চাটগাঁ নিউজ ডেস্কঃ চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের খ্যাতনামা গীতিকার ও সুরকার সৈয়দ মহিউদ্দিন (মহি আল ভাণ্ডারী) আর নেই।
রবিবার (৭ এপ্রিল) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর।
জানা যায়, সৈয়দ মহিউদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। গত ১৩ মার্চ স্ট্রোক করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন এই গুণীজন। এরপর তিন দফা স্ট্রোক করেন। এর আগে ২০১৫ সালের ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের ডিসি হিলে এক অনুষ্ঠানে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সেদিন তিনি ক্রেস্ট ও সনদ নিয়ে মঞ্চ ত্যাগ করার সময় পা পিছলে পড়ে বাম হাত ও বাম পা ভেঙে ফেলেন। কাতালগঞ্জে আনিকা কমিউনিটি সেন্টার সংলগ্ন ভাড়া করা একটি সেমিপাকা গৃহে তিনি মানবেতর জীবনযাপন করেছেন।
এদিকে খ্যাতিমান এ শিল্পীর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন চট্টগ্রামের শিল্প, সংস্কৃতি ও বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ। বেলা ২টায় তাঁকে চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য আনা হয়। এসময় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, সিপ্লাসটিভি ও চাঁটগা নিউজের এডিটর ইন চীফ আলমগীর অপু, সংগীত শিল্পী কল্যাণী ঘোষ, প্রেম সুন্দর বৈষ্ণবসহ চট্টগ্রামের সংগীত জগতের মানুষ তাঁকে শ্রদ্ধা জানান। এসময় তারা এই গুণী শিল্পীকে মরণোত্তর রাষ্ট্রীয় সন্মাননা প্রদানের জন্য দাবি জানান।
সৈয়দ মহিউদ্দিন ফটিকছড়ির সুয়াবিল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সৈয়দ আমির হোসেন এবং মাতা সৈয়দা আনোয়ারা বেগম। গানের মাধ্যমে সমাজ বদলের স্বপ্ন দেখতেন তিনি। গ্রামে বসবাসকালীন অধ্যক্ষ হেম মজুমদারের কাছে সংগীত চর্চা শুরু করেন। ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত কুমিল্লায় ওস্তাদ সুরেন দাশের কাছে তিনি শাস্ত্রীয় সংগীত তালিম নেন। দেশ হানাদার মুক্ত হলে গান রচনা ও সুর চর্চায় মনোনিবেশ করেন। ১৯৮০ এর দশকে বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম কেন্দ্রে গীতিকার হিসেবে তালিকাভুক্ত হন তিনি। আধুনিক গান রচনার পাশাপাশি তিনি চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ও মাইজভাণ্ডারী গান রচনায় হাত দেন।
৮০র দশকে প্রথমে বাংলাদেশ বেতার চট্টগাম কেন্দ্রে আধুনিক গানের পান্ডুলিপি জমা দেন তিনি। যে বছর জমা দেন, সে বছরই বেতারের গীতিকার হিসেবে অনুমোদন পান। আশির দশকে তাঁর লেখা ও সুর করা ‘অ জেডা ফইরার বাপ’ গানে কণ্ঠ দেন আঞ্চলিক গানের বিখ্যাত শিল্পী শ্যাম সুন্দর বৈষ্ণব। বাংলাদেশ টেলিভিশনে গানটি প্রচারিত হওয়ার পরপরই বিপুল জনপ্রিয়তা পায়। এরপর নিয়মিত তিনি জনপ্রিয় আঞ্চলিক গান উপহার দিয়েছেন দর্শক–শ্রোতাদের।
তাঁর রচিত ও সুরারোপিত জনপ্রিয় ও উল্লেখযোগ্য চাটগাঁইয়া গান- অ জেডা ফইরার বাপ, মনহাচারা মাঝিরে তোর সাম্পানত চইড়তাম ন, মেজ্যান দিয়ে মেজ্যান দিয়ে ঐতারত, সাম্পান মাঝি সাম্পান বায় আগর মতো পেসিঞ্জার ন পায়, অউডা কঅছে ভাইপুত ক্যেনে বলে ম্যাট্টিক পাশ গল্লি, আঁরা এই সংসারত মিলিমিশি আছি দুয়া জাল, গর্কি তুয়ান বন্যা খরা মহামারি ঘূর্ণিঝড়, তালাকনামা পাঠাই দিলাম চিঠির ভিতরে,সহ অসংখ্য জনপ্রিয় গান।
চাটগাঁ নিউজ/এসবিএন