বিনোদন ডেস্ক: ১৯৯৫ সালের ২৩ আগস্টের ঘটনা। সেই রাতে ঢাকা থেকে রাতে ঠাকুরগাঁওগামী বাসে দিনাজপুরের উদ্দেশে রওনা দেন ইয়াসমিন নামে এক কিশোরী। বাসের স্টাফরা ভোররাতে তাকে দিনাজপুর-দশমাইল মোড়ে এক চায়ের দোকানদারের জিম্মায় রেখে অনুরোধ করেন সকাল হলে দিনাজপুরগামী বাসে তুলে দেওয়ার জন্য।
তার কিছুক্ষণ পর কোতোয়ালি পুলিশের টহল পিকআপ আসে ঘটনাস্থলে। বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে জোর করে ইয়াসমিনকে পিকআপে তুলে নেয়। পথে তাকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করে লাশ ফেলে দেয় মহাসড়কে। এই মর্মান্তিক ঘটনা অবলম্বনেই গত বছর (২০২৩) নির্মিত হতে যাচ্ছিল একটি সিনেমা। যার নাম রাখা হয়েছিল ‘আমি ইয়াসমিন বলছি’।
দ্রুততম সময়ে ছবিটির শুটিং শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু সেটি আর হয়নি। শেষ পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায় সিনেমাটি ছিল। কিন্তু কেন সে সময় ছবিটি বন্ধ হয়েছিলো তা জানা যায়নি। এমনকি সংশ্লিষ্টদের তরফেও বন্ধ হওয়ার কারণটিও তখন জানা যাচ্ছিল না। অবশেষে ‘আমি ইয়াসমিন বলছি’ প্রসঙ্গে বিস্ময়কর তথ্য জানা গেলো।
পরিচালক সুমন ধর জানিয়েছেন, ছবিটির কাজ আটকে দিয়েছিলেন তখনকার (২০২৩) ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সাবেক প্রধান মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ। একদিন অচেনা একটি ফোন নম্বর থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন ডিবি হারুন। তবে সেটি নায়ক জায়েদ খানের মাধ্যমে। পরে জায়েদ খানই সুমনকে নিয়ে গিয়েছিলেন হারুনের ডিবি কার্যালয়ে।
সুমনের ভাষ্যে, ‘‘ফোন করে জায়েদ ভাই (জায়েদ খান) আমাকে বললেন, ‘আপনাকে আমার সঙ্গে একটু হারুন ভাইয়ের ওখানে যেতে হবে। কেন যেন আপনাকে ডাকছেন। আমি যেহেতু চলচ্চিত্রের মানুষ, তাই আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন।’ পরদিন আমি গেলাম, কয়েক মিনিটের ব্যবধানে জায়েদ ভাইও ঢুকলেন। দেখলাম হারুন সাহেব তার রুমে বসা। তার টিমও আছে। সালাম দেওয়ার পর আমাকে প্রশ্ন করলেন, ‘কী অবস্থা? শুনলাম, আপনি একটা সিনেমা করছেন, আমি ইয়াসমিন বলছি?’ বললাম, হ্যাঁ করছি। তিনি বললেন, ‘এটা নিয়ে অনেক কথাবার্তা আছে। এই ছবি আসলে করা যাবে না। আমাদের এখানে বড় বড় আরও শক্তিশালী গল্প আছে। ওগুলো আপনাকে দিই, সেখান থেকে করেন।”
এরপর সুমন ডিবি হারুনকে বলেন, ‘‘এই ছবির পেছনে আমি অনেক পরিশ্রম করেছি। সেই ২০১৭ সাল থেকে লেগে আছি। যেহেতু সত্যি গল্প, সিনেমার মধ্যে যেন সবটুকু সঠিকভাবে উঠে আসে, তার জন্য অনেক গবেষণা করতে হয়েছে। নিজেরও টাকা বিনিয়োগ আছে, প্রযোজকেরও আছে। সবচেয়ে বড় কথা, ছবিটা বানাবো বলেই ওই সময় নাটক বানানো কমিয়ে দিই। টুকটাক যে বিজ্ঞাপনচিত্র বানাতাম, তা-ও বন্ধ করে দিই। ছবিটা না হলে অর্থনৈতিকভাবে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হব। নাছোড়বান্দা হারুন ভাই এটুকু বললেন, ‘এই ছবি করা যাবে না’। তিনি যে আমার সঙ্গে খুব রাগী গলায় কথা বলেছেন, তা নয়। এরপর তার সহকারীকে ডেকে বললেন, ‘আমাদের কাছে ভালো ভালো গল্প আছে, সেগুলো সুমনের সঙ্গে শেয়ার করেন। সুমন যেটা পছন্দ করবেন, সেটা করবেন। আর সুমনের যদি স্পন্সর প্রয়োজন হয়, আমরা জোগাড় করে দেবো।”
এদিকে, নির্মাতাকে ডেকে নিয়েই শেষ করেননি ডিবি হারুন। জানা গেছে, সিনেমাটি না করার জন্য নায়িকা মিমকেও ফোন করেন ডিবি হারুন।
মিমের বলেন, “হোয়াটসঅ্যাপে কল দেখে একটু ঘাবড়ে যাই। তিনি (হারুন-অর-রশীদ) কেন আমাকে ফোন করবেন? ভাবতেও পারিনি যে আমার কাছে এমন একটি ফোনকল সেদিন আসবে আর বলা হবে যে ছবিটিতে অভিনয় করতে পারবো না! যখন তিনি বললেন, ‘তোমার পরিচালক আমার সামনে বসা’, তখন বুঝতে বাকি থাকেনি যে ছবিটা বোধহয় আর হবে না। পরিচালক বের হওয়ার পর তাকে (সুমন ধর) ফোন করে আবার নিশ্চিত হই। সব মিলিয়ে মনটা খুব খারাপ হয়। শিল্পীর জীবনে চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ সবসময় আসে না। আসার পর যখন আবার তা থেকে বঞ্চিত হতে হয়, তখন মন খারাপ হয়।”
তবে আশার কথা শোনালেন নির্মাতা সুমন ধর। বললেন- ‘আমি ইয়াসমিন বলছি’র শুটিং শুরু করবেন শিগগিরই। নায়িকা হিসেবেও থাকছেন মিমই। এ বিষয়ে ডিবি হারুন কিংবা জায়েদ খানের কোনও আত্মপক্ষ সমর্থন মেলেনি। এর মধ্যে ডিবি হারুন রয়েছেন আত্মগোপনে, জায়েদ খান স্টেজ শো নিয়ে ব্যস্ত কানাডা-যুক্তরাষ্ট্রে।
চাটগাঁ নিউজ/এআইকে