঘাট, কেলিশহর, চক্রশালা, বাঁশখালীর বাণীগ্রাম, গুনাগরী, চাম্বল এলাকার পূজা মণ্ডপে এখনো বয়স্ক পুরুষ-মহিলারা জাগরণ পুঁথি পাঠের আয়োজন করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জাগরণ পুঁথি পাঠের দৃশ্যের দেখা মেলে। জাগরণ পুঁথিতে দুর্গাপূজার পুরো মাহাত্ম্য বর্ণনা থাকে পুঁথির ছত্রে ছত্রে।
পুঁথির ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, বাংলা পুঁথি সংগ্রাহক,, সংকলক ও গবেষক আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ অর্ধেকেরও বেশি পুঁথি সংগ্রহ করেছিলেন হিন্দুদের বাড়ি থেকে। কোনাে রকম প্রাতিষ্ঠানিক পৃষ্ঠপােষকতা ও আর্থিক আনুকূল্য ছাড়া সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে আড়াই হাজারেরও বেশি পুঁথির এক সংগ্রহশালা গড়ে তুলেছিলেন। তার বিশাল পুঁথি সংগ্রহ ও দুই খন্ডে প্রকাশিত “বাঙ্গালা প্রাচীন পুঁথির বিবরণ” পুঁথির এক অনন্য দলিল।
চাটগাঁ নিউজ/উজ্জ্বল/এসএ