আনোয়ারা প্রতিনিধি : নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগে আনোয়ারা উপজেলা পরিষদের প্রথম সাধারণ সভা বর্জন করেছেন উপজেলার ৯ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানিক চিঠি ও টেলিফোন করে উপস্থিত থাকার জন্য বার বার তাগাদা দেওয়া হলেও শেষ মুহূর্তে আসেননি ইউপি চেয়ারম্যানরা। চেয়ারম্যানদের ‘রহস্যজনক’ এই ভূমিকায় বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (২০ জুন) সকাল সাড়ে ১১টায় উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ অনুষ্ঠান ও মতবিনিময় সভা। এতে বিদায়ী উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী, নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মোজাম্মেল হক, ভাইস চেয়ারম্যান এম এ মান্নান মান্না, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান চুমকি চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইশতিয়াক ইমন, বরুমচড়া ইউপি চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা শামসুল ইসলাম চৌধুরী ও স্থানীয় প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তারা নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান কাজী মোজাম্মেলকে শুভেচ্ছা জানান ও আগামীতে ভালো কাজের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
যখন এই মতবিনিময় সভা চলছিল এই সময় চট্টগ্রাম নগরের একটি রেস্টুরেন্টে উপজেলার ৯ ইউপি চেয়ারম্যান একটি টিভি চ্যানেলে লাইভে যুক্ত হয়ে নিরাপত্তাহীনতার অজুহাতে উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভা বর্জনের ঘোষণা দেন।
বর্জনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ২ নং বারশত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম এ কাইয়ুম শাহ্।
যে সব চেয়ারম্যানেরা উপজেলার প্রথম সভা বর্জন করেছেন তাঁরা হলেন-১ নং বৈরাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নোয়াব আলী, ২ নং বারশত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ কাইয়ুম শাহ, ৩ নং রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিন শরীফ, ৬নং বারখাইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল জলিল চৌধুরী শাকিল, ৭নং সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অসীম কুমার দেব, ৮নং চাতরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন চৌধুরী সোহেল, ৯নং পরৈকোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুল হক বাবুল, ১০ নং হাইলধর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কলিম উদ্দিন চৌধুরী, ১১ নং জুইদন্ডী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাষ্টার ইদ্রিস।
এ বিষয়ে ৮ চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে মুখপাত্র হিসেবে ইউপি চেয়ারম্যান এম এ কাইয়ুম শাহ্ বলেন, ‘একাধিক ইউপি চেয়ারম্যানদের বাড়িতে হামলা করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত চেয়ারম্যানদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও যারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ মান্নানের উপর হামলা করেছিলেন এবং বিভিন্ন মামলার আসামিদের আজকে উপজেলা মিটিংয়ে দেখেছি। সুতরাং সব মিলিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় আমরা অংশগ্রহণ করিনি।’
ইউপি চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন চৌধুরী সোহেল বলেন, ‘উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানের লোকজন নির্বাচন চলাকালীন থেকে নির্বাচন পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে চেয়ারম্যানদের হুমকি ধামকি দিচ্ছে। আমরা কাল রাত পর্যন্ত অপেক্ষায় ছিলাম নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান তাঁর উশৃঙ্খল লোকজনদের দমন করে একটি সুস্থ পরিবেশ সৃষ্টি করবেন। কিন্তু তিনি এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেননি। বরং আজকে উপজেলা পরিষদের মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন মামলার আসামিদের উপস্থিতি দেখেছি। এতে আমরা নিরাপত্তাহীন ভোগছি। ’
এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মোজাম্মেল হক বলেন, ‘ওরা কখনো জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতে পারেনি। তাই জনগণের সামনে আসতে ভয় পায়। যেহেতু ভোটে জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে লজ্জায় মুখ দেখাবে কীভাবে! তাই নতুন নাটক সাজিয়েছে। চক্রান্তের নাটের গুরু বারশত ইউপি চেয়ারম্যান কাইয়ূম শাহ। আর চাতরী চেয়ারম্যান প্রকাশ্য জনসভায় জনগণকে পিষে মারার হুমকি দিয়েছিল। তারাই এখন নিরাপত্তার গল্প সাজায়। মানুষ এখন তাদের ভন্ডামি বুঝে গেছে।’
আনোয়ারার ১১ ইউপি চেয়ারম্যানের সবাই সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও স্থানীয় সাংসদ সাইফুজ্জামান চৌধুরীর অনুসারী হিসাবে পরিচিত। এরমধ্যে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য বটতলী ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এ মান্নান চৌধুরী পদত্যাগ করায় তার পদটি শূন্য রয়েছে। বাকি ১০ চেয়ারম্যানের মধ্যে ৯ জন গরহাজির থাকলেও উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ অনুষ্ঠানে হাজির হন বরুমচড়া ইউপি চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা শামসুল ইসলাম চৌধুরী।
তিনি বলেন, সবকিছুই ঠিকঠাক ছিল। ৯ চেয়ারম্যানের এই অনুপস্থিতিতি জনগণের রায়কে অসম্মান করার শামিল। এটা এক রকম জনবিচ্ছিন্নতা। ভোটে জয়পরাজয় থাকবে, তারা যা করল সেটা খারাপ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। বাস্তবে নিরাপত্তা নিয়ে কোন ধরনের প্রশ্ন ছিল না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইশতিয়াক ইমনের বলেন, ‘বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করব।’
আনোয়ারা থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি সোহেল আহমেদ চাটগাঁ নিউজকে বলেন, আজকের মতবিনিময় সভা ও সমন্বয় সভায় আমি নিজেই উপস্থিত ছিলাম। এখানে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ছিল।
এর আগে সমন্বয় সভায় নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মোজাম্মেল হক বলেন, উপজেলা প্রশাসন হবে জনবান্ধব। এখানে জবাবদিহিতা ও সচ্ছতা নিশ্চিত করা হবে। সত্যিকার অর্থে জনগণের সেবক হতে চাই। সকলের সম্মিলিত চেষ্টায় ইনশাআল্লাহ আমরা এগিয়ে যাব।
বক্তৃতায় বিদায়ী উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী বলেন, গত ১০ বছর সবাইকে নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছি। নতুন উপজেলা চেয়ারম্যান বিচক্ষণ ও সুদক্ষ ব্যক্তি। তিনি দূরদর্শীতার মাধ্যমে এই উপজেলাকে আরো এগিয়ে নেবে এটাই প্রত্যাশা।
উল্লেখ্য, গত ২৯ মে ২২ হাজারেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কাজী মোজাম্মেল হক। নির্বাচনে তিনি অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানের সমর্থন পান। অপরদিকে সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও স্থানীয় সাংসদ সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের অনুসারী ১১ ইউপি চেয়ারম্যান ভোটের মাঠে নবনির্বাচিত কাজী মোজাম্মেল হকের বিপক্ষে সরব ছিলেন। তারা সাবেক ভূমিমন্ত্রীর সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী তৌহিদুল হক চৌধুরীর পক্ষে ছিলেন।
চাটগাঁ নিউজ/সাজ্জাদ/এসএ