সীতাকুণ্ড প্রতিনিধিঃ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দশ লেইনে উন্নিতকরণে সরকারের প্রস্তাবিত প্রকল্পের সাথে তিনটি বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন সীতাকুণ্ড নাগরিক সমাজ।
বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সীতাকুণ্ড নাগরিক সমাজ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সীতাকুণ্ডের জনগণের পক্ষ থেকে এসব প্রস্তাব তুলে ধরেন সীতাকুণ্ড নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব মাস্টার আবুল কাশেম।
উল্লেখিত প্রস্তাবে তিনি বলেন, ২০১৬ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেইনে উন্নিত করার কাজ শেষ হয়। নতুন করে দশ লেইন করা হলে অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এই এলাকার বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিল্প কারখানা, হাট-বাজার, বাড়িঘর, মসজিদ, মন্দির, কবরস্থান, শ্মশানসহ শত শত গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থাপনা চিরতরে হারিয়ে যাবে। এছাড়াও জমি অধিগ্রহণের ফলে মহাসড়কের দুই পাশে হাজার হাজার বিরল প্রজাতির বৃক্ষ এবং জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাবে। আমরা এ সড়ক ১০ লেইন করার বিপক্ষে নই। কারণ এটির সঙ্গে দেশের অগ্রগতি ও উন্নতি জড়িত।
তিনি আরও বলেন, সীতাকুণ্ডের ৫ লাখ মানুষ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সীতাকুণ্ড অংশ ১০ লেন করার ব্যাপারে বিকল্প প্রস্তাব বিবেচনার দাবি করেছেন। কারণ এটির সাথে দেশের অগ্রগতি উন্নতি জড়িত। ছলিমপুর ভাটিয়ারী ও সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কোন কোন এলাকার ব্যাস সন্দ্বীপ চ্যানেল থেকে পাহাড় পর্যন্ত দুই কিলোমিটারেরও কম। সমুদ্র ভাঙনের ফলে সীতাকুণ্ড উপকূলীয় এলাকার হাজার হাজার মানুষ হাজার হাজার একর কৃষি জমি ও বসতভিটা হারিয়েছে। দশ লেইন করা হলে সীতাকুণ্ডে শতশত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিল্প কারখানা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যেমন থাকবে না তেমনি পূর্ব থেকে পশ্চিম ও পশ্চিম থেকে পূর্ব কোন যোগাযোগ থাকবে না।
সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত প্রথম বিকল্প প্রস্তাব হল, বর্তমানে পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত এবং ইকোনোমিক জোন থেকে সীতাকুণ্ডের সৈয়দপুর উপকূল পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ সড়কের কাজ শেষ হয়েছে। এখনও বাকি আছে ফৌজদারহাট থেকে সৈয়দপুর ইউনিয়নের উত্তর বগাচতর পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার এলাকা। এই মেরিন ড্রাইভ সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ হলে কমবে সড়ক দূর্ঘটনা, সেইসাথে জনদূর্ভোগ কমে নির্বিঘ্নে চলাচল করবে যানবাহন।
দ্বিতীয় বিকল্প প্রস্তাব হচ্ছে, বিদ্যমান চার লেন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ডের সিটি গেইট থেকে বড় দারোগারহাট পর্যন্ত চার লেইনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ। এটি করতে দশ লেইনের চেয়ে কম খরচ হবে বলে সড়ক নির্মাণ বিশেষজ্ঞদের ধারণা। এতে বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থ, মানুষের জমি ও বড় বড় স্থাপনা অধিগ্রহণের পেছনে ব্যয় হবেনা। সেই অর্থ বাঁচবে। তাছাড়া সার্ভিস লেইন বা আন্ডারপাস ছাড়া ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় আট-দশ লেইনের মহাসড়ক করার কোন নজির বিশ্বে নেই।
তৃতীয় প্রস্তাব হচ্ছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্বে রেললাইনের পূর্বে ফৌজদারহাট থেকে চিনকী আস্তানা পর্যন্ত পাহাড়ের পাশ দিয়ে মহাসড়ক নির্মাণ করা যেতে পারে। এই প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রীর দুষ্টি আকর্ষণ করছে সীতাকুণ্ডবাসী।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন সীতাকুণ্ড নাগরিক সমাজের আহবায়ক ফেনী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. ফসিউল আলম, সদস্য সচিব মাষ্টার আবুল কাশেম, বিজয় স্মরণী কলেজের প্রাক্তণ অধ্যক্ষ মো. জাহাঙ্গীর আলম, নাগরিক সমাজের সমন্বয়ক লায়ন মো. গিয়াস উদ্দিন, সীতাকুণ্ড সমিতির সভাপতি মো. নাছির উদ্দিন মানিক, সীতাকুণ্ড প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ফোরকান আবু, সমাজ সেবক ননী গোপাল দেবনাথ, তুষার কান্তি চৌধুরী, শিমুল চৌধুরী, এডভোকেট জহির উদ্দিন মাহমুদ, ইঞ্জিনিয়ার মো. আলমগীর, আবুল খায়ের মো. ওয়াহিদী, ফারুক মোনাদিনসহ বিশিষ্টজনেরা।
চাটগাঁ নিউজ/এসবিএন