রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি: ‘মা’ ছোট্ট এই শব্দের মাঝে লুকিয়ে আছে কতশত আবেগ আর অনুভূতি। নাড়ি ছেঁড়া ধন হিসেবে যেমন সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসা হয় অকৃত্তিম তেমনি মায়ের প্রতি সন্তানেরও থাকে কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য। কবির ভাষায় বলতে গেলে —
‘‘পৃথিবীতে যায় তো কেনা
অনেক অমূল্য ধন
যাবেনা তো কেনা
মায়ের তুল্য অমূল্য রতন।
মা বড় রতন
অমূল্য ধন,
কখনো মায়ের মতন
কেউ হয়না আপন।’’
অথচ সে মাকেই বাইরে ফেলে তার অজান্তে ভিটে-বাড়ি বিক্রি করে দিয়ে ভাড়া বাসায় থাকছেন রাঙ্গুনিয়ার এক ছেলে। অন্যদিকে সত্তরোর্ধ বৃদ্ধা মায়ের অসহায় দিন কাটছে বাইরে রাস্তায় ঘুরে ঘুরে। এমনি এক অমানবিক ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড সৈয়দবাড়ি গ্রামে।
বৃদ্ধার এমন অমানবিক ঘটনার বিষয়ে স্থানীয় প্রীতম মুৎসুদ্দী ও মোহাম্মদ জীবন সিকদাসহ অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখলে বিষয়টি সবার দৃষ্টিগোচর হয়। হৃদয়বিদারক বিষয়টি নিয়ে এলাকার সর্বত্র ব্যাপক আলোড়নও সৃষ্টি হয়েছে। তারা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, অসহায় বৃদ্ধার পুষ্প বড়ুয়া বার্ধক্যজনিত রোগে চলাফেরা করতেও কষ্ট হচ্ছে। এই মা বাইরে বাইরে দিন কাটাচ্ছেন। তার সঙ্গে ছেলের বিষয়ে কথা বলতে চাইলে পুত্রের বিরুদ্ধে কোন কথা বলেননি। তবে তার পুত্রবধূকে দায়ী করছেন তিনি।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৫ মাস আগে পুষ্পর একমাত্র ছেলে দেবু ভিটে-বাড়ি বিক্রি করে ভাড়া বাসায় চলে যান। বসতঘর বিক্রি করে দেওয়ার পর ক্রেতারা জায়গাসহ ঘর দখলে নেওয়ার পর পুষ্পকে বের করে দেওয়া হয়। তারপর থেকে পথে পথে দিন কাটাচ্ছেন এই বৃদ্ধা। ৪ মাস ধরে গ্রামের একেকজনের ঘরে রাত কাটালেও এখন কেউ আর ঘরে রাখার ঝুঁকি নিচ্ছেন না। গত এক মাস ধরে বাইরে রাত কাটাতে হচ্ছে এই বৃদ্ধাকে।
স্থানীয় যুবক মোহাম্মদ জীবন সিকদার বলেন, ‘মাকে কিভাবে ছেলে ঘর থেকে বের করে দিতে পারে। বিষয়টি অমানবিক।’
জিকু নামে স্থানীয় অপর এক যুবক জানান, ‘ওই বৃদ্ধা শীতে ঘরের বাইরে রাত কাটানো দেখে স্থানীয় যুবকসহ আমি ইউএনও ও থানার ওসির কাছে যায়। তারা বিষয়টি স্থানীয় সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিকে সমাধান করতে ফোনে বলে দেন।’
বৌদ্ধ সংগঠনের নেতা অশোক তালুকদার বলেন, বৃদ্ধার বিষয় নিয়ে ইউএনও ও ওসি আমাদের যোগাযোগ করতে বললে যোগাযোগ করেছি। পুত্র দেবু দাবি করেছেন- পুষ্প বড়ুয়া তার মা নয়। তিনি বিধিসম্মতভাবে জায়গা বিক্রি করেছেন। বিষয়টি ইউএনও ও ওসি যখন বলেছেন- আমরা সামাজিকভাবে বসে যাতে ওই বৃদ্ধা থাকার জায়গা পান সেই পদক্ষেপ নেব।
এই বিষয়ে অভিযুক্ত দেবুর বক্তব্য নিতে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএন) মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘ঘটনাটি জানার পর আমি ওই গ্রামের গণ্যমান্য লোকজনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছি। তাদেরকে বলেছি, ওই বৃদ্ধা নিজের বসতঘরে থাকার বিষয় নিয়ে কোনো জটিলতা থাকলে এটা আইনিভাবে সমাধান করবেন। তবে ওই বৃদ্ধাকে মানবিক কারণে যাতে দ্রুত রাতে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। ’
চাটগাঁ নিউজ/জগলুল/জেএইচ