নগরে নীরব আতঙ্ক— আট এলাকা ডেঙ্গুর হটস্পট

নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম মহানগরের ৩৭ শতাংশ বাড়িতেই ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ওয়ার্ড এলাকায় জলা জায়গা, স্যাঁতসেঁতে অঞ্চল, পানি জমে থাকা স্থানের কারণে এলাকায় এডিস মশার লার্ভা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। নগরের ৮টি এলাকাকে ডেঙ্গুর রেডজোন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম মহানগরের ডেঙ্গু পরিস্থিতি পর্যালোচনায় গত সেপ্টেম্বর মাসে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগ একটি জরিপ চালায়। জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

জরিপের তথ্য অনুযায়ী, নগরীর ৪১টি ওয়ার্ড জুড়ে মশার বংশবৃদ্ধি, ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব, আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা নির্ধারণসহ সমূহ কর্মকাণ্ড পরিচালনায় একটি পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়েছে। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে কীটতত্ত্ব বিভাগের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, নগরের ৩৭ শতাংশ বাড়িতেই এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব বেশি। কয়েকটি এলাকায় ভয়াবহ হারে বেড়ে চলেছে এডিস মশার বংশবৃদ্ধি। আটটি এলাকায় সবচেয়ে বেশি এডিসের ঘনত্ব লক্ষ্য করা গেছে। এর মধ্যে বহদ্দারহাট, শেরশাহ-বায়েজিদ, পাহাড়তলী, বাকলিয়া, পাথরঘাটা, উত্তর ও দক্ষিণ খুলশী, হালিশহর ও চকবাজার এলাকায় এডিসের উপস্থিতি বেশি। এই আটটি এলাকাকে রেডজোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে এডিসের উপস্থিতি ও লাল তালিকা এলাকার সংখ্যা বেড়ে চলেছে নগরে।

গত ১১ অক্টোবর জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় প্রকাশিত তথ্যে, নগরে ৭টি এলাকাকে রেডজোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। গত ৪ অক্টোবর রেডজোনের সংখ্যা ছিল ৬টি। বর্তমানে তা ৮টিতে এসে দাঁড়িয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে রেডজোন বাড়লেও সিভিল সার্জন কার্যালয় বা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত হলেও তেমন উদ্বিগ্ন নয়। তারা বলছে, এডিসের ঘনত্ব গত বছরের চেয়ে এবার অনেক কম।

এ বিষয়ে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের জেলা কীটতত্ত্ববিদ মোছাম্মৎ এনতেজার ফেরদাওছ বলেন, গত বছর নগরে এডিসের লার্ভার ঘনত্ব ছিল ৪৬ শতাংশ। এবছর তা ৩৫ শতাংশ। মশা থেকে বাঁচতে জনসচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। ফ্রিজ, ভবনের ছাদে, বাগানের গাছের গোড়ায়, টবে বা আবাসনের কোথাও যাতে পানি জমে না থাকে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। মশারী ব্যবহার করতে হবে।

এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমী বলেন, প্রতি ওয়ার্ডে মশার বংশবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রতি ওয়ার্ডে ১০ জন লোকবল মশার ওষুধ ছিটাচ্ছে। তাছাড়া নিয়মিত পরিচ্ছন্ন কর্মীরা ময়লা সংগ্রহ করছেন। নগরীর রাস্তাঘাট পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করছেন।

এদিকে, বুধবার ১৬ অক্টোবর ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে সিভিল সার্জন কার্যালয় প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৬ জন। কোন মৃত্যু নেই। আক্রান্তদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ৪২ এবং বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৪ জন রোগী।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রামে চলতি বছর ২,২৪০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ ১ হাজার ২৩৭ জন, নারী ৬১৮ জন এবং শিশু ৩৮৫ জন। আক্রান্তদের মধ্যে এক হাজার ৪০৫ জন নগরীর এবং ৮৩৫ জন জেলার বাসিন্দা।

একই সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের। এর মধ্যে সেপ্টেম্বরেই মারা গেছেন ১১ জন। চলতি অক্টোবরে ২ জন মারা যান।

আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি লোহাগাড়ায় ১৮৭ জন, সাতকানিয়ায় ১০৮ জন, সীতাকুণ্ডে ৮৫ জন ও চন্দনাইশে ৫৬ জন।

চাটগাঁ নিউজ/উজ্জ্বল/এসএ

Scroll to Top