নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রামের আপন ভাইকে নিজের ধর্ষক হিসেবে উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লাইভ প্রচার করার অভিযোগে ছোট বোনের বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন বড় ভাই।
মঙ্গলবার (২৫ জুন) চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক জহিরুল কবির চৌধুরীর আদালতে মামলার আবেদন করে মোহাম্মদ ইব্রাহিম খান (৩০)। পরে বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম মাওলা মুরাদ।
মামলার বাদী মোহাম্মদ ইব্রাহিম খান (৩০) তার আপন বোন তাহমিনা খান ও Prince Niloy Chowdhury নামে একটি ফেসবুক আইডিকে আসামি করেছেন। বাদী চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার থানার চট্টেশ্বরী রোড এলাকার মো. রফিকের ছেলে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালে বাদীর বড় বোনের সাথে ইমরান আহাদ শাওন নামে এক যুবকের বিয়ে হয়। শ্বশুরবাড়ি আসা-যাওয়ার ফলে শাওনের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে আসামি অর্থাৎ বাদীর ছোট বোন তাহমিনার সাথে। এ নিয়ে বাদীর বড় বোন ও ছোট বোনের মধ্যে তিক্ততাও দেখা দেয়। চলতি বছরের ৪ এপ্রিল বাদীর ছোট বোন ঘরের কাউকে না জানিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। এ নিয়ে বাদীর পিতা চকবাজার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেন। পরবর্তীতে জানা যায়, আসামি তাহমিনা তার আপন দুলাভাই শাওনের সাথে পালিয়ে গেছে। পরবর্তীতে চকবাজার থানায় তাহমিনা ও শাওনের বিরুদ্ধে একটি মামলাও করেন বাদীর পিতা মো. রফিক।
গত ২১ জুন সন্ধ্যায় বাদী তার ফেসবুক আইডিতে ব্যবহারকালে দেখেন, তার নাম ও ছবি ব্যবহার করে আসামি তাহমিনা তার ফেসবুক (Tahamina Khan) আইডিতে একটি সরাসরি সম্প্রচার প্রচার করে। যে ভিডিও’র ক্যাপশনে তিনি লেখেন, ‘আমি বাঁচতে চাই, ধর্ষক বাপ্পির বিচার চাই।’
এছাড়া ফেসবুকের মন্তব্যের ঘরে ওই আইডি থেকে বাদীর ছবিসহ লেখা হয়, এই সেই ইব্রাহিম। এই সেই ধর্ষণকারী। এর সুষ্ঠু বিচারের জন্য তাকে যেন আইনের আওতায় আনা হয়। আসামি প্রায় ১২ মিনিট দৈর্ঘ্যের দুটি লাইভ ভিডিওর একটির এক মিনিট ১৩ সেকেন্ডে বলেন, আমার ভাই ইব্রাহিম খান বাপ্পি আমাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে অত্যাচার করে। তাই আমি বাইরে চলে আসি। ৩ মিনিট ৩৯ সেকেন্ডে বাদীর স্ত্রীর নাম উল্লেখ করে আসামি বলেন, ও নিজের বউকেও মারে। আমি জানি না, আমার ভাবী নিশাত তারানুম তন্বী কেনো চুপ হয়ে আছে আর কয়দিন চুপ হয়ে থাকবে।
লাইভ ভিডিওর ৮ মিমিট ৪৭ সেকেন্ডে আসামি বলেন, আমি এটা বুঝি না, ভাই কিভাবে নিজের বোনকে ধর্ষণ করতে পারে। এরপর ৯ মিনিট ২৬ সেকেন্ডে বলেন, ওর (বাদী) বউ থাকা স্বত্বেও ও রাতে আমার সাথে থাকে। আমার ভাই ইব্রাহিম খান বাপ্পি ওর বউকে আলাদা রুমে রেখে ও রাতের বেলা আমার সাথে থাকে। আমি বুঝি না একটা মানুষ কিভাবে এ রকম হতে পারে।
ওই লাইভ ভিডিওতে আসামি আরও বলেন, আমার ধর্ষণের বিচার চাই আমি। আমার ধর্ষক ইব্রাহিম খান বাপ্পির বিচার চাই আমি। এটা কখনোই সম্ভব না একটা ভাই নিজের বোনকে কিভাবে ধর্ষণ করতে পারে।
আসামি তাহমিনা নিজের বড় বোনের স্বামীকে নিজের স্বামী দাবি করে ফেসবুকের ওই লাইভে বলেন, আমি যদি এখন দেশে পা রাখি তাহলে আমাকে আর আমার হাজবেন্ডকে মেরে ফেলবে। এটা আমার ভাই ইব্রাহিম খান বাপ্পি। আপনারা সবাই দেখেন। আমার ভাই ইব্রাহিম খান বাপ্পি, আমার ধর্ষক।
দুই নম্বর আসামি তার ফেসবুক প্রোফাইল (Prince Niloy Chowdhury) ব্যবহার করে ওইসব পোস্টে কমেন্ট করেন, বাপ্পি তোর কপালে দুঃখ আছে, তুই একটু ওয়েট কর, তুই চিটাগাং যে বস্তিতে থাকিস না ওই বস্তি জ্বালিয়ে দিবো বাপ্পি। আমি তোর লাশ এমনভাবে টুকরা করে কাটবো তুই নিজেও বুঝবি না জাস্ট একটু ওয়েট কর।
আসামিরা তাদের ফেসবুক আইডিতে বাদীর অনুমতি ছাড়া নাম ও ছবি ব্যবহার করে অশ্লীল, কুরুচিপূর্ণ পোষ্ট-কমেন্ট করে বাদীর মান-সম্মান ক্ষুন্ন করেছে। তাই সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ এর ২৪/২৫(১ক)/২৯/৩১/৩৫ ধারায় মামলাটি আমলে নিতে অনুরোধ করা হয়।
চাটগাঁ নিউজ/এআইকে/এসআইএস