সিপ্লাস ডেস্ক: ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আরো দুইশ বেড প্রস্তুত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যা আগে থেকে মন্ত্রণালয়েরও সিদ্ধান্ত ছিল। এর মধ্যে ১০০ বেড চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আর ১০০ বেড জেনারেল হাসপাতালে করা হবে। চসিকও ৫০ বেড এর হাসপাতাল প্রস্তত করছে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে গঠিত কার্যনির্বাহী কমিটির প্রথম সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সব সরকারি ভবন ও স্থাপনা নিজ নিজ দায়িত্বে পরিচ্ছন্ন রাখবে এবং নিজ স্থাপনায় মশক নিধন কার্যক্রম চালাবে। চসিক প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করবে। সিডিএ তাদের পরিদর্শকদের মাধ্যমে নির্মাণাধীন ভবনে তদারকি কার্যক্রম চালাবেন। গণপূর্ত ও হাউজিং কর্তৃপক্ষ নিজ নিজ নির্মাণাধীন ভবন তদারকি করবে।
এছাড়া শিক্ষা বোর্ড থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নির্দেশনা দেবে আঙ্গিনা পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য এবং শিক্ষার্থীরা যাতে ফুল স্লিভ (যেকোন কালার) জামা ও কেডস পরে আসে সেই নির্দেশনাও দেবে।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) নগরীর নন্দনকাননে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। ডেঙ্গু ও মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে চসিকের গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে চসিক মেয়র বলেন, মশা নিধনে নিয়োজিত স্প্রেম্যানের সংখ্যা ২২০ থেকে বাড়িয়ে ৪০০ জনে উন্নীত করা হয়েছে। ৩০০টি স্প্রে মেশিন ও ১২০টি ফগার মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে মশা নিয়ন্ত্রণে।
বর্তমানে ১০ হাজার লিটার এডাল্টিসাইড, ৩ হাজার লিটার লার্ভিসাইড ও ৫,০০০ লিটার ন্যাপথা মজুদ রয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদলের সুপারিশের আলোকে মসকুবান নামীয় ভেষজ ওষুধ ব্যবহার শুরু করা হয়েছে। এডাল্টিসাইড হিসেবে ইনভেন্ট লিকুইড ইনসেক্টিসাইড, লার্ভিসাইড হিসেবে টেমিফস ৫০ ইসি ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণ এলডিও এবং এইচএসডি (কালো তেল) ক্রয় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বিটিআই ও নেভোলিউবন ওষুধ সংগ্রহ করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ডেঙ্গু বিষয়ে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি ও ডেঙ্গু চিকিৎসা সুবিধা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে মেয়র রেজাউল গত ১১ জুলাই সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের দায়িত্বশীলদের উপস্থিতিতে সভা করে ৩৩ সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করেন। গঠিত কার্যনির্বাহী কমিটি ডেঙ্গুর প্রকোপ না কমা পর্যন্ত প্রতি ১৫ দিন অন্তর সভা করে কর্মপন্থা নির্ধারণপূর্বক গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে সকল সংস্থাকে লিখিতভাবে অবহিতকরণের সিদ্ধান্ত হয়।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী চট্টগ্রামের সবগুলো স্বাস্থ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে সমন্বিতভাবে কাজ করার পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে ডেঙ্গুর জন্য বিশেষায়িত সেবা চালুর আহ্বান জানান।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ড. সেলিম আকতার চৌধুরী বলেন, চসিকের পক্ষে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা সেবা দেয়া হচ্ছে। আতঙ্কিত না হয়ে লক্ষণ দেখা দিলেই টেস্ট করুন। ডাক্তারের পরামর্শ অনুসরণ করলে ডেঙ্গু ভাল হয়।
জনসচেতনতা বাড়াতে কাজ চলছে জানিয়ে একান্ত সচিব ও প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম জানান, স্থানীয় পত্রিকায় সচেতনতামূলক ও সতর্কতামূলক গণবিজ্ঞপ্তি কয়েকদিন পর পর প্রচার করা হচ্ছে। রেডক্রিসেন্ট ও আরবান ভলান্টিয়ারের যৌথ টিমের মাধ্যমে প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে ও নগরীর ১০টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে প্রতিদিন লিফলেট বিতরণ ও হ্যান্ডমাইক ব্যবহার করে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানা হচ্ছে। এছাড়া ৫টি মাইকের মাধ্যমে নগরবাসীকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতন হওয়ার জন্য প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
মশা নিয়ন্ত্রণে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে তিনি বলেন, ড্রোন ব্যবহার করে যেখানে পানি জমে আছে এবং লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে জরিমানা করা হচ্ছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে পানি জমে থাকলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। গত ৫ থেকে ২৬ জুলাই পর্যন্ত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ১২৭টি মামলায় ১০ লক্ষ ৭৬ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
সিভিল সার্জনের কাছ থেকে ডেঙ্গু রোগীর তথ্য সংগ্রহ করে রোগীর কর্মস্থল ও বসবাসস্থলের আশেপাশে বিশেষ মশা নিধন অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। এ লক্ষ্যে কুইক রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় সভায় চসিকের প্যানেল মেয়র আফরোজা কালাম, কাউন্সিলর নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, জহর লাল হাজারী, মো. মোবারক আলী, চসিকের বিভিন্ন বিভাগ ও শাখা প্রধানসহ বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা কমিশনারের কার্যালয়, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ, স্বাস্থ্য বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাবৃন্দ ও প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।