সিপ্লাস ডেস্ক: স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে কাজ করছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে চট্টগ্রামকে বদলে দিতে নানা উদ্যোগ নিয়েছেন জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।
জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব নিয়েই রক্তচক্ষুকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে উদ্ধার করেছেন বেদখল হওয়া সরকারি শতকোটি টাকার সম্পদ।
খেলার মাঠ থেকে বিতাড়িত করেছেন মেলা। গুঁড়িয়ে দিয়েছেন খেলার মাঠের আশপাশের অবৈধ সব স্থাপনা। এতে খুশি নগরের খেলাপ্রেমী সহ সব বয়সী মানুষ।
ইউনিয়ন পর্যায়ে তৈরি হচ্ছে প্রায় ২০০টি খেলার মাঠ। পর্যটক বান্ধব নগর গড়তে চালু করেছেন পর্যটক বাস সার্ভিস। সেই সঙ্গে হাফ ডে ও ফুল ডে পর্যটক মাইক্রো বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে । স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পরিবার পরিকল্পনা সংস্থার সমন্বয়ে প্রসূতি মা’দের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে প্রতিনিয়তই।
আধুনিক শিক্ষা ও পরিবহন:
চট্টগ্রামে শিশু-কিশোরদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানো নিয়ে অভিভাবকদের দুশ্চিন্তা দূর করতে এবং ভোগান্তি কমাতে চলতি মাস থেকে স্মার্ট স্কুলবাস চালুর উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন।
নগরে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ১০টি দ্বিতল বাস রয়েছে। এসব বাসকেই ‘স্মার্ট বাসে’ রূপান্তর করা হবে। পরে বাসের সংখ্যা বাড়ানো হবে। স্মার্ট বাসটিতে শিক্ষার্থীদের একটি স্মার্টকার্ড দেওয়া হবে। বাসে উঠা এবং নামার সময় তারা সেটি বাসে থাকা ডিজিটাল হাজিরা ডিভাইসে দেখাবে। এতে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তাদের অভিভাবকের কাছে খুদে বার্তা চলে যাবে ‘আপনার সন্তান বাসে উঠেছে/নেমেছে’।
শিক্ষার্থীদের যে কার্ড দেওয়া হবে, সেটিতে টাকা রিচার্জ করা যাবে। সেখান থেকেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভাড়া কেটে নেওয়া হবে। তবে ভাড়া এখনো নির্ধারণ করা না হলেও তা ১০ টাকার মধ্যেই থাকবে। পাশাপাশি বাসের আইপি ক্যামেরার অ্যাড্রেস অভিভাবকদের দেওয়া হবে। এতে অভিভাবকেরা নিজেরাই বাসে তাঁদের সন্তানদের দেখতে পারবেন।
অভিভাবকদের ভোগান্তি, যানজট নিরসন এবং দুর্ঘটনা রোধেও ভূমিকা রাখবে এই প্রকল্প। এসব বাসে জিপিএস ট্র্যাকার, জিআইএস প্রযুক্তি, ডিজিটাল হাজিরা ডিভাইস ও আইপি ক্যামেরা স্থাপন করে ১০টি বাসকেই স্মার্ট বাস হিসেবে রূপান্তর করবে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।
প্রতিটি বাসের সংস্কারকাজ, ডিজিটাল ডিভাইস স্থাপন ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। সম্পূর্ণ অর্থায়ন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা হবে। আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে পরীক্ষামূলকভাবে বাসগুলোর যাত্রা শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে জেলা প্রশাসনের। পর্যায়ক্রমে বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্যও এ ধরনের স্মার্ট বাস চালু করা হবে।
পর্যটক বাস সার্ভিস:
জেলা প্রশাসনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ১০ জুন থেকে নগরের নিউ মার্কেট থেকে ফৌজদারহাট ডিসি পার্ক হয়ে পর্যটক বাস চলাচল শুরু করেছে। পর্যটকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে ইতিমধ্যে বাসগুলোতে ওয়াইফাই সংযোগ দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য বাসে স্থাপন করা হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা।
পর্যটক বাসের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন করে অতিরিক্ত দুটি বাস যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। এরমধ্যে অতিরিক্ত পর্যটকের চাপ সামাল দিতে গেলো শুক্র ও শনিবার দুই পর্যটক বাসের সঙ্গে দুটি বিআরটিসির দ্বিতল স্কুল বাসের মাধ্যমেও সেবা দেওয়া হয়েছে।
শুক্র-শনিবার ছুটির দিন হওয়ায় অলস পড়ে ছিল স্কুল বাসগুলো। ছুটির দিন ছাড়া অন্যান্য সময়ে দুইশটির অধিক টিকিট বিক্রি হয়। ছুটির দিনগুলোতে এই সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় দ্বিগুণ।
মাত্র ৮৫০ টাকায় ফুল ডে ট্যুর:
পর্যটক বাসে অভূতপূর্ব সাড়া মেলায় ফুল-ডে ও হাফ-ডে ট্যুর সার্ভিস চালু করেছে জেলা প্রশাসন। এই সার্ভিসের মাধ্যমে পর্যটকরা ফ্যামিলি নিয়ে নির্দিষ্ট প্যাকেজে চট্টগ্রামের পর্যটনস্পটগুলো ভ্রমণ করতে পারছেন। ক্যাটারিং সার্ভিসের মাধ্যমে দুপুরের খাবার ও নাস্তার ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে।
এই ট্যুর সার্ভিসের মাধ্যেমে পর্যটকরা সীতাকুন্ড ইকোপার্ক (সুপ্তধারা ও সহস্রধারা ঝর্ণা), গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত , মহামায়া লেক এবং ডিসি পার্কে ভ্রমণ করছেন পর্যটকরা।
প্রাথমিকভাবে ৪টি মাইক্রোবাস নিয়ে এ সার্ভিস শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। এ সার্ভিসটি সপ্তাহে দুই দিন চলছে। মাইক্রোবাসগুলো নগরের স্টেশন রোডের মোটেল সৈকতের সামনে থেকে ছাড়বে।
ইউনিয়নে ১৯১টি খেলার মাঠ:
চট্টগ্রামের ১৯১ টি ইউনিয়নে মাঠ তৈরির কাজ চলমান আছে। ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা ও ভূমি কর্মকর্তরা প্রতিটি ইউনিয়নে খেলার মাঠের জন্য জমি ও জায়গা চিহ্নিত করেছেন। এখন ধাপে ধাপে সেখানে ইউনিয়ন স্পোর্টস ও কালচারাল সেন্টার নির্মাণ করা হবে। চট্টগ্রাম জেলায় আগামী একবছরের মধ্যে এই ১৯১টি মাঠে খেলাধুলা চালু হবে। এটি চট্টগ্রামবাসীর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ উদ্যোগ।
‘স্মার্ট আশ্রয়ণ’ ও স্মার্ট আইডিয়া অ্যাওয়ার্ড:
চট্টগ্রামেই প্রথম ‘স্মার্ট আশ্রয়ণ’ বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে পটিয়া উপজেলায় হাইদগাঁও আশ্রয়ণকে নির্বাচন করে সোলার প্যানেল, ট্যাপড ওয়াটার, পুকুর খনন, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, সবুজায়ন, বর্হ্য ব্যবস্থাপনা, শতভাগ স্যানিটেশনসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ‘স্মার্ট চট্টগ্রাম বেস্ট আইডিয়া অ্য়াওয়ার্ড’ প্রতিযোগিতার আয়োজন, সকল বিদ্যালয়ে রোবোটিক্স ক্লাব গঠন, স্মার্ট চট্টগ্রাম বেস্ট আইডিয়া অ্যাওয়ার্ড প্রতিযোগিতার আয়োজন, প্রাপ্ত আইডিয়া/প্রকল্পসমূহ নিয়ে স্মার্ট চট্টগ্রাম শোকেসিং ও উৎসব আয়োজন করা হচ্ছে।
স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়ন ও স্মার্ট চট্টগ্রাম বিনির্মাণের লক্ষ্যে স্মার্ট চট্টগ্রাম-সেরা আইডিয়া অ্যাওয়ার্ড এর আওতায় চট্টগ্রামের ১৫টি উপজেলা এবং মহানগর থেকে প্রাপ্ত ‘৫০টি আইডিয়া’ নিয়ে বুটক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়। স্মার্ট চট্টগ্রাম বিনির্মাণে বিভিন্ন উপজেলা ও মহানগর থেকে স্মার্ট আইডিয়া চেয়ে প্রতিযোগিতার আয়োজন করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। প্রতিযোগিতায় জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ের বেস্ট আইডিয়া প্রদানকারীদের জন্য পুরস্কারের ঘোষণাও দেয় জেলা প্রশাসন। সে আলোকে চট্টগ্রামের প্রান্তিক ও শহর তথা সব পর্যায়ের সরকারি/বেসরকারি দপ্তর, জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় জনগণ, স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীগণ, তরুণ আইটি উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে ১২২টি আইডিয়া পাওয়া যায়। আইডিয়াসমূহ যাচাই-বাছাই করে উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ ৪৫ এবং মহানগর পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ ৫টি সর্বমোট ৫০টি আইডিয়া নিয়ে এ বুটক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। বুটক্যাম্পের মাধ্যমে প্রাপ্ত আইডিয়াসমূহ নিয়ে দিনব্যাপী কর্মশালায় আইডিয়া প্রদানকারীদের গ্রুপভিত্তিক আলোচনা ও পরিমার্জন, পরিবর্ধন, সংযোজন, বিয়োজন করে আইডিয়াগুলোকে স্মার্ট আইডিয়ায় রুপান্তর করেন। এতে বুটক্যাম্পে সরকারি দপ্তরের সেবা ব্যবস্থাপনা ও সরবরাহ, ভূমি ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা, কৃষি, ইউটিলিটি, ব্যবসা বাণিজ্য, পর্যটন প্রভৃতি বিষয়ে বিদ্যমান সমস্যা চিহ্নিত করে সেগুলোর স্মার্ট সমাধানের জন্য প্রকল্প নির্ধারণ করা হয়।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্মার্ট বাংলাদেশ বির্নিমানে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কাজ করে চলেছে। সকলের সহযোগিতায় এসব কাজ বাস্তবায়ন করা সম্ভব। স্কুল শিক্ষার্থীদের স্মার্ট বাস সার্ভিসের উদ্যোগ নিয়েছি। উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীদের যাত্রা নিরাপদ করা। অভিভাবকদের ভোগান্তি, যানজট নিরসন এবং দুর্ঘটনা রোধেও ভূমিকা রাখবে এই প্রকল্প। স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পরিবার পরিকল্পনার সমন্বয়ে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। স্মার্ট চট্টগ্রাম গড়তে স্মার্ট আইডিয়া এওয়ার্ড ঘোষণা করেছি। তরণ প্রজন্মকে খেলাধুলার প্রতি আকৃষ্ট করতে প্রতিনি ইউনিয়নে খেলার মাঠ তৈরি করা হচ্ছে।