পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদনে চমেকের পাহাড় নিধন!

নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে উন্নয়নের মোড়কে নিঃশব্দে বিলীন হচ্ছে পাহাড়, দৃশ্যমান শিকারির থাবায় গ্রাস হচ্ছে প্রকৃতি! চকবাজার থানাধীন চট্টেশ্বরী রোডে চমেকের বার্ন ইউনিট নির্মাণ প্রকল্পের নামে চলছে এই প্রকৃতি হত্যার নির্মম খেলা।

সরেজমিনে দেখা যায়, বর্তমানে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার নির্দেশে পাহাড় কাটা বন্ধ থাকলেও প্রাণহীন কঙ্কালসার ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে সবুজ প্রকৃতি! প্রশ্ন জাগে- এটি কি আসলেই উন্নয়ন, নাকি পরিবেশের কফিনে শেষ পেরেক?

যেখানে ব্যক্তি মালিকানাধীন যেকোনো পাহাড়ে কোপ বসালে ভেসে আসে আইনের খড়গ। সেখানে সরকারি প্রকল্পের তলোয়ারের ধারে নিঃশব্দে নিঃশেষ করা হচ্ছে পরিবেশ।

পাহাড় শুধু চট্টগ্রামের সৌন্দর্যের প্রতীকই নয়, এটি প্রাকৃতিক ভারসাম্যের রক্ষাকবচও বটে। কিন্তু উন্নয়নের নামে সেই ভারসাম্য নষ্ট করে ভবিষ্যতকে কি বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে? এমন প্রশ্নই মনে জাগে অংশীজনের। সরকারি অনুমোদনের দোহাই দিয়ে এভাবে নির্বিচারে পাহাড় কাটা আদৌ কি ন্যায়সঙ্গত?

প্রায় ২শ’ পাহাড়ের সমারোহ চট্টগ্রামকে পৌঁছে দিয়েছিল সৌন্দর্যের এক অন্য রূপে। তবে গত ৩০ বছরে চট্টগ্রামের মানচিত্র থেকে বিলীন হয়ে গেছে অন্তত ১২০টিরও বেশি পাহাড়। বাকি ৮০টিও কি থাকবে, নাকি চট্টগ্রাম একদিন পরিণত হবে এক বিবর্ণ কংক্রিট নগরীতে?

বিশেষজ্ঞদের মতে, এভাবে নির্বিচারে পাহাড় ধ্বংসের ভয়ানক খেলা চলতে থাকলে একসময় পরিবেশ হারাবে তার নিজস্ব ভারসাম্য। ইতোমধ্যেই বাড়ছে ভূমিধস ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি। শুধুই প্রকৃতিই নয়, পাহাড়ের সাথে হারিয়ে যাবে অসংখ্য জীববৈচিত্র্যের আবাস, সংকটে পড়বে চট্টগ্রামের জলবায়ু।

স্থানীয়রা জানান, যে পাহাড় এতোদিন চট্টেশ্বরী রোড এলাকার পরিবেশ ও সৌন্দর্য ধরে রেখেছিল সরকারি প্রকল্পের বলিতে সেটিই আজ পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে।

এভাবে নির্বিচারে পাহাড় নিধনের বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক সোনিয়া সুলতানা বলেন, এটি একটি সরকারি প্রকল্প। মন্ত্রণালয়ের অনুমতি থাকায় এটি অনুমোদন পেয়েছে। তবে অনুমোদিত পরিকল্পনার বাইরে কাজ করলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বার্ন ইউনিট প্রকল্পের নামে পাহাড় নিধনের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেলের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দিন বলেন, এটি চায়নার অর্থায়নে নির্মিত একটি প্রকল্প, যার মূল ভবনটি পাহাড়ের পাদদেশে তৈরি করা হবে।

তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যেই আমরা পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন পেয়েছি, স্বল্প সময়ের মধ্যে বার্ন ইউনিট নির্মাণের কাজ শুরু করবো।

তবে সচেতন মহলের প্রশ্ন, এ কি সত্যিই কোন উন্নয়নের ধারা, নাকি শুধু ধ্বংসের এক নতুন রূপ?

জানা যায়, গত বছর ৯ মে একনেকে অনুমোদন পাওয়া ১৫০ শয্যার বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট নির্মাণ করা হবে স্থানটিতে। ২৮৫ কোটি টাকার প্রকল্পের মধ্যে ১৮০ কোটি অর্থায়ন করবে চীন সরকার এবং বাংলাদেশ সরকার ১০৫ কোটি টাকা দেবে। এ প্রকল্পের আওতায় একটি ছয়তলা ভবন নির্মিত হবে।

চাটগাঁ নিউজ/সৈকত/এমকেএন/এসএ

Scroll to Top