নিজস্ব প্রতিবেদক: সাগরে মাছ ধরা শুরু হলেও চট্টগ্রামের ফিশারিঘাটে আগের সেই হাঁক ডাক নেই। জালে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ ইলিশ ধরা না পড়ায় হতাশ মৎস্যজীবীরা।
ইলিশের সরবরাহ স্বল্পতার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রামের বাজারেও।
অন্যান্য সময় দিনভর সরগরম থাকা চট্টগ্রামের ফিশারিঘাট এখন অনেকটাই ফাঁকা।
অল্প যা কিছু ইলিশ মিলছে, তার বেচাকেনা বেলা দশটা-এগারোটার আগেই শেষ হয়ে যায়।
আগে সাগরে এক সপ্তাহ কাটালেই মিলতো প্রচুর ইলিশ। কিন্তু এখনকার চিত্র ভিন্ন- বলছেন মৎস্যজীবীরা। চাহিদা থাকায় দূর-দূরান্ত থেকে পাইকাররা চট্টগ্রামের ফিশারিঘাটে আসলেও সরবরাহ কম থাকায় ইলিশের দাম কিছুটা চড়া। আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে মন প্রতি ২৫ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকায়।
আগে ভরা মৌসুমে ফিশারিঘাটে দিনে বেচাকেনা হতো অন্তত ২ হাজার মণ ইলিশ, এখন তা নেমেছে প্রায় ২শ মণে। তবে শীত মৌসুম শেষে আবারও ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ মিলবে বলে আশা করছেন স্থানীয় আড়তদাররা। ফিশারিঘাটে বিভিন্ন ধরনের মাছের শতাধিক আড়তে দৈনিক বেচাকেনার পরিমাণ ৩০০ কোটি টাকার বেশি।
নগরের পাইকারি মাছের বাজার ফিশারিঘাট ঘুরে দেখা যায়, অন্যান্য মাছ থাকলেও ইলিশ নেই বললেই চলে। কয়েকজন আড়তদারের কাছে ইলিশ থাকলেও তারা চড়া দাম চাচ্ছেন। পাইকারিতেই ১ কেজি থেকে ১২শ গ্রামের প্রতি কেজি ইলিশের দাম ১৪০০ থেকে দেড় হাজার টাকা, ৮০০ গ্রাম থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি প্রায় ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায়। আর ৪০০-৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়।
এদিকে, সাগরে আশানুরূপ ইলিশ না পাওয়া কপালে চিন্তার ভাঁজ জেলে থেকে শুরু করে আড়তদার, বোট মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের। জেলেরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞার ৬৫ দিন ধার দেনা করে সংসার চালিয়েছেন। তার ওপর অবরোধের পর সাগরে মাছ না পাওয়ায় পুরো মৌসুমে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হবেন।
ইলিশের মৌসুম শুরুতেই নৌকা, জাল কেনা এবং মেরামতের জন্য মহাজনের কাছ থেকে দাদনসহ স্থানীয় পর্যায়ে ঋণ করেন জেলেরা। মৌসুম এলে চার-পাঁচ মাস ইলিশ শিকার করেন। সেই মাছ বিক্রির আয় দিয়ে দাদন ও কিস্তির ঋণ শোধ দেন। বাকি টাকায় সংসার চলে। কিন্তু আশানুরূপ মাছ না পাওয়ায় কীভাবে ঋণ পরিশোধ করবেন এই চিন্তায় দিন কাটছে তাদের।
পাইকারি মাছ ব্যবসায়ী আবদুল আলীম গণমাধ্যমকে বলেন, এখন বাজারে ইলিশের যোগান নেই। যেসব মাছ আছে, তা কোল্ড স্টোরেজের। এজন্য দাম বেশি। মেঘনার মোহনাতেও জেলেরা তেমন ইলিশ পাচ্ছেন না। এজন্য সাগরের ইলিশই এখন ভরসা।
সোনালি যান্ত্রিক মৎস্যশিল্প সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক বাবুল সরকার বলেন, জেলেরা মাছ ধরতে সাগরে গেলেও ইলিশ না পেয়ে খালি হাতে ফিরছেন। আজ সকাল থেকে ২০টি ট্রলার ঘাটে ভিড়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৪ থেকে ৫ টন ইলিশ এসেছে। একেকটি ট্রলার মাছ পেয়েছে গড়ে ১০০ থেকে দেড়শ কেজি। যা গত মৌসুমের চেয়ে প্রায় অর্ধেকেরও কম।