চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: বিএনপির নেতাকর্মীরা আড়াই মাস পর রাজধানীর নয়া পল্টনে থাকা দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালা ভেঙে ঢুকেছেন। বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে বিএনপির নেতাকর্মীরা কার্যালয়ে ঢুকে পড়েন।
এ সময়ে নেতাকর্মীরা সরকার বিরোধী নানা শ্লোগান দিতে থাকে।
রিজভী বলেন, আমাদের যুবদলের একজন নেতা ও একজন প্রবীণ সাংবাদিক হত্যার মধ্য দিয়ে এক ভয়াবহ নিপীড়নের তাণ্ডব শুরু হয়। গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ পণ্ড করে পুলিশ এক নারকীয় তাণ্ডব চালিয়ে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে দিয়েছিল। এই দুই মাসের অধিক সময় পুলিশ কাউকে এখানে ঢুকতে দেয়নি এবং আশপাশে ভিড়লেও তাদেরকেও আটক করে নিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, পুলিশ এই কার্যালয়ের চাবি নিয়ে যায়। কত নাটক করেছে। তারপরে গেইট বন্ধ করে দিয়ে চলে যায়। সবই গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা দেখেছেন… জানেন। আমরা আমাদের প্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এখন ঢুকেছি। পুলিশের কাছে চাবি চাওয়ার পরেও আমাদেরকে চাবি দেওয়া হয়নি। পরে আমরা তালা ভেঙে এই কার্যালয়ে প্রবেশ করি।
রিজভী বলেন, দেশের একটি নিয়মতান্ত্রিক কার্যকর রাজনৈতিক দল বিএনপি। এই দল বার বার রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে অত্যন্ত সুনামের সাথে, দক্ষতার সাথে। সেই দলের প্রধান কার্যালয় একটি মাফিয়া সরকার বন্ধ করে রেখেছে। সুতরাং পুলিশ চাবি না দেয়াতে তালা ভেঙে আমরা ঢুকেছি।
তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন পুরো কার্যালয়ে কি ভয়ংকর ধুলোবালি জমেছে। এটা এখন আমাদের পরিষ্কার করতে হবে। বিকেল ৩টায় আমাদের দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা এই কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন।
নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করে দেখা গেছে পুরো কার্যালয়ে ধুলোবালির স্তূপ জমেছে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষে এলোমেলোভাবে পড়ে আছে চেয়ার টেবিল, কাগজপত্র, পত্রিকা প্রভৃতি।
বুধবার বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, আজ বিকেল ৩টায় নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন হবে। সেখানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান ও সেলিমা রহমানের কথা রয়েছে। তার আগেই কার্যালয়টিতে ঢুকে পড়লেন দলের নেতা-কর্মীরা।
গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে দলটির নেতাকর্মীর সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সেদিন থেকেই বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয় তালাবদ্ধ অবস্থায় আছে। এ সময় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়সহ দেশের অন্যান্য স্থানেও দলটির অন্যান্য কার্যালয় বন্ধ ছিল। এমনকি বিজয় দিবসসহ জাতীয় দিনগুলোতেও কার্যালয় খোলা হয়নি।
গত বছরের ২৮ অক্টোবর সংঘর্ষের পর থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয় পুলিশ। পরদিন সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট বিএনপি কার্যালয়ের সামনে স্টিকার দিয়ে ঘেরাও করে তদন্ত চালায়। তখন পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, ‘ক্রাইম সিন’ লিখে বেষ্টনী দিয়ে ঘিরে রাখার অর্থ, তা পেরিয়ে বিএনপি কার্যালয়ে কেউ প্রবেশ করতে বা বের হতে পারবে না। অপরাধ তদন্তের জন্য সেখান থেকে পুলিশ আলামত সংগ্রহ করছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি কার্যালয় কার্যত বন্ধ থাকবে।
এর দু’দিন পর কার্যালয়ের দুই পাশে কাঁটাতারের ব্যারিকেড বসায় পুলিশ। কার্যালয়ের সামনের ফুটপাত দিয়েও সাধারণ মানুষের চলাচল বন্ধ রাখা হয়। মামলা ও গ্রেপ্তার আতঙ্কে তখন থেকেই বিএনপির কোনো নেতাকর্মী কার্যালয়মুখী হননি। তবে সংসদ নির্বাচনের পর থেকে সে অবস্থায় শিথিলতা আনা হয়।