‘জলাবদ্ধতা’— ৪ মাস সময় দিলেন উপদেষ্টারা, ব্যর্থতায় শাস্তির হুঁশিয়ারি

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক:  চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে গৃহিত কর্মপরিকল্পনাগুলো চলতি বছর মে মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে। তা নাহলে মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পের অর্থছাড় বন্ধ করে দেয়া হবে।

রোববার (১৯ জানুয়ারি) বিকেলে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থা প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময় করেন সরকারের উপদেষ্টা সমন্বয়ে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের মনিটরিং টিম।

মতবিনিময়ে এমন সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছেন চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা সমাধানে উপদেষ্টারা। বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়িত না হলে সংস্থাগুলোকে শাস্তির আওতায় আনা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন উপদেষ্টারা।

সভায় করণীয় হিসেবে ১১ দফা কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সভায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, চার মাস সময়। আপনি যদি কোনো ফল না পান, শুধু শুধু টাকা ঢেলে তো লাভ হবে না। আমরা দৃশ্যমান একটি সুফল পাব বলে আশা করি। বর্ষায় আমরা আবার আসব। আমাদের যে চার জনকে (উপদেষ্টা) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, আমরা যদি ফেল করি তখন এটার জন্য দায় নেব এবং এর জন্য যারা দায়ী ও আমাদের ফেল করতে বাধ্য করেছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেব।

তিনি বলেন, এবার যারা ফেল করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ আছে। সেকেন্ডারি ড্রেনগুলো পরিষ্কার করার যে জনউদ্যোগ নেওয়া হবে সেটা দেখার জন্য আদিলুর রহমান খান সাহেব আছেন। আমাদের আরেক উপদেষ্টা, উনি এসে কাজটি শুরু করবেন। প্রতিটি দফতরের প্রধান যারা আছে ঢাকা থেকে এসে তারা মনিটরিং করবেন। আমরা এসে মনিটরিং করব।

তিনি আরও বলেন, সভার শুরু থেকে আমরা সরকারি সব প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে যেসব শুনেছি, সেটা হচ্ছে পুনরুদ্ধার ও আর্থিক বিষয়। এখানে যে টাকা খরচ হয়েছে সেটার সুফল যেহেতু মানুষ পায়নি, সেজন্য নতুন টাকা বরাদ্দ দেওয়া কিন্তু ভয়ানক সমস্যা। যেখানে যাবেন, সেখানে জিজ্ঞেস করবে তোমাকে টাকা দেওয়া হয়েছিল আগে সেটার কি হলো? কি উপকারে আসল? এজন্য এটা একটি বড় সমস্যা। নালা, নর্দমা ও খাল পরিষ্কার করা হচ্ছে না। বর্জ্যতে সেগুলো ভরে গেছে। এটার ব্যাপারে বলব- সিটি করপোরেশনের এসব পদে অনেক লোক নিয়োগ করা আছে। তাদের কাছ থেকে কোনো কাজ পাওয়া যায়নি। ভবিষ্যতেও পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ আছে।

উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনে ১৫ দিনের জন্য এক হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেওয়া হবে। তাদের পরিষ্কার করার সরঞ্জামাদি দিয়ে দেওয়া হবে। এগুলো দিয়ে আমরা সেকেন্ডারি খাল ও নালার বর্জ্য পরিষ্কার করার ব্যবস্থা করে ফেলব। পুনরুদ্ধারের জন্য যেসব প্রজেক্ট ও স্লুইচ গেইট আছে সেসব নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করবে। আর যেসব মামলা আছে আমরা সেসবের তালিকা নিয়ে যাব। মামলাগুলো যাতে দ্রুত সুরাহা হয় সে ব্যাপারে আমরা পদক্ষেপ নেব। জমি অধিগ্রহণের যে সমস্যা আছে সেগুলো আমরা বিভিন্ন সংস্থা থেকে নিয়ে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ত্বরান্বিত করব।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীরপ্রতীক বলেন, চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসন নিয়ে যেসব সংস্থা কাজ করছে, তাদের সমন্বয়হীনতা আমরা দেখেছি। আবর্জনামুক্ত করে খালগুলো যারা নুতনভাবে তৈরি করছেন, তারা সেগুলো হস্তান্তর করে দিতে চান। কিন্তু যাদের হস্তান্তর করবে তাদের পর্যাপ্ত জনবল ও প্রযুক্তিগত সহায়তা নেই। বিষয়গুলো আমরা জানলাম। সমস্যা যখন আমরা চিহ্নিত করেছি সমাধানও আমরা করব।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, গত ১৬ বছর ধরে কোনো সমন্বয় ছিল না, এটাই মূল পয়েন্ট। সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যদি এক হয়ে প্ল্যান নিতো তাহলে এসব কথাগুলো আসতো না। এক সংস্থার প্রজেক্ট আরেক সংস্থার কাছে চলে গিয়েছিল। আমরা যখন বিরোধী দলে ছিলাম সেসময় এর বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছি। তখন সংস্থাগুলোর মধ্যে কোনো সমন্বয় ছিল না। আমরা এখন খুব আশাবাদী। কারণ আমাদের মধ্যে সমন্বয় আছে।

১১ দফা কর্মপরিকল্পনা

১. চট্টগ্রাম শহরের সকল ধরণের পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে।

২. চট্টগ্রাম শহরের প্রাইমারি, সেকেন্ডারি ও টারশিয়ারি ড্রেনগুলো পরিষ্কার করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া যেসকল স্যুয়ারেজের লাইন সরারসি ড্রেনে উন্মুক্ত হয়েছে, সেসব স্যুয়ারেজের লাইন স্থানান্তরের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৩. চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্মাণাধীন ১৭ টি স্লুইচগেটের মধ্যে ১৫টি আগামী মে মাসের মধ্যে চালু করতে হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মাণাধীন ২১ টি স্লুইচগেটের মধ্যে ১২টি একই সময়ের মধ্যে চালু করতে হবে।

৪. চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলা বন্ধ করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

৫. চসিককে বারইপাড়া খাল খননের কাজ চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে হবে। মে মাসের মধ্যে এ খালের সকল বর্জ্য পরিষ্কার করতে হবে।

৬. চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভাগীয় কমিশনার চট্টগ্রামের সভাপতিত্বে গঠিত কমিটি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাজের সমন্বয় করবে। এ কমিটিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিভাগীয় কমিশনার, চট্টগ্রাম। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান/সাংবাদিক/সুশীল সমাজের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

৭. চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পসহ অন্যান্য প্রকল্পগুলোর আওতায় চলমান খাল খনন কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট খালগুলো দখলমুক্ত করার প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নিতে হবে।

৮ কর্ণফুলী নদীর প্রয়োজনীয় নাব্যতা ও গভীরতা বজায় রাখার জন্য মেইনটেন্যান্স ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৯ . জলাবদ্ধতার হট স্পটগুলোতে পাম্পহাউজ চালু করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।

১০. রিসাইকেলিংয়ের মাধ্যমে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়ে আগামী মে মাসের মধ্যে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে হবে।

১১. প্রকল্পগুলোর বাইরে থাকা ২১টি খাল ও ড্রেনের বিষয়ে আগামী তিন মাসের মধ্যে একটি প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।

চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/এসএ 

Scroll to Top