ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে দুই আ.লীগ কর্মীকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : চট্টগ্রামের অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় মোহাম্মদ আনিস (৩৮) ও মাসুদ কায়সার (৩২) নামের দুই আওয়ামী লীগ কর্মী। নিহতদের হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছে পরিবার। শোকে ভেঙে পড়েন স্বজনরা।

অনন্যা আবাসিক এলাকা সংলগ্ন নাহার গার্ডেনের সামনে বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় বলেন, এলাকায় দুটি পক্ষ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। বালুর ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে নানা বিষয় নিয়ে বিরোধ ছিল দুই পক্ষের। এর একটি পক্ষে ছিলেন আনিস ও মাসুদ। তাঁরা স্থানীয় রাজনীতিতে হাটহাজারী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা ইউনুস গণি চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

পেশায় বালু ও পোলট্রি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আনিস পশ্চিম কুয়াইশ এলাকার ওসমান আলী মেম্বারের বাড়ির মৃত মো. ইসহাকের ছেলে। সেখানে দেখা যায় আনিসের মা সায়রা বেগম বাড়ির সামনে পেতে রাখা সোফায় বসে বিলাপ করছিলেন। বৈঠকে যাচ্ছেন বলে বৃহস্পতিবার সকালে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন মোহাম্মদ আনিস। আর রাতে খবর আসে সন্তানের মৃত্যুর সংবাদ। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় সায়রা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলেকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে মেরে ফেলেছে। দোসরেরা আমার ছেলেকে গুলি করে মেরে ফেলেছে।’ তবে কে বা কারা তাঁকে ডেকে নিয়ে গেছেন, তা স্পষ্ট করে বলতে পারেনি পরিবার।

আনিসের স্ত্রী এনি আক্তার বলেন, ‘একটি বৈঠকে গেছে, এটা জানতাম। সঙ্গে মাসুদও ছিল। কিন্তু কার সঙ্গে বৈঠক, কারা ছিল সেই বৈঠকে, এসবের কিছুই আমরা জানি না। আমার স্বামীর সঙ্গে এলাকার কোনো বিষয় নিয়ে কারও সঙ্গে বিরোধ ছিল বলে আমাদের জানা নেই। কেন আমার স্বামীকে এভাবে মারল? আমি খুনিদের ফাঁসি চাই।’

আনিসের সঙ্গে একইভাবে খুন হন একই এলাকার বিল্লাবাড়ির বাসিন্দা মাসুদ কায়সার। তাঁর গ্রামের বাড়ি বোয়ালখালী উপজেলায় বলে জানা গেছে। তিনি তাঁর নানাবাড়িতে থেকে পড়ালেখা করেছেন এবং সেখানেই থাকতেন। আনিস ও মাসুদ সব সময় একসঙ্গে থাকতেন বলে জানা গেছে। দুজনই স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন।

মাসুদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর মৃত্যুতে শোক নেমে এসেছে পুরো বাড়িতে। মাটিতে বসে কান্নায় বিলাপ করেছিলেন তাঁর খালা ইয়াসমিন আক্তার। তিনি বলেন, ‘আমার বোনের ছেলেকে এভাবে হত্যা করা হলো, আমি এর বিচার চাই। সে রাজনীতি করত, এটা অপরাধ? এর জন্য তাকে মেরে ফেলতে হবে?’—প্রশ্ন ইয়াসমিন আক্তারের।

পুলিশের ভাষ্য, রাত ৯টার দিকে অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়ক ধরে হেঁটে যাচ্ছিলেন আনিস ও কায়সার। সড়কের নাহার কমিউনিটি সেন্টার এলাকায় মোটরসাইকেলে আসা দুই দুর্বৃত্ত তাদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। ওই সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে দুজনই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। দুর্বৃত্তরা দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন গুলিবিদ্ধ দুজনকে উদ্ধার করেন।

চট্টগ্রাম জেলার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার ওয়াসিম ফিরোজ বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, আগের বিরোধের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়ক ধরে হেঁটে যাচ্ছিলেন আনিস ও মাসুদ। নাহার গার্ডেন রেস্তোরাঁ এলাকায় পৌঁছালে মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তরা তাঁদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে দুজনই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। দুর্বৃত্তরা দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন গুলিবিদ্ধ দুজনকে উদ্ধার করেন। আনিস ঘটনাস্থলে ও মাসুদকে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

বায়েজীদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সনজয় কুমার সিনহা বলেন, ময়নাতদন্তের পর লাশ পরিবারকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। এ ঘটনায় মামলার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। কী কারণে এ ঘটনা ঘটেছে, তা নিয়ে পুলিশ বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছে।

চাটগাঁ নিউজ/এআইকে

Scroll to Top