জুম পরিবারের বসতঘরের মাটি দিয়ে বানানো হচ্ছে ইট!

আলমগীর মানিক, রাঙামাটি : অবৈধ ইট ভাটায় পোড়ানোর জন্য পাহাড়ি জমির মাটি কিনে নেওয়ার ছদ্মাবরনে জুমিয়া পরিবারকে বাস্তুহারা করছে অবৈধ ইটভাটার মালিক কর্তৃপক্ষ। নির্মম ঘটনাটি ঘটে চলেছে রাঙামাটির কাউখালী উপজেলাধীন সুগারমিল এলাকায়।

কাউখালী-সুগারমিল সড়কের পাশেই তারাবুনিয়ায় অবস্থিত ‘এমএবি’ নামক এই ইটভাটা কর্তৃপক্ষের নির্মম অমানবিক আচরণে নিজেদের মাথা গোঁজার একমাত্র ঠাঁই হারাতে বসা মারমা জুমিয়া পরিবারের সদস্যরা চরম উৎকন্ঠার মধ্যে দিনানিপাত করছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কাউখালী উপজেলার সাথে লাগোয়া রাঙ্গুনীয়া সীমান্তে তারাবনিয়া ব্রীজের পার্শে জংগল বগাবিলি এলাকায় অবস্থিত এমএবি নামক ইট ভাটার। জনৈক তৈয়ব এর মালিকানাধীন এই ইটভাটাটি অবৈধভাবে স্থাপন করে সেটিতো পোড়ানো হচ্ছে হাজারো মণ পাহাড়ি বনাঞ্চলের গাছ।

ভাটাটিতে ইট তৈরি কাঁচামাল হিসেবে মাটির প্রয়োজনে স্থানীয় পাহাড়ি জুমিয়া পরিবারগুলোর বসতকৃত পাহাড়ের মাটি এক্সেলেভেটর দিয়ে কেটে নিচ্ছে ভাটা কর্তৃপক্ষ। এতে বাধা দিয়েও নিজেদের একমাত্র ছোট্ট বসতঘরটি রক্ষা করতে পারছেনা ভূক্তভোগী অসহায় জুমিয়া পরিবারটি।

সম্প্রতি ঘটনাস্থলে গেলে পাহাড়ি মারমা সম্প্রদায়ের এই পরিবারের গৃহকর্ত্রী সিগবা মারমা, মেলা অং মারমাসহ তাদের পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশিরা জানান, ইটভাটা মালিক কর্তৃপক্ষ গাড়ি দিয়ে জোরপূর্বক ভিটের মাঠি কেটে ভাটায় নিয়ে ইটতৈরি করছে। প্রতিবাদ করেও কোনো লাভ হয়না তাদের।

পরিবারটির পুত্রবধু জানান, গত বর্ষায় চরম দূর্ভোগ পোহাতে হয়েছে তাদের। কর্দমাক্ত অবস্থায় তার সন্তানটিও ঘর থেকে পড়ে আহত হয়েছে। ভাটা মালিকের নির্মমতার কারনে ইতিমধ্যেই কয়েকটি পরিবার অন্যত্র চলে গিয়েছে। বাসা ভাড়া নিয়ে পাড়ায় গিয়ে থাকতে হচ্ছে তাদের।

অসহায় এই পরিবারটির দাবি— তারা আমাদের থাকার ব্যবস্থা করে না দিয়ে আমাদেরকে বাস্তুহারা করে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা অত্যন্ত দরিদ্র ও অসহায় অবস্থায় দিনানিপাত করছি।

এদিকে ইট ভাটার মালিক আবু তৈয়ব দাবি করেন, আমরা ভিটের মাটি তাদের দাদুর কাছ থেকে কিনে নিয়েছি। তাই আমরা মাটি কাটছি।

অসহায় হতদরিদ্র জুমিয়া পরিবারগুলোকে বাস্তুহারা না করে তাদের অন্যত্র ঘর তোলার সময় না দিয়ে আপনারা মাটি কাটছেন কেন? এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর না দিয়ে আবু তৈয়ব দাবি করেন, আমি তাদেরকে বেশ কয়েকবার টাকা ও ইট দিয়েছি। এসময় তিনি তার ইটভাটার ম্যানেজার বিপ্লবকে দিয়ে প্রতিবেদককে অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজের চেষ্ঠাও চালান।

এদিকে, অত্যন্ত অমানবিক এই বিষয়টি কাউখালী উপজেলার ভারপ্রাপ্ত ইউএনও’র দায়িত্বে থাকা এসিল্যান্ড ফয়সাল আল নূরের দৃষ্টি আকর্ষন করলে তিনি জানা— আমরা ইতোমধ্যেই খবর পেয়েছি । ইটভাটার মাটি কেটে অনেকগুলো পরিবারকে বাস্তুহারা করা হচ্ছে এটা আইনের দৃষ্টিতে খুবই গর্হিত অপরাধ। উপজেলা প্রশাসন এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে।

চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ

Scroll to Top