চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : চট্টগ্রামে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। নগরের বহদ্দারহাট এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে কলেজছাত্র তানভীর ছিদ্দিকী (১৯) হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে ওই মামলায়।
শুক্রবার (১৬ আগস্ট) রাতে নগরের চান্দগাঁও থানায় বাদী হয়ে মামলাটি করেন নিহত ছাত্রের চাচা মোহাম্মদ পারভেজ।
শনিবার (১৭ আগস্ট) বিষয়টি নিশ্চিত করে চাঁন্দগাও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবির বলেন, তানভীর ছিদ্দিক হত্যার ঘটনায় ৩৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ৪০ থেকে ৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন- চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা বাবর আলী (৫৫), চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান চৌধুরী (৫০), চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি (৩৫), চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো, এসরারুল হক (৪৫), জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন (৫০) ও চকবাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নুর মোস্তফা টিনু (৪২)।
এছাড়াও আসামি করা হয়েছে, তারেক বিন ওসমান শরীফ (৩৫), নোমান শরীফ (৩৭), মহিউদ্দীন ফরহাদ (৪৫),মো.জালাল প্রকাশ ড্রিল জালাল (৪২), মো. ফরিদ (৪২), চট্টগ্রাম সিটি কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি মো.তাহসীন (২৭), এইচ এম মিঠু (৪০), নুরুল আলম প্রকাশ কালা বদা (৪৮), আরিফ ইফতেকার রশিদ (৩২), ওসমান গণি (৫৫), ইলিয়াছ বাবুল (৪৫), মাইনুল ইসলাম শরীফ, মনির উদ্দিন (২৩), মো.ফিরোজ (৩৮), জাফর আলম (৫৫), মো.দেলোয়ার (৪০), মো.জিয়াউদ্দীন আরমান (২৫), মনছুর আবেদীন (২৫), আবুল হাসনাত (৩৮), মো.জাফর (৩৮), মোহাম্মদ সুমন উদ্দীন (২৮), হোসাইন অভি (২৪), মো. শোয়াইব (৩৮), মিজান সিকদার (৩৫), মো.কাইসার (৪০) ও মাহবুব আলম (৪২)।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১৮ আগস্ট আশেকান আউলিয়া ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী তানভীর ছিদ্দিকী দুপুরে অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সমগ্র বাংলাদেশ ‘শাট-ডাউন’ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে পাঁচলাইশ থানার মুরাদপুর এলাকা থেকে মিছিল যোগে নগরের চান্দগাঁও থানার বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারের সামনে রাস্তার ওপরে এসে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করেন। ওই দিন বিকেলে ৪টা ২০ মিনিটের দিকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সাবেক প্রধানমনমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক শিক্ষা মন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেলের নির্দেশে ও হুকুমে মামলার ৩ থেকে ৩৪ নম্বর আসামিগণসহ অজ্ঞাতনামা ৪০ থেকে ৫০ জন আসামি তাদের হাতে থাকা ধারালো চাপাতি, কিরিচসহ মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে চান্দগাঁও থানার বহদ্দারহাট ওয়াপদা অফিসের দিক থেকে আসে। এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী তানভীর ছিদ্দিকীসহ অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীদের দিকে ইট-পাথর নিক্ষেপসহ এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষণ করে। তানভীর ছিদ্দিকী গুলিবিদ্ধ হয় এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীসহ অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়। গুরুতর জখম অবস্থায় তানভীর ছিদ্দিকীকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করে।
একই ঘটনায় একই সময়ে একই স্থানে গুলিবিদ্ধ হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হৃদয় চন্দ্র তরুয়া (২৩)। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও বহদ্দারহাট কাঁচা বাজার মুদির দোকানের কর্মচারী পথচারী সাইমন প্রকাশ মাহিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
মামলার বাদী নিহত তানভীর ছিদ্দিকীর চাচা মো.পারভেজ বলেন, আমরা থানায় মামলা করেছি। আমি আর কিছু মন্তব্য করতে চাই না।
মামলায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের চাঁন্দগাও ওয়ার্ড কাউন্সিলর এসরারুল হক এসরার, জামালখান ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাস সুমন, চকবাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর অস্ত্রসহ হাটহাজারী থেকে গ্রেফতার হয়ে ছাত্রলীগের পদ হারানো নুরুল আজিম রনিকেও আসামি করা হয়েছে।
তানভীর হত্যা মামলাসহ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ছয়টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি খুনের মামলা ও একটি অপহরণ মামলা। তবে তানভীর হত্যা মামলাটি চট্টগ্রামে তার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা।
চাটগাঁ নিউজ/এআইকে