‘বলুয়ার দিঘীতে আগুন’— পোড়া টাকা ফেরত পেতে পারেন হকার মোতালেব

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : বলুয়ার দিঘীতে অগ্নিকাণ্ডে স্বামী-স্ত্রীর করুণ মৃত্যু দেশবাসীকে নাড়া দিয়েছে। একই ঘটনায় মোতালেব মিয়া নামে এক হকারের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে জমানো প্রায় আড়াই লাখ টাকা পুড়ে গেছে। তার আর্তনাদ, আহাজারির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে মোতালেবের পোড়া টাকা যে ফেরত পাওয়ার সুযোগ আছে তা জানা নেই তার।

শুধু মোতালেব মিয়াই নন, অনেকেই জানেন না আগুনে পুড়ে যাওয়া টাকা নিয়মকানুন মেনে বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করলে শর্ত সাপেক্ষ ফেরত পাওয়া যায়।

এই প্রতিবেদনে টাকা পুড়ে গেলে তা ফেরত পেতে করণীয় নিয়ে আলোকপাত করা হলো। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, আগুনে পোড়়া নোটের বিনিময়ে মূল্য ফেরতের সুযোগ রয়েছে। তবে সেই পদ্ধতি বেশ জটিল ও সময়সাপেক্ষ।

প্রাথমিকভাবে নোট পুড়ে যাওয়ার কারণ ও পরিমাণ সহ স্থানীয় থানায় একটি ডায়েরি করে তার মূল কপি সংগ্রহ করে নিতে হবে। একই বিষয় উল্লেখ করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির স্বাক্ষর দিয়ে একটি শংসাপত্রও প্রয়োজন হবে। এছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্রের মূল ও প্রত্যয়িত কপি নাগালে রাখা বাঞ্ছনীয়।

এরপর নির্দিষ্ট ফর্মে বাংলাদেশ ব্যাংকে পোড়া নোটের বিষয়ে উল্লেখ করে আবেদন করতে হবে। এবিষয়ে উল্লেখ্য, সে দেশের আইন অনুযায়ী, পোড়া নোটের ৫১ শতাংশের বেশি অক্ষত থাকলে তবেই কিছু পরিমাণ মূল্য ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তার কম শতাংশ অবশিষ্ট থাকলে আবেদন গ্রাহ্য হবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গিয়েছে, সপ্তাহে মাত্র একদিন পোড়া টাকার আবেদন পরীক্ষা করা হয়। ফলে দীর্ঘসূত্রিতার সম্ভাবনা প্রবল। ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের ধারণা, আবেদনকারীকে ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।

আবেদনের শুনানির দিন ব্যাংক একাধিক ধাপে ওই পোড়া নোটের অংশ পরীক্ষা করা হবে। তার মধ্যে রয়েছে জালনোট চেকিংও।

পুড়ে যাওয়ার পরিমাণ অনুযায়ী তিনভাগে ভাগ করা হয় নোটগুলোকে। ৫১ থেকে ৭৫ শতাংশ অক্ষত থাকলে নোটের মূল্যের ৫০ শতাংশ ফেরত পাবেন আবেদনকারী। দ্বিতীয় ভাগে ৭৬ থেকে ৯০ শতাংশ অক্ষত থাকলে আবেদনকারী নোটের মূল্যের ৭৫ শতাংশ পাবেন। তৃতীয় ভাগে ৯১ থেকে ৯৯ শতাংশ অক্ষত থাকলে সমমূল্যই ফেরত পাওয়া যাবে।

এরপর আরও কিছু আনুষ্ঠানিক বিধি পালনের পর মোট কত টাকা ফেরত হচ্ছে তা উল্লেখ করে একটি কাগজ আবেদনকারীর হাতে তুলে দেওয়া হবে। ক্যাশ কাউন্টারে সেই কাগজ জমা দিয়ে টাকা ফেরত পাবেন গ্রাহক।

এদিকে, চাটগাঁ নিউজের প্রতিবেদক আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হকার মোতালেব মিয়ার সাথে কথা বলে টাকা ফেরত পাওয়ার বিষয়টি তাকে অবহিত করেন। এসময় তিনি জানান, তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার কোম্পানিগঞ্জে। চট্টগ্রাম শহরের বলুয়ার দিঘীর পাড় জাফর কলোনিতে আছেন দীর্ঘদিন। এই শহরে এসেছেন প্রায় ২২ বছর। কখনো হকারি ব্যবসা, কখনো ছোটখাটো চাকরি; যখন যা পেয়েছেন তাই করে সংসার চালাচ্ছেন। তার স্ত্রী বিলকিছ বেগম মানুষের বাসাবাড়িতে কাজ করে সংসারে সহযোগিতা করেন। তাদের ঘরে দুই ছেলে। গ্রামের বাড়িতে ঘর বাঁধবে বলে মোতালেব মিয়া খেয়ে না খেয়ে অতিকষ্টে এ টাকা জমিয়েছিলেন। কিন্তু সর্বনাশা আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে তার ঘর বাঁধার স্বপ্ন।

চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/এসএ

Scroll to Top