সিপ্লাস ডেস্ক: প্রায় সাড়ে ৬শ কোটি টাকা ব্যয় বাড়লো সিডিএ’র বাস্তবায়নাধীন আউটার রিং রোড প্রকল্পের। এ নিয়ে চতুর্থ দফায় বাড়ানো হয়েছে ব্যয়।
সেইসঙ্গে প্রকল্পের সময় বাড়ানো হয়েছে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত।
চট্টগ্রামে বাস্তবায়নাধীন দুই মেগা প্রকল্প কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হওয়ার পর যান চলাচলে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে দুটি ছোট ফ্লাইওভার এবং দুটি আন্ডারপাস নির্মাণ করা হবে।
যা এ প্রকল্পের আওতায় থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
২০১১ সালে প্রকল্পটি গ্রহণ করার পর শেষ হয়েছে প্রায় ১২ বছর। এরই মধ্যে সাত দফা বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পের মেয়াদ। তাছাড়া ব্যয় বাড়ানো হয়েছে তিনবার। নতুন করে চতুর্থ দফায় ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।
মঙ্গলবার (৬ জুন) একনেক সভায় এ প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে চতুর্থবারের মত এ প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে ৬৪৮ কোটি টাকা। ফলে প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৩ হাজার ৩২২ কোটি টাকা। শুরুর দিকে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮৫৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, টানেল পুরোদমে চালু হলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের একাধিক ইপিজেডের পণ্যবাহীসহ বিভিন্ন গাড়ি আউটার রিং রোড ধরে চলাচল করবে। অপরদিকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে শহরের গাড়ি মাত্র বিশ মিনিটে পতেঙ্গা পৌঁছাবে। পতেঙ্গা সাগরপাড়ে প্রতিদিন জড়ো হওয়া শত শত গাড়ির সঙ্গে বে- টার্মিনালের গাড়ি মিলে ভয়াবহ যানজট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যা টানেল, আউটার রিং রোড কিংবা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের যান চলাচল ব্যাহত করবে। ফলে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন এসব প্রকল্পের সুফল থেকে বঞ্চিত হবে সাধারণ মানুষ।
তাই টানেলের মুখে যেখানে আউটার রিং রোড, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও বহদ্দারহাট-পতেঙ্গা সড়ক মিলিত হয়েছে সেখানে হবে জংশন। ওয়ানওয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য থাকবে দুটি ফ্লাইওভার ও দুটি আন্ডারপাস (মাটির নিচ দিয়ে চলাচলের পথ)। জংশনের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫১০ কোটি টাকা। তাছাড়া পুরো রিং রোড এলাকা আলোকসজ্জার আওতায় না থাকলেও তা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সংশোধনীতে।
অপরদিকে চট্টগ্রাম ইপিজেডে পণ্য এবং কাঁচামাল নিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা কয়েক হাজার গাড়ি প্রতিদিন চলাচল করে শহরের মধ্য দিয়ে। এসব গাড়ি যাতে শহরে প্রবেশ না করে সেজন্য ইপিজেডকে আউটার রিং রোডের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে। দুটি দুই লেনের ভায়া ডাকট (ছোট ফ্লাইওভারের মতো) নির্মাণ করে ইপিজেডকে যুক্ত করা হবে। দুই লেনের একটি ভায়া ডাকট দিয়ে গাড়ি ইপিজেডে প্রবেশ করবে। অপরটি দিয়ে বের হয়ে রিং রোডে উঠবে। ইপিজেডের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করা এ ছোট ফ্লাইওভারের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১২১ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস গণমাধ্যমকে বলেন, টানেল ইন্টারসেকশন, জমি অধিগ্রহণ, আলোকায়ন ও ইপিজেড কানেকশনের জন্য নতুন করে প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। একনেক সভায় ৬৪৮ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধির অনুমোদন দেওয়া হয়। পুরো প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সুফল পাবে নগরবাসী। কমে আসবে যানজটও।
তিনি আরও বলেন, প্রতিবছর ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হারে গাড়ি বাড়ছে। এই গাড়ি বৃদ্ধির বিষয়টিকে মাথায় রেখে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে একটি জংশন স্থাপন করা হবে। ইউলুপ, ফ্লাইওভার ও আন্ডারপাস নির্মাণ করা হবে সেখানে। আবার ইপিজেডের সঙ্গে আউটার রিং রোডের সংযুক্তি হবে ফ্লাইওভারের মাধ্যমে।
প্রসঙ্গত, জাপান ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন (জেবিআইসি) চট্টগ্রাম শহরের অপ্রতুল অবকাঠামোগত অসুবিধাগুলো চিহ্নিত করতে ২০০৬ সালে একটি সমীক্ষা পরিচালনা করে। সমীক্ষায় শহর রক্ষাকারী বাঁধ ও একইসঙ্গে রাস্তা নির্মাণের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন মাস্টার প্ল্যানেও শহরের আউটার রিং রোডের কথা উল্লেখ করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে ২০১১ সালের ২৯ মার্চ একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। সেসময় প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৮৫৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা। বাস্তবায়নের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয় ২০১১ সালের জানুয়ারি হতে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর।