নিজস্ব প্রতিবেদক : পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী হরিজন সম্প্রদায়ে জন্ম হলেও ছোটবেলা থেকেই ব্যতিক্রম ছিল কৃষ্ণ চন্দ্র দাশ। অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর পরিশ্রমের মাধ্যমে তার স্বপ্ন পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি কোন কিছু। সম্প্রতি বার কাউন্সিলের পরীক্ষায় আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন তিনি। যা দেশের ইতিহাসে হরিজন সম্প্রদায়ের প্রথম আইনজীবী।
কৃষ্ণ দাশের আইনজীবী হওয়ার খবরে উচ্ছ্বসিত তার পরিবার প্রতিবেশি এবং বন্ধুমহল। উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে পুরা এলাকায়।
কৃষ্ণ দাশ জানান, তার বাবা চিরঞ্জীব দাশ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করতেন। ২০১৪ সালে তিনি স্ট্রোক করেন। মা ছায়া দাশও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী। বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ার পর মাকে একাই সংসার খরচ ও বাবার ওষুধের খরচ চালাতে হতো। কৃষ্ণ তখন তার পড়াশোনা ও নিজের খরচ চালাতে হিমশিম খেয়ে ওঠেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্য বন্ধুরা যখন দামি গাড়ি করে ক্যাম্পাসে আসতেন, তখন কৃষ্ণ কখনো হেঁটে আবার কখনো কাজ শেষ করে দৌড়ে শ্রেণিকক্ষে পৌঁছাতেন। কারণ, ক্লাসের আগে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তিনি খণ্ডকালীন পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। পরে বিকেলে আরও দুটি টিউশনি করতেন।
কৃষ্ণ দাশ বলেন, এতদূর আসার পেছনে প্রতিবেশী, সহপাঠী ও সহকর্মীদের ভালোবাসা তার পাথেয় ছিল। হরিজন সম্প্রদায়ের হলেও কেউ তাকে হেয় করেননি। মাঝেমধ্যে কিছু বিব্রতকর অবস্থায় পড়লেও ভালোবাসার পাল্লাই বেশি ছিল বলে মনে করেন এ আইনজীবী।
নগরীর কোতোয়ালি থানার বান্ডেল রোডের সেবক কলোনিতে অন্য আর দশজনের মতো বড় হলেও পড়ালেখায় মনোযোগী ছিলেন কৃষ্ণ দাশ। ২০০৯ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি, ২০১২ সালে ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন কৃষ্ণ। ২০১৮ সালে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি থেকে আইন বিভাগে গ্রাজুয়েশন শেষ করেন কৃষ্ণ। এরপর চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরীর সঙ্গে শিক্ষানবিশ আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন। সাইমুল চৌধুরীও কৃষ্ণকে আগে থেকেই পড়াশোনাসহ নানাভাবে সহযোগিতা করতেন।
কৃষ্ণ দাশ বর্তমানে চট্টগ্রাম আদালতে শিক্ষানবিশ আইনজীবী হিসেবে কর্মরত। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত হরিজন সম্প্রদায়ের সন্তান আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ায় এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ ) বিকালে চট্টগ্রাম আদালতে জেলা পিপির কার্যালয়ে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এসময় নবীন অ্যাডভোকেট কৃষ্ণ দাসকে গাউন পড়িয়ে দেন অতিথিরা।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী চাটগাঁ নিউজকে বলেন, হরিজন সম্প্রদায়ের বিভিন্ন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কৃষ্ণ দাশই প্রথম হরিজন, যিনি দেশের আইনজীবী হয়েছেন। বিষয়টি জানানোর পর তাকে উৎসাহিত করতে জেলা ও দায়রা জজ নিজেই গাউন পরিয়ে দিতে রাজি হয়েছেন। সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী থেকে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছায় তাকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। যাতে পিছিয়ে পড়া অন্যরাও উৎসাহিত হয়।
চট্টগ্রামের জেলা পিপি অ্যাডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরীর সভাপতিত্বে এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ ড. আজিজ আহমেদ ভূঞা। এসময় চট্টগ্রাম বার কাউন্সিলের নেতৃবৃন্দরাও উপস্থিত ছিলেন।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ