চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) চারুকলা ইন্সটিটিউটকে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করার আন্দোলন দীর্ঘদিনের। সে আন্দোলন অবশেষে আলোর মুখ দেখে যখন চবির সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বলা হয় ক্যাম্পাসেই ফিরবে চারুকলা। তবে সেই সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন না হলে কঠোর পদক্ষেপের হুঁশিয়ারিও দিয়ে রেখেছে শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকেলে নগরের বাদশা মিয়া সড়কের চারুকলা ইনস্টিটিউটে এক সংবাদ সম্মেলনে এ হুঁশিয়ারি দেন তারা। এর আগে, গত ১৫ ডিসেম্বর চারুকলাকে স্থানান্তরের জন্য একাডেমিক মিটিংয়ে বসার প্রতিশ্রুতি দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি।
এসময় শিক্ষার্থীরা বলেন, চারুকলাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ভূখণ্ডে ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় প্রশাসনকে ধন্যবাদ। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত কেবল প্রতিশ্রুতিতেই ঝুলে থাকলে চট্টগ্রামের শিল্পাঙ্গন কখনোই সেই স্বৈরাচারের দোসরদের মহল থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব না। তারা তাদের প্রতিশ্রুতির বরখেলাফ করেছেন। আমরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের আর কোনো মৌখিক আশ্বাসে শান্ত থাকছি না। আগামী শীতকালীন বন্ধের পর (অর্থাৎ ২০ ডিসেম্বর থেকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত) বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই কার্যদিবসের মধ্যে যদি চারুকলা প্রত্যাবর্তন বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি না হয় আমরা কঠোর পদক্ষেপে যেতে বাধ্য হবো।
জানা যায়, ১৯৭০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের যাত্রা শুরু হয়। বিভাগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ছিলেন শিল্পী রশিদ চৌধুরী। ২০১০ সালের ২ আগস্ট নগরের সরকারি চারুকলা কলেজের সঙ্গে এক হয়ে গঠিত হয় চারুকলা ইনস্টিটিউট। এই ইনস্টিটিউটের অবস্থান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে নগরের মেহেদীবাগের বাদশা মিয়া সড়কে। বর্তমানে ইনস্টিটিউটে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪০০।
শ্রেণিকক্ষের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালের নভেম্বরে ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ শুরু করেন ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে ইনস্টিটিউট নগর থেকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নিতে তারা এক দফা দাবি দেন। প্রশাসন দাবি না মানায় ওই বছরের ১৬ নভেম্বর ইনস্টিটিউটের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। পরে কর্তৃপক্ষকে সাত দিনের সময় বেঁধে দিয়ে শর্ত সাপেক্ষে পরের বছর ২৩ জানুয়ারি থেকে ক্লাসে ফিরেছিলেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু দাবি আদায় না হওয়ায় ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি তারা আবারও অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন। এ অবস্থায় ওই বছরের ১ ফেব্রুয়ারি রাতে চারুকলা ইনস্টিটিউটের হোস্টেলে তল্লাশি চালায় পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডি।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বিকেলে চারুকলায় সশরীরে শ্রেণি কার্যক্রম এক মাসের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি ভবন সংস্কারের কথা বলে শিক্ষার্থীদের চারুকলা ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে শিক্ষার্থীরা মূল ক্যাম্পাসেই বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করতে থাকেন।
তবে ৯ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। একপর্যায়ে সেশনজট কমাতে গত বছরের ৩ মে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি গত ১০ ডিসেম্বর থেকে তারা আবারও আন্দোলন শুরু করে। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের অনশন চলাকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) চারুকলা ইনস্টিটিউটকে ক্যাম্পাসে ফেরানোর আশ্বাস দেন চবি উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. শামীম উদ্দিন খান।
চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ