সিপ্লাস ডেস্ক: ভৌগোলিক গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে এবং সেবার মান বৃদ্ধি করে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক আকাশ সেবার হাবে রূপান্তর করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন দুবাই, হংকং, ব্যাংকের মতোই দেশের হজরত শাহজালার ও কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক বিমান সেবার হাবে পরিণত করার নানা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
শনিবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অত্যাধুনিক তৃতীয় টার্মিনালের প্রাথমিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য যোগাযোগ যেমন অপরিহার্য, তেমনি বিদেশে যাতায়াতের জন্য বিমান যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভৌগোলিক কারণে কক্সবাজার ও শাহজালাল বিমানবন্দর হবে আন্তর্জাতিক যোগাযোগের হাব। হংকং, ব্যাংকক, দুবাইয়ের পর এখানে হবে এই হাব।’
এর পাশাপাশি বিমান সেবার আঞ্চলিক (রিজিওনাল) কেন্দ্র সৈয়দপুরকে বিমানবন্দরকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
বক্তব্য শেষে প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের উদ্বোধন করেন।
এর আগে দৃষ্টিনন্দন এই টার্মিনালের অত্যাধুনিক ইমিগ্রেশন কাউন্টার, সিকিউরিটি গেট, মুভিং ওয়াকওয়ে (স্ট্রেট এসকেলেটর) পরিদর্শন করেন তিনি।
সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরের আদলে গড়ে তোলা হয়েছে তৈরি শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল। নকশাও করেছেন চাঙ্গি বিমানবন্দরের নকশাকারক রোহানি বাহরিন।
এতদিন বছরে শাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করছিলেন ৮০ লাখের মতো যাত্রী। আধুনিক সব ধরনের সেবা সম্বলিত নতুন এই টার্মিনালের কারণে শাহজালালে বছরে যাত্রী সেবার ক্ষমতা আরও এক কোটি ২০ লাখ বেড়ে হবে দুই কোটি।
শুধু তৃতীয় টার্মিনালই নির্মাণ নয়, ভবিষ্যতে শাহজালাল বিমানবন্দরে সক্ষমতা আরও বাড়ানোর জন্য নেয়া হচ্ছে বিভিন্ন পদক্ষেপ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যতে আরও একটি রানওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। তৈরি করা হবে বিমানবন্দর রেল স্টেশন থেকে টার্মিনালে যাতায়াতের আন্ডার পাস। উড়োজাহাজের জ্বালানি সরবরাহ আরও সহজ করতে জেট ফুয়েলের পাইপলাইন বসানোর কাজ কাজ চলছে।
একইসঙ্গে আরও উড়োজাহাজ কেনার জন্য ফ্রান্সের এয়ারবাসের সঙ্গে এমওইউ সই করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, মানবশক্তিকে প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে। পাশের দেশ চাঁদে চলে যায়, আমরাও একদিন চাঁদে যাবো।
নতুন এই টার্মিনালে যাত্রীদের জন্য রয়েছে একসাথে এক হাজার ২৩০টি গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধা। লাগেজ ব্যবস্থাপনাসহ পুরো ইমিগ্রেশন সিস্টেম চলবে আধুনিক সফটওয়্যারে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় যাত্রীবাহী বিমান এয়ারবাস A-380 এর ব্যবহার উপযোগী দুইটিসহ মোট ২৬টি বোর্ডিং ব্রিজের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এই টার্মিনালে।
টার্মিনালে যাত্রীদের হাঁটার কষ্ট দূর করবে চলন্ত পথ। দীর্ঘ লাইনের কষ্ট এড়াতে থাকছে ১১৫টি চেক ইন কাউন্টার ও ৬৪টি ইমিগ্রেশন কাউন্টার। লাগেজ টানার জন্য থাকবে ১৬টি কনভেয়ার বেল্ট।
মোট ২১ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই প্রকল্পে জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে ১৬ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। আর বাকি ৫ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজ করছে, জাপানের মিতসুবিশি ও ফুজিতা এবং দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং।
২০১৯ সালে নির্মাণ শুরুর পরও কোভিড মারামারির মধ্যেও লাগাতার কাজ চালিয়ে মাত্র চার বছরের মধ্যে ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী এজন্য সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, চার বছরের কম সময়ে করোনার মধ্যেও এই টার্মিনালের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। কোভিডের মধ্যেও কর্মীরা সাহসী ভূমিকা নেওয়ার কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে।