সরোজ আহমেদ : চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালের রোগী ও সাধারণ পথচারীদের পারাপারের জন্য নগরের জাকির হোসেন সড়কে সিঁড়িযুক্ত পদচারী–সেতু (এস্কেলেটর ফুটওভার ব্রিজ) নির্মাণ করে চট্টগ্রাম সিটি কপোরেশন। চার কোটি টাকা ব্যয়ে নগরে প্রথম এই চলন্ত সিঁড়িযুক্ত পদচারী-সেতুটি উদ্বোধনের পর দুই মাসও চলেনি। ৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে সেতুটি।
২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে এই চলন্ত সিঁড়িযুক্ত পদচারী–সেতুটি উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তিন বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকায় সেতুটির বিভিন্ন অংশ বর্তমানে ভেঙে গেছে। সেতুতে ওঠার পথে ফটকগুলো প্রায়ই বন্ধ থাকে।
স্থানীয় লোকজন জানান, চালুর পর দুই মাস এটি পথচারীরা ব্যবহার করেন। এরপর করোনা মহামারির কারণে বিধিনিষেধ শুরু হওয়ার পর সেতুটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে আর চালু হয়নি চার কোটি টাকার সেতুটি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দুদিক থেকে চলন্ত সিঁড়ি ব্যবহার করে ফুট ওভারব্রিজে উঠতে পারলেও নামার জন্য ব্যবহার করতে হয় সাধারণ সিঁড়ি। সিঁড়ির নয়টি ধাপই নেই। বিভিন্ন যন্ত্রাংশ খুলে পড়েছে। এছাড়া মরিচাও ধরেছে বিভিন্ন জায়গায়। পুরো সিঁড়িতে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে আবর্জনা। নির্মাণের পর মাত্র দুই মাস চালু ছিল এই চলন্ত পদচারী–সেতুটি। সিঁড়ির দুই পাশের ফটকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে তালা। এ কারণে লোকজনের ইচ্ছে থাকলেও এটি ব্যবহার করতে পারছেন না। সবাই আগের মতোই ঝুঁকি নিয়ে সড়ক পার হচ্ছেন। তবে এই পরিত্যক্ত ফুটওভার ব্রিজটিকে কোনও প্রকার যাচাই-বাচাই না করে অহেতুক প্রকল্প নিয়ে সরকারি অর্থের নয়-ছয়ের এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ বলছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।
জানা গেছে, জাকির হোসেন সড়কে নগরের অভ্যন্তরীণ পরিবহনের পাশাপাশি ঢাকাগামী গাড়িও চলাচল করে। সাবেক সংসদ সদস্য আফছারুল আমীনের ইচ্ছায় এই চলন্ত পদচারী–সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল।
স্থানীয় ব্যবসায়ী সুমন আনোয়ার বলেন, উদ্যোগ ভালো ছিল। তবে সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ না করায় এটি এখন পরিত্যক্ত। জিইসি থেকে এ কে খান মোড় পর্যন্ত সড়কজুড়ে সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য এই একটিই পদচারী–সেতু ছিল। সেটিও বন্ধ। ঝুঁকি নিয়েই পার হতে হয় পথচারীদের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এস্কেলেটর ফুটওভার ব্রিজ বন্ধের বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগকে একটি প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। সেটি হাতে পেলে এটি চালু ও মেরামত কিংবা সংস্কারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। তবে এটিকে নতুন জায়গায় নিয়ে বসানোর চিন্তা রয়েছে।’
এদিকে, দীর্ঘদিন ধরে এই পদচারী–সেতু ব্যবহৃত না হওয়ার পেছনে পর্যাপ্ত পরিকল্পনার অভাব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। নির্মাণের আগেই এর রক্ষণাবেক্ষণ ও আনুষঙ্গিক খরচ ভেবে তারপরই তা নির্মাণ করা উচিত বলে মতামত তাদের। তবে এই সেতু ব্যবহৃত না হলেও চট্টগ্রাম নগরের আরও ৩৮টি পদচারী–সেতু করার উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। এতে ব্যয় হবে প্রায় ৫৮ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মুহাম্মদ রাশিদুল হাসান বলেন, নগরে পথচারীদের নিরাপদ চলাচল ও রাস্তা পারাপারের জন্য এ ধরনের যান্ত্রিক পদচারী–সেতু প্রয়োজন। তবে সেটি হতে হবে পরিকল্পনামাফিক।
অধ্যাপক রাশিদুল হাসান আরও বলেন, ‘কোনো পরিকল্পনা হাতে নেওয়ার আগে তার সংস্কার, রক্ষণাবেক্ষণ, বিদ্যুৎ বিল, সবকিছু মাথায় রেখে পরিকল্পনা করতে হবে। এর জন্য প্রতি অর্থবছরে বরাদ্দও রাখা উচিত। নগরে জনসাধারণের জন্য সব ধরনের প্রকল্পকে আমরা সাধুবাদ জানাই। পরিকল্পনা করে তারপর বাস্তবায়ন করলে তা দীর্ঘস্থায়ী হবে।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ