চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : জ্ঞাত আয় বর্হিভূত ১৫ কোটি ২৬ লাখ ৯২ হাজার ৪১৬ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে করা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় কারাবন্দী বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীকে শ্যোন গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
রবিবার (৫ মে) দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ ড. আবদুল আজিজ ভূঁইয়া এই আদেশ দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর কাজী সানোয়ার আহমেদ লাভলু জানান, চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি দুদক, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২ এর আদালতে উক্ত মামলাটি দায়ের হয়। এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদক, প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বিএনপি আসলাম চৌধুরীকে আলোচ্য মামলায় চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করেন। শুনানি শেষে আসামির জামিন নামঞ্জুর করে তাকে দুদকের মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আদেশ দেন।
এর আগে কুমিল্লার কারাগার থেকে বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে আদালতের নির্দেশে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, দুদক অনুসন্ধানে তথ্য পেয়েছে, ২০০১ সালের ২১ মার্চ থেকে ২০১১ সালের ১১ নভেম্বর পর্যন্ত আসলাম চৌধুরী চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারি, নডালিয়া, সলিমপুর, সোনাইছড়ি, দক্ষিণ সোনাইছড়ি, মসজিদ্দা, বাডাখালি, বাকখালি, বাঁশখালী, কলাবাড়িয়া, টেরিয়াইল, নয়াখালী, কৃষ্ণপুর, ভাটেরখীল, কাটগড়, গুলিয়াখালী, মুরাদপুর ও বোয়ালিয়া মৌজায় ১৪৬টি সাফ কবলার মাধ্যমে মোট ১৬ কোটি ৩৬ লাখ ৯১ হাজার ১৮৫ টাকার স্থাবর সম্পদের মালিকানা অর্জন করেন।
এছাড়া আসলাম চৌধুরী ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যবসায় ও অংশীদারি প্রতিষ্ঠানে পুঁজি বিনিয়োগ, বিভিন্ন ব্যাংক-বীমা প্রতিষ্ঠানে একাধিক হিসাব নম্বরে জমা করা অর্থ, আসবাবপত্র ও স্বর্ণালঙ্কার মিলিয়ে ৩৬২ কোটি ৭১ লাখ ৩৮ হাজার ২৮০ কোটি টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেন।
এর মধ্যে ঋণ বাদে নিট সম্পদের মূল্য ৩৩ কোটি ৫৪ লাখ ৭৭ হাজার ৬১৬ টাকা। ১৯৯৭-৯৮ সাল থেকে ২০২২-২৩ সাল পর্যন্ত তিনি আয়কর নথিতে ২৭ কোটি ৫০ লাখ ৭৩ হাজার ৮৩১ টাকা আয় প্রদর্শন করেছেন। পারিবারিক ভরণপোষণসহ আনুষাঙ্গিক খাতে ব্যয় দেখিয়েছেন ৮ কোটি ২০ লাখ ৫৫ হাজার ৯১ টাকা। এর ফলে তার প্রদর্শিত সঞ্চয়ের পরিমাণ ১৯ কোটি ৩০ লাখ ১৮ হাজার ৭৪০ টাকা।
কিন্তু তিনি ঘোষিত সঞ্চয়ের মধ্যে এক কোটি দুই লাখ ৩৩ হাজার ৫৪০ টাকার আয়ের সপক্ষে কোনো তথ্য-প্রমাণ দুদককে দেখাতে পারেননি। এর ফলে তার গ্রহণযোগ্য আয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৮ কোটি ২৭ লাখ ৮৫ হাজার ২০০ টাকা।
নিট সম্পদ ৩৩ কোটি ৫৪ লাখ ৭৭ হাজার ৬১৬ টাকার বিপরীতে গ্রহণযোগ্য আয় ১৮ কোটি ২৭ লাখ ৮৫ হাজার ২০০ টাকা হিসেব করলে আসলাম চৌধুরীর জ্ঞাত আয়বর্হিভূত সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৫ কোটি ২৬ লাখ ৯২ হাজার ৪১৬ টাকা। ২০০১ সালের ২১ মার্চ থেকে ২০২২ সালের ৩০ জুনের এ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন, যা এখন তদন্তাধীন।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১৫ মে রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড থেকে গ্রেফতার হন বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী। ইসরাইলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির সদস্য মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর তার বিরুদ্ধে ‘বাংলাদেশের সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করার’ অভিযোগ আনা হয়। রাষ্ট্রদ্রোহ-নাশকতা-দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে আট বছর ধরে কারাবন্দি আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে অর্ধশতাধিক মামলা আছে।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ