রাউজান প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের রাউজানে চাঞ্চল্যকর ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম হত্যাকাণ্ডের ৪ দিন পার হয়ে গেছে। খুনিদের একটি সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লেও এখনো পর্যন্ত পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি। এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করলেও খুলেনি রহস্যের জট।
তবে এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে স্থানীয় সাবেক এক ইউপি চেয়ারম্যানের ছেলে কামাল উদ্দিন বলছেন, সন্ত্রাসী ফজল হকের নির্দেশে খুনিরা আমাকে খুন করতে এসে ভুল তথ্যের কারণে জাহাঙ্গীরকে খুন করেছে। কারণ আমারও পরনে সাদা পাঞ্জাবি ছিল, তারও সাদা পাঞ্জাবি ছিল। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় আমি বেঁচে গেলাম।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের ৪ দিন পেরিয়ে গেলেও নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকেও কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি। একদিকে জড়িত কাউকে আটক করতে না পারা অন্যদিকে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো মামলা দায়ের না হওয়া। আবার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের ছেলের বক্তব্য অনুযায়ী, ভুল টার্গেটে খুন হলেন ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম। সব মিলিয়ে এ হত্যাকাণ্ড জটিল রহস্যে মোড় নিচ্ছে বলে ধারণা এলাকাবাসীর।
নিহতের ভাই দিদারুল আলম বলেন, কার কাছে বিচার চাইব? ৫ আগস্টের পরে নোয়াপাড়ায় বেশ কয়েকটি ঘটনায় একাধিক মামলা হলেও পুলিশ একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করে নি। আমরা মামলা করে কি হবে? আমাদের জীবনের নিরাপত্তা কে দিবে? খুনি কারা তা পুলিশ জানে। তাদের কাছে ডকুমেন্টস আছে। মামলা করার ক্ষেত্রে কোন হুমকি ধমকি পেয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে আমি এই বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।
তবে, স্থানীয়দের অভিযোগ, ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলমকে হত্যা করে খুনিরা প্রকাশ্যে এলাকায় ঘুরছে। খুনিরা নোয়াপাড়া, গরীবুল্লাহ পাড়া, বেতাগীসহ আশেপাশের এলাকায় অবস্থান করলেও পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একব্যক্তি বলেন, তিনি এমনিতে সবক্ষেত্রে দান-খয়রাত করে আছেন। কেউ তার কাছে চাঁদা চাইলে কিছু দিয়ে হলেও ম্যানেজ করে চলা ব্যক্তি। এই হত্যাকাণ্ডে অন্য বিষয় জড়িত থাকতে পারে। তিনি জানান, সামাজিক আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মসজিদ কমিটি নিয়ে স্থানীয় এক প্রভাবশালীর সাথে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে বিরোধ চলে আসছে। ৫ আগষ্টের পর তা নতুনভাবে দানা বাঁধে। এছাড়াও নতুন বসত ভিটার জায়গায় বিরোধ নিয়েও প্রতিবেশী এক হুন্ডি ব্যবসায়ীর সাথে সমস্যা দেখা গিয়েছিল। এনিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে সালিশ-বিচার বসেছিল। তৎসময়ের আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীরের পক্ষে রায় দিয়েছিলেন। এতে জাহাঙ্গীরের প্রতি ঐ প্রতিবেশীর ক্ষোভ জমে। এসব কারণে তিনি ভাড়াটে খুনি দ্বারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে পারেন।
এই প্রসঙ্গে রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম সফিকুল আলম চৌধুরী বলেন, ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা মামলা করতে আসবে আসবে বলেও আসে নি। মামলা না দিলে আসামী কিভাবে গ্রেপ্তার করব। তবে, পুলিশ তৎপর রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার ব্যবসায়ীক কাজে দীর্ঘ ১৭দিন মায়ানমার ও মালয়েশিয়া সফর শেষে দেশে এসে জুমার নামাজ আদায় ও বাবা-মায়ের জেয়ারতের উদ্দেশ্যে নগরীর চান্দগাঁও বাসা হতে রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের নিরামিষ পাড়া গ্রামের উদ্দেশ্যে মোটরসাইকেল যোগে ভাগিনা আব্বাস উদ্দিনসহ রওনা দেন। আসার পথে বাড়ির অদূরে আসাদ আলী মাতব্বর পাড়া জামে মসজিদের সন্নিকটে পৌঁছালে সশস্ত্র সন্ত্রসীরা তাদের গতিপথ রোধ করে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করেন। এতে তারা দুইজনই গুলিবিদ্ধ হয়। সন্ত্রাসীরা চলে গেলে মুসল্লিরা তাদের উদ্ধার করে নগরীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জাহাঙ্গীরকে মৃত ঘোষণা করেন। গুলিবিদ্ধ আব্বাস উদ্দিন বর্তমানে একই হাসপাতালে চিকিৎসাধিন রয়েছেন। নিহত জাহাঙ্গীর আলম এলাকার মৃত আবু ছৈয়দ মেম্বারের ১ম ছেলে। তিনি নগরীর চাকাতাইয়ের একজন প্রতিষ্ঠিত শুটকি ব্যবসায়ী। নোয়াপাড়াও তার বড় ছেলের নামে মাকসুদ কমিউনিটি সেন্টার নামে একটি পারিবারিক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
চাটগাঁ নিউজ/জয়নাল/ইউডি