নিজস্ব প্রতিবেদক : ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে ২৯ মে আনোয়ারা উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দলীয় প্রতীক না থাকায় জমে উঠেছে আনোয়ারা উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। এবার চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩ প্রার্থী। নির্বাচন ঘিরে আনোয়ারায় দুপক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে।
জানা গেছে, দুই মাস ধরে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী। দোয়াত কলম প্রতীক পেয়ে জেলা-উপজেলার বেশ কিছু নেতাকে নিয়ে নির্বাচনের মাঠে আছেন তিনি। এরমধ্যে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান জাবেদ ঘোষণা দিয়ে বসেন চেয়ারম্যান পদে লড়বেন আনোয়ারা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মান্নান। এর পর ভোটের হাওয়া উল্টো বইতে শুরু করে। নিজের দুই অনুসারির ভোটযুদ্ধে বিভক্ত হয়ে পড়ে দলীয় নেতাকর্মীরা।
অন্যদিকে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানের অনুসারী চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কাজী মোজাম্মেল হকের শিবিরে লাগে সুবাতাস। সাবেক ভূমিমন্ত্রীর দুই অনুসারির মুখোমুখি অবস্থানে জনসমর্থন বাড়তে থাকে কাজী মোজাম্মেলের। ফলে জমে ওঠে আনোয়ারা উপজেলার নির্বাচন।
তবে নানা নাটকীয়তা ও আলোচনা সমালোচনা পর অবশেষে গতকাল মঙ্গলবার সাবেক ভূমিমন্ত্রী জরুরি বৈঠকে বসেন। পরিবর্তন করেন সিদ্ধান্ত। নিজের পছন্দের প্রার্থী এম এ মান্নানকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দিয়ে তৌহিদের পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দেন। এর পর আবারও ভোটের হিসাব নিকাশ পাল্টাতে শুরু করে। এখন মাঠে আছেন দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী। তারা ক্ষমতাসীন দলের নেতা হওয়ায় হাড্ডা হাড্ডি লড়াইয়ের জমে উঠেছে ভোটের মাঠ।
নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামা বিশ্লেষণ করে যে তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে অর্ধবৃত্তে, নগদ টাকা, সম্পদে তেমন কেউ এগিয়ে না থাকলেও স্থানীয় রাজনীতিতে দুজনই প্রভাবশালী।
হলফনামা থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, দুইবারের চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরীর শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে হফলনামায় মাস্টার্স পাস (এমএ) উল্লেখ করেন। রাজনীতির পাশাপাশি পেশায় তিনি ব্যবসায়ী। দু’বারের এই উপজেলা চেয়ারম্যান নিজ উপজেলায় স্ত্রী উম্মে সালমাকে ঠিকাদার বানিয়ে ঠিকাদারি ব্যবসা করছেন। যদিও নির্বাচনের হলফনামায় স্ত্রীকে দেখিয়েছেন গৃহিণী। কৃষিখাত থেকে তিনি আয় করেন ১ লাখ টাকা। ব্যবসা থেকে তার আয় ৬ লাখ টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানত রয়েছে ২ লাখ টাকা। চেয়ারম্যান থাকায় সম্মানী বাবদ আয় করেন ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। নগদ রয়েছে ১২ লাখ টাকা, স্ত্রীর কাছে রয়েছে ১ লাখ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে তার জমা রয়েছে ৫ লাখ টাকা, স্ত্রীর রয়েছে ২ লাখ টাকা। বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় কোম্পানির শেয়ারে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সমূহের মূলধন সহ রয়েছে ৫ লাখ টাকা। সঞ্চয়পত্রে রয়েছে ৩০ লাখ টাকা, স্ত্রীর রয়েছে ১ লাখ টাকা। বর্তমানে ২০ লাখ টাকা মূল্যের একটি গাড়ি রয়েছে তার। স্বামী ও স্ত্রীর সবমিলিয়ে স্বর্ণ অলংকারের পরিমাণ উল্লেখ নেই তবে তার দাম অর্জনকালীন সময়ের উল্লেখ করার হয়েছে মাত্র ২ লাখ টাকা। তার বাড়িতে ইলেকট্রনিক সামগ্রী রয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা মূল্যের। আসবাবপত্র রয়েছে ৬০ হাজার টাকার। কৃষি জমির পরিমাণ ৪৮ শতক যার মূল্য দেখানো হয়েছে ১০ লাখ টাকা। অকৃষি জমির পরিমাণ ৫ শতক যা মৌরশীপ্রাপ্ত হিসেবে দেখানো হয়েছে। একটি আবাসিক ও বানিজ্যিক দালান রয়েছে যা মৌরশীপ্রাপ্ত দেখানো হয়েছে। তার কোনো ঋণ নেই।
এদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কাজী মোজাম্মেল হক উপজেলা চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন আনারস প্রতীকে। শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে হলফনামায় ডিগ্রি পাস (ব্যাচেলর অব সোশ্যাল সায়েন্স) উল্লেখ করেন। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানত থেকে আয় ২১ হাজার ১৬৮ টাকা। পেশার বিবরণীতে চাকরি অবসরপ্রাপ্ত উল্লেখ করেছেন। তবুও এখন চাকরি বাবদ আয় করেন ৩৫ লাখ ১৪ হাজার ১০০ টাকা । জীবন বীমা পেনশন স্ক্রীম থেকে আয় করেন ৮৪ হাজার টাকা।বর্তমানে তার নগদ টাকা আছে ৫৬ লাখ ৮২ হাজার ১৯ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে ১১ লাখ ৭৮ হাজার ৪৪ টাকা। বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জ তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানীর শেয়ারের পরিমাণ ৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ডিপিএস আছে ৩ লাখ টাকার, পিএফ আছে ১৩ লাখ ১৮ হাজার ১৭ টাকার। জীবন বীমায় আছে ২ লাখ ৫২ হাজার ৪৫২ টাকা। ১০ লাখ টাকা দামের গাড়ি রয়েছে তার। নিজের নামে কি পরিমাণ স্বর্ণ রয়েছে তা উল্লেখ নেই। তবে অর্জনকালীন সময়ের মূল্য হিসেবে দেখানো হয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। ইলেকট্রনিক সামগ্রী রয়েছে ২ লাখ ২ হাজার ৭০০ টাকার। বর্তমানে নিজ নামে কোন কৃষি জমি নেই। অকৃষি জমির পরিমাণ উল্লেখ না থাকলেও দাম বলা আছে ৩৮ লাখ ১৬ হাজার ১১৭ টাকা। একটি আবাসিক ও বাণিজ্যিক দালান রয়েছে যার মূল্য ৩৭ লাখ ৬৬ হাজার ১০০ টাকা। WPPF লোন আছে ৬ লাখ ৭৫ হাজার ২০০ টাকা এবং কাফকো ইনভেস্টমেন্ট লোন আছে ৩ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। যা বর্তমানে অবসর জনিত কারণে সমন্বয় কারা হয়েছে বলা হয়।
এছাড়া অপর প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মান্নান চৌধুরীক চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন মোটরসাইকেল প্রতীকে। শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে হলফনামায় মাস্টার্স পাস উল্লেখ করেন। রাজনীতি পাশাপাশি তিনি ব্যবসা থেকে আয় করেন ৭ লাখ টাকা। হাতে কোন নগদ টাকায় নেই এই প্রার্থীর। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার রয়েছে ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা।প্রাইজ বন্ড রয়েছে ৭০ হাজার টাকার। চলাচলের জন্য কোন গাড়ী নেই তার। নিজের কাছে ১০ ভরি স্বর্ণ রয়েছে, যা বৈবাহিক সূত্রে পাওয়ায় মূল্য জানা নেই উল্লেখ্য করেন। ইলেকট্রিক সামগ্রী রয়েছে ৫০ হাজার টাকার । আসবাবপত্র রয়েছে ১০ হাজার টাকার। এছাড়া ডেইরি ফার্মে বিনিয়োগ করেছেন ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। নিজ নামে কোন কৃষি ও অকৃষি জমি, বাড়ী বা দালান নেই উল্লেখ্য করেছেন হলফনামায়। তবে মানুষের কাছ থেকে ধার কর্য করেছেন ১ লাখ ৩ হাজার ৪২২ টাকা।
আনোয়ারা উপজেলার ১১ ইউনিয়নে ৭৪টি ভোটকেন্দ্র আছে। তার মধ্যে স্থায়ী ভোটকক্ষ ৪৮৪টি এবং অস্থায়ী ভোটকক্ষ ৫০টি। পুরুষ ভোটার ১ লাখ ২৩ হাজার ৮৮৮ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৯ হাজার ২২১ জন।
চাটগাঁ নিউজ/এআইকে/এসএ