চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে সিজারের পর ১১ প্রসূতি মারা যাওয়ার ঘটনায় ব্যবহৃত ওষুধের নমুনায় কোন ত্রুটি পাওয়া যায়নি। ঢাকায় ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় পরীক্ষাগারে সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষার পর এমন তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। যদিও ২৬ দিন আগে চট্টগ্রাম মা-শিশু জেনারেল হাসপাতালের নিজস্ব ল্যাবে স্যালাইন পরীক্ষা করে সন্দেহজনক ‘জীবাণু’ পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে তখন তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল।
তবে পরে ওই চালানের ওষুধগুলো বাদ দিয়ে নতুন করে সংগৃহীত ওষুধ সিজারে ব্যবহার করা হয়। এরপর থেকে আর কোনো প্রসূতি মারা যাননি।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে চট্টগ্রাম মা-শিশু জেনারেল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন জেনারেল হাসপাতালসহ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে প্রায় কাছাকাছি সময়ে সিজারের পর প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। এরপরই সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের ফার্মেসি থেকে স্যালাইন ও ব্যবহৃত ওষুধের নমুনা সংগ্রহ করে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। এছাড়াও সিজারের পর প্রসূতি মায়েদের মৃত্যুর কারণ খুঁজে বের করতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের অধ্যক্ষ সাহেনা আক্তারকে প্রধান করে ১০ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এরপর একাধিক সভায় মিলিত হন কমিটির সদস্যরা। রোববার (২১ এপ্রিল) এ বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত কমিটি। যদিও এতে সিজারের পর অস্বাভাবিকভাবে মায়েদের মৃত্যুর সুস্পষ্ট কারণ উল্লেখ করা হয়নি। তবে, প্রতিবেদনে সিজারের ক্ষেত্রে আগেভাগে বিভিন্ন পরীক্ষা করানোর জন্য সুপারিশ করা হয়।
জানা গেছে, গত ২৫ মার্চ ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর এসব নমুনা সংগ্রহ করে। এরপর তা ঢাকায় প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। গত ১৭ এপ্রিল পাঠানো ওষুধ ও স্যালাইনের নমুনার প্রতিবেদন পাঠানো হয় চট্টগ্রাম কার্যালয়ে। তাতে কোন ওষুধে ত্রুটি পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়।
চমেক অধ্যক্ষ সাহেনা আক্তার বলেন, যে ১১ জন মারা গেছেন, তাদেরকে তো আমরা সরাসরি পাইনি। শুধুমাত্র কাগজপত্রগুলো পেয়েছি। এসব পর্যালোচনায় দেখা গেছে, মারা যাওয়া ১১ জনের মধ্যে ছয়জনেরই আগে থেকে শরীরে কিছু না কিছু জটিলতা ছিল। বাকি একজন অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে মারা গেছেন। আর চারজনের বিষয়টি একটু জটিল। এই চারজনের আগে থেকে কোনো শারীরিক জটিলতা ছিল না। তারা সিজারের পর হার্ট অ্যাটাক করে মারা যান। যদিও তাদের আগে থেকে হার্টের কোনো সমস্যা ছিল না। তবে, সিজারের আগে তাদের হার্ট টেস্ট করানো হয়নি।
তিনি বলেন, সাধারণ রোগীদের অপারেশনের আগে শরীরের বিভিন্ন পরীক্ষা করে কোনো জটিলতা আছে কি না দেখা হয়। কিন্তু সিজারের সময় অনেকগুলো টেস্ট করানো হয়নি। রোববার জমা দেওয়া প্রতিবেদনের সুপারিশে সিজারের আগে মায়েদের ভালো করে টেস্ট করানোর বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।
ওষুধের প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে অধ্যক্ষ সাহেনা আক্তার বলেন, সিজারের সময় ব্যবহৃত ওষুধের নমুনা সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের ল্যাবে টেস্ট করা হয়। সেখানে তারা না-কি একটু ত্রুটি পেয়েছিল। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চালানে থাকা ওষুধ বাদ দিয়ে নতুন করে আবার সংগ্রহ করে। নতুন ওষুধ দিয়ে সিজার করানোর পর হাসপাতালগুলোতে আর কোনো প্রসূতি মারা যাননি।
চট্টগ্রাম ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এস এম সুলতানুল আরেফিন বলেন, সিজারের ক্ষেত্রে প্রসূতির শরীরে যেসব ওষুধ ব্যবহার করা হয়েছিল, তার নমুনা সংগ্রহ করে গত ২৫ মার্চ পরীক্ষার জন্য ঢাকায় ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ল্যাবে পাঠানো হয়। সম্প্রতি প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। এতে ওষুধগুলোর কোনো ত্রুটি পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত চট্টগ্রামের ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল এবং সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত মেমন হাসপাতালে মোট ১১ জন প্রসূতি সিজারের পর মারা গেছেন। এর মধ্যে মা ও শিশু হাসপাতালে পাঁচজন, ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতালে চারজন এবং মেমন হাসাপাতালে দুইজনের সিজার হয়েছিল। মেমন হাসপাতালের দুজনকে সিজারের পর অন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে তাদের মৃত্যু হয়।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ