নিজস্ব প্রতিবেদক : ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয় শেখ হাসিনা সরকার। বিজয়ী ছাত্রদের প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নিতে ৮ আগষ্ট বাংলাদেশে আসেন প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁকে স্বাগত জানাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ থেকে তৃণমূল পর্যায়ের হাজারো নেতাকর্মী উপস্থিত হন। বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে ড. ইউনূস যখন একে একে গণঅভ্যুত্থানের বিজয়ী বীরদের সাথে কুশল বিনিময় করছিলেন, তখন সেখানে উপস্থিত এক নারী সমন্বয়ককে দেখা মাত্রই তিনি পরম স্নেহে বুকে জড়িয়ে নেন। এমন দৃশ্যটি মিডিয়ায় প্রচারিত হলে গণঅভ্যুত্থানের নারীশক্তি এই মহিলার পরিচয় নিয়ে দেশব্যাপী শুরু হয় আলোচনা। মেয়েটি কে? কি তার পরিচয়? তার সাথে ড. ইউনূসেরই বা কি এমন সম্পর্ক যে, দেখা মাত্রই পরম মমতায় বুকে জড়িয়ে নিয়েছেন?
সেই মেয়েটির নাম উমামা ফাতেমা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গতিমুখ নির্ধারণকারী নারী শিক্ষার্থীদের সমন্বিত করেছেন উমামা ফাতেমা। হামলা, নিপীড়ন, অত্যাচার সহ্য করে একটি নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে শপথ নিয়ে লক্ষ নারীকে পথে নামিয়েছেন এই উমামা ফাতেমারা। এমন মানুষকে ড. ইউনূস স্নেহ মমতায় বুকে জড়িয়ে নেবেন এটাই তো স্বাভাবিক!
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘোষিত আহবায়ক কমিটিতে এবার মুখপাত্রের দায়িত্ব পাওয়া উমামা ফাতেমার নতুন আরেকটি পরিচয় উঠে এসেছে চাটগাঁ নিউজের অনুসন্ধানে।
মুখপাত্র উমামা ফাতেমা চট্টগ্রামেরই মেয়ে। যে চট্টগ্রাম ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নারী বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের। যে চট্টগ্রাম কল্পনা দত্ত, নাদেরা বেগম, বেগম মুশতারী শফির। সেই চট্টগ্রামের নারীশক্তির যোগ্য উত্তরসূরী বৈষম্যবিরোধীর মুখপাত্র উমামা ফাতেমা। নতুন প্রজন্মের ক্রেজ হয়ে উঠা এই উমামা ফাতেমার দিকে তাকিয়ে আছে চট্টগ্রামবাসী। ড. মুহাম্মদ ইউনূসও চট্টগ্রামের হাটহাজারীর সন্তান। আর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমাও ফটিকছড়ির।
জানা গেছে, উমামা ফাতেমার বাড়ি ফটিকছড়ির হারুয়ালছড়ি গ্রামে। চট্টগ্রাম শহরে থাকাকালীন উমামা ফাতেমারা রহমান নগরের বাসায় থাকতেন। তার বাবা বর্তমানে ঢাকা মার্কেন্টাইল ব্যাংকে উচ্চ পদে আসীন। ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ থেকে উমামা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করেন। তারা দুই ভাই বোন।
কলেজ জীবন থেকে উমামা ফাতেমা রাজনৈতিক বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। ইস্পাহানি স্কুলে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সামাজিক ও মানবিক কর্মসূচিতে উমামা ছিলেন অগ্রজ শিক্ষার্থী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর তিনি বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সদস্য সচিব নির্বাচিত হন। এরই মাঝে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হলে উমামা ফাতেমা নারী শিক্ষার্থীদের সমন্বিতকরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালনে তিনি ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেন।
গণঅভ্যুত্থানের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা তার রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সব কর্মকাণ্ড থেকে অব্যাহতি নেন। জীবনের প্রথম রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন থেকে অব্যাহতি নেয়া প্রসঙ্গে ২২ সেপ্টেম্বর উমামা ফাতেমা তার ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলে একটি পোস্ট দেন।
সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাথে আমার দীর্ঘদিনের পথচলা। এই জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আমি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেছি। জুলাই গণঅভ্যুত্থান আমাদের অনেকের চিন্তা-চেতনার জগতকে যেমন পাল্টে দিয়েছে, তেমনই কাজের পরিসরও ব্যাপক মাত্রায় বিস্তৃত করেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে, সময়ের প্রয়োজনে এবং সামগ্রিক বিবেচনায় আমার পক্ষে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন সম্ভব হচ্ছে না। তাই আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ফেডারেশনের সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতির আবেদন করি, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি কর্তৃক গৃহীত হয়েছে।
চাটগাঁ নিউজ/উজ্জ্বল/এসএ