নিজস্ব প্রতিবেদক : ঈদ এলেই মানুষ খোঁজে নতুন টাকার কড়কড়া নোট। এসব নোটে সালামি কিংবা বকশিশ দেওয়া হলে ঈদের আনন্দে যোগ হয় বাড়তি মাত্রা। ব্যাংকে বিতরণ করা এসব নোট সংগ্রহ করতে অনেক সময় পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। ঝামেলা এড়াতে অনেকে ছোটেন ফুটপাতের টাকার দোকানে। নগরীর নিউ মার্কেট এলাকার নতুন টাকার দোকানে বেড়েছে ভিড়। তবে সরবরাহ কম থাকার অজুহাতে নতুন নোটের দাম বাড়িয়েছেন বিক্রেতারা। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
মাথার ওপর একটি ছাতা আর সামনে টাকার বাক্স নিয়ে ফুটপাতে বসে পড়েন ব্যবসায়ীরা। পুরনো ও ছেঁড়া টাকার নোট বিনিময়ের এ দোকানগুলো ঈদের আগে পরিণত হয় নতুন টাকা কেনাবেচার বাজারে। এ সময় নতুন করে যোগ দেন অনেক মৌসুমী ব্যবসায়ী। অনেকে এ বাজারগুলোকে ‘নতুন টাকার হাটও’ বলেন।
নিউ মার্কেট, কোর্টবিল্ডিং এলাকায় ফুটপাতের সারি সারি দোকানে দৃষ্টি কাড়ে চকচকে নতুন নোট। হাট ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতা আকর্ষণে ব্যস্ত বিক্রেতারা।এখানে দুই টাকা থেকে শুরু করে ১০০ ও ২০০ টাকা পর্যন্ত নোটের নতুন বান্ডিল বিক্রি করছেন।
গ্রাহকরা বলছেন, ‘ব্যাংকে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। তাও অনেক সময় কর্মকর্তারা সংকটের কথা বলে নতুন টাকা দিতে চায় না।’
আরেক গ্রাহক ক্ষুদ্ধ কণ্ঠে বলেন, সকাল থেকে কয়েকটি ব্যাংকে ঘুরেছি। কিন্তু কোথাও পাইনি। তাই বাধ্য হয়ে ফুটপাতে বাড়তি টাকা দিয়ে নতুন নোট কিনতে এসেছি।প্রতি বান্ডিলে বাড়তি ২০০-৩০০ টাকাও দাবি করছেন বলে জানান তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ঈদকে সামনে রেখে প্রতিবছর নতুন নোট বাজারে ছাড়ে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু এ বছর চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় নতুন টাকার হাহাকার দেখা দিয়েছে ব্যাংকগুলোতে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দুই টাকার প্রতি বান্ডিলের (১০০টি নোট) দাম ২০০ থেকে ২৫০ পর্যন্তও হাঁকা হচ্ছে। পাঁচ টাকার বান্ডিলের দাম ৫০০ টাকার বদলে হাঁকা হচ্ছে ৬০০ টাকা পর্যন্ত। কোথাও কোথাও আরও বেশি। ১০ টাকার বান্ডিল বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ২০০-২৫০ টাকা পর্যন্ত। আর ২০ টাকার বান্ডিল ২ হাজার ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ৫০ টাকার বান্ডিলে বাড়তি খরচ পড়ছে ২০০-২৫০ টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া ১০০ ও ২০০ টাকার বান্ডিলে বান্ডিলে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি রাখা হচ্ছে।
বোয়ালখালী থেকে নতুন টাকা কিনতে আসা শাহ আমীর বলেন, ‘ঈদে আত্মীয়-স্বজন ছোট বাচ্চাদের বকশিস দিতে হবে তাই নতুন টাকা নিতে এসেছি। দাম বাড়তি হলেও কিছু করার নেই।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী জানান, তারা বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে নতুন টাকা সংগ্রহ করেন। এ টাকার বান্ডিলে লাভ রেখে ব্যবসায়ীরা সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করেন।
প্রতি বছরের মতো এবারও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বাজারে ১০৬ কোটি ৫৬ লাখ নতুন টাকা ছেড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যা অন্যান্য বছরের তুলনায় কম। সারাদেশে ৮০টি এবং চট্টগ্রামে ২৫টি সরকারি, বেসরকারি ব্যাংকে একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ ১৮ হাজার ৫০০ টাকা করে প্রতিদিন ৯০ জন পাচ্ছেন এসব নতুন নোট। আর নতুন নোটের এই বিতরণ কার্যক্রম চলবে এপ্রিলের ৯ তারিখ পর্যন্ত।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ