চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : যে বাড়িতে বিয়ের আনন্দ উল্লাস হওয়ার কথা, সেই বাড়িতে এখন চলছে শোকের মাতম। আত্মীয় স্বজনদের নাচ গানের পরিবর্তে কান্না ও আহাজারিতে পরিবেশ ভারি উঠেছে। বাড়ি থেকে বিয়ের বেনারসি শাড়ি পড়ে বিদায় জানানোর পরিবর্তে সাদা কাপড়ে চিরবিদায় জানানোর প্রস্তুতি চলছে। হবু স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া করে মেহেদি অনুষ্ঠানের আগে গলায় ফাঁস দিয়ে রিমা আক্তার (২০) নামে এক তরুণী আত্মহত্যার এমন হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটেছে পটিয়া উপজেলার হাইদগাঁও ইউনিয়নের হাইদগাঁও গ্রামে মনির আহমদের বাড়ীতে।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) দুপুরে নিজ বাড়িতে এ এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
নিহত রিমা আক্তার পটিয়া উপজেলার হাইদগাঁও ইউনিয়নের হাইদগাঁও গ্রামে মনির আহমদের মেয়ে। সে পটিয়া সরকারি কলেজের অনার্স ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী।
রিমার বড়বোন রুমি আকতার বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে আমার ছোট বোন রিমার মেহেদি অনুষ্ঠান ছিল। শুক্রবার দুপুরে ছিল বিয়ে। পারিবারিকভাবে বিয়ে ঠিক হলে বিয়েতে বরপক্ষ প্রথমে কোনো যৌতুকের দাবি না করলেও পরে দুই লাখ টাকা ও ফার্নিচার দাবি করে।
তিনি বলেন, গত পরশু বরযাত্রী বাবদ নগদ ২ লাখ টাকা বরপক্ষকে দেওয়া হয়েছে। এরপর ফার্নিচার চাইলে তাতেও আমাদের পরিবার রাজি হয়। কিন্তু মেহেদি অনুষ্ঠানের দিন ফানির্চার না দিলে তার স্বামী বিয়েতে অপারগতা প্রকাশ করে। এনিয়ে মোবাইলে আমার বোনের সঙ্গে তার হবু স্বামীর ঝগড়া হয়। এরপর ঘরের দরজা বন্ধ করে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁছিয়ে আত্মহত্যা করে। সে একটি চিরকুটও লিখে গেছে। চিরকুটের শেষে রিমা লিখে গেছে, মোরশেদকে তোমরা ছাড়বে না। ওকে ওর প্রাপ্য শাস্তি তোমরা দিবা।
গলায় ফাঁস নেওয়ার আগে চিরকুটে রিমা লিখেন- “প্রিয় শখের পুরুষ, তুমি করো তোমার বিয়ে, অনেক ভালো ও বেসেছো এবং অতিরিক্ত যন্ত্রণাও দিয়েছ। আমি পারছি না এত যন্ত্রণা নিতে। বাকি জীবনটা সুন্দর উপভোগ করতে পারলাম না, ভালো থেকো, আজকের দিনেও (গায়ে হলুদের দিন) তোমার যন্ত্রণা আমি নিতে পারছি না। আমার পরিবার থেকে তোমাদের যে যৌতুকের টাকা দিয়েছে সেগুলো শোধ করে দিও। তুমি আমাকে বাঁচতে দিলা না, আমি বাঁচতে পারতাম যদি বেশি মান-সম্মানওয়ালা পরিবারে জন্মগ্রহণ করতাম। সবাই ক্ষমা করে দিও, আর আমার পোস্টমর্টেম করিয়ে আমার সব যন্ত্রণা ধুয়ে-মুছে আমাকে কবরে পাঠিও। আর আমার পরিবারকে বলছি, মোরশেদকে তোমরা ছাড়বে না, ওকে ওর পাপ্য শাস্তি তোমরা দিবে।”
রিমার বাবা মনির আহমদ এই ঘটনার জন্য হবু স্বামী মোরশেদুর রহমান মিজানকে দায়ী করে তার শাস্তি চেয়েছেন। তিনি বলেন, তার লোভের বলি হয়েছে আমার আদরের মেয়ে। তারা বরযাত্রীর পরিবর্তে টাকা চেয়েছে, তাতেও আমরা রাজি হয়েছি। তারা কোন কিছু (যৌতুক) দাবি নেই বলে আসলেও বিয়ের কয়েকদিন আগ থেকে একের পর এক যৌতুক দাবি করে আসছিল। আমি তার ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে এবং সরকারের কাছে এর উপযুক্ত বিচার দাবি করছি।
রিমার হবু স্বামী মিজানুর রহমান মোরশেদ একটি বেসরকারি ব্যাংকের জুনিয়র ক্যাশ অফিসার হিসেবে কর্মরত রয়েছে। সে একই এলাকার মফিজুর রহমানের ছেলে।
এ বিষয়ে পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে আমরা মরদেহ উদ্ধার করি। পরে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ